ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

ভুল রেফারিংয়ের শিকার হয়ে ম্যাচ ড্র করলো শেখ রাসেল

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
ভুল রেফারিংয়ের শিকার হয়ে ম্যাচ ড্র করলো শেখ রাসেল

রাজশাহী: বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে পুলিশ এফসির বিপক্ষে প্রথমার্ধে ছোট ছোট পাস দিয়ে দুর্দান্তভাবে খেলায় একক আধিপত্য বজায় রেখেছিল শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র। প্রথমার্ধে গোলের দেখা না পেলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বাজিমাত করেন মোহাম্মদ জুয়েল।

৪৯ মিনিটের মাথায় গোল করে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধে উভয় দল মারমুখী আক্রমণ করে খেলতে শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত শেখ রাসেলের খেলোয়াড় মোহাম্মদ জুয়েল সুযোগ পেয়েই ৪৯ মিনিটের মাথায় গোল করে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। বলা যায় পাঁচ ম্যাচ হারের পর শেখ রাসেল এই ম্যাচটি খেলেছে জেতার মতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য রেফারি বিটুরাজের 'নৈপুণ্যে' ম্যাচটি আর জেতা হয়নি। তার দেওয়া বিতর্কিত পেনাল্টিতে পিছিয়ে পড়া পুলিশ ক্লাব ম্যাচে ফেরে এবং শেষপর্যন্ত ১-১ গোলের সমতায় ড্র হয় ম্যাচ।

রাজশাহী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি স্টেডিয়ামে আজ জ্বলে উঠেছিল শেখ রাসেল। এই জাগরণীতে তারা গোল ফিরে পেয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। ফলে তারা ম্যাচের প্রায় পুরোটা সময়ই আধিপত্য বিস্তার করেছিল। আর বার বার গোলের সুযোগও তৈরি করেছে। কিন্তু শেষমেস সেটার কোনো প্রকাশ থাকছে না ম্যাচের স্কোরলাইনে!

শুরুর ৩০ মিনিটের ‘পুলিশি অভিযানে’রাসেল গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়তে পারতো। ২ মিনিটে তাদের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ডেনিলসন রদ্রিগেজ বুলেট গতির শট করে পরীক্ষা নেন রাসেল গোলরক্ষক আশরাফুল রানার। এরপর মোনায়েম রাজুর কর্ণার কিকে আরেক দফা গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা।

জটলা থেকে যখন-তখন গোল হতে পারে। ৩০ মিনিটে ডেনিলসনের শট পোস্টে না লাগলে তখনই গোল খেয়ে বসতো শেখ রাসেল। ওই ঝড়ে টিকে থাকার পর ৩৭ মিনিটে রাসেল প্রথম সাহসী হয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ফণা তুলে। রহমতের কর্ণার কিকটি ঠিকঠাক ফিস্ট করতে পারেননি পুলিশ গোলরক্ষক নেহাল। এরপর ক্রসবারে গিয়ে লাগলে রক্ষা পায় পুলিশ দল। ৪৪ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো বল ধরে জুয়েল ঢোকেন পুলিশের রক্ষণে।

তিনজনের ভেতর দিয়ে ঢুকে ছোটখাটো এই ফরোয়ার্ডের বাঁ পায়ের শট বাইরে যায় পোস্ট ঘেঁষে। বিরতি থেকে ফিরে প্রতাপ বাড়ে রাসেলের খেলায়। জুয়েলের বানিয়ে দেওয়া বলে ব্রাজিলিয়ান থিয়াগোর বুলেট গতির শট সেভ করেন পুলিশ গোলরক্ষক থিয়াগো। মিনিট তিনেক বাদে মেলে সেই প্রতাপের ফসল।  

হেমন্তের কর্ণার কিকটি প্রথম নেহাল ঠেকিয়েছেন কিন্তু ফিরতি বলে জুয়েলের শট গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন ডিফেন্ডার। সেই ফিরতি বলে জুয়েলের হেড জালে জড়িয়ে গেলে এগিয়ে যায় শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র। এরপর ৬৩ মিনিটে লিড আরো বড় হতে পারতো। হেমন্তের থ্রু বলে জুয়েলের শট দুর্দান্ত সেভ করেন পুলিশ গোলরক্ষক।

এরপরই ঘটে ম্যাচের বড় আঘটন। ৬৭ মিনিটে বাঁদিক থেকে পুলিশের ব্রাজিলিয়ান ডেনিলসন বল তুলে দেন প্রতিপক্ষের বক্সে। সেটা ধরতে গিয়ে এহসানুর রহমান পড়ে গেলে রেফারি রহমতের বিপক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজান। অথচ শেখ রাসেলের এই ডিফেন্ডার তাকে ফাউল করার কোনো দৃশ্যই দেখা যায়নি।

এ সময় ডি-বক্সের মধ্যে পুলিশ ক্লাবের ১৭ নম্বর জার্সি ইসা ফয়সাল পড়ে যান। আর তাকে অবৈধভাবেই বাধা দিয়ে ফেলে দেওয়ার অভিযোগে শেখ রাসেলের ৩নং জার্সির রহমত মিয়ার বিরুদ্ধে ফাউল ধরে পেনাল্টি দেন ম্যাচ রেফারি বিটুরাজ। আর এই সুযোগ পেয়েই পুলিশ ক্লাবের জার্মানির খেলোয়াড় আদিল কুচকুচ গোল পরিশোধ করে খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনেন।

যদিও ডি বক্সের মধ্যে অবৈধভাবে কোন বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি বলে তাৎক্ষণিকভাবে আপিল করেন খেলোয়াড়রা। শরীরের সাথে কোনো সংস্পর্শ না লেগেই প্রতিপক্ষের খেলোয়ার পড়ে গেছেন বলে রেফারিকে জানানো হয়। কিন্তু তারপরও তিনি পেনাল্টি দেন। ফলে রাজশাহী ভেন্যুতে নিশ্চিত জয়ের কাছাকাছি গিয়েও ভুল রেফারিংয়ের শিকার হয়ে শেষ পর্যন্ত ড্র করেই ফিরতে হয় শেখ রাসেলের দাপুটে খেলোয়াড়দের।

জার্মানির আদিল কুচকুচ সেই পেনাল্টি গোলে ম্যাচে ফেরান পুলিশ ক্লাবকে সমতা সূচক গোলের পরই পুলিশ আর খেলার দিকে মনযোগ না দিয়ে নানা ছুঁতোয় সময় নষ্ট করতে থাকে।  

এদিকে রাসেল বদলি হিসেবে পর্তুগালের ইসমাইল রুটি ডি সুজা ও ব্রাজিলের আইলটন মাচাদোকে নামিয়ে আক্রমণের মহড়া দেয় পুলিশের সীমান্তে। আক্রমণের এমন তোপ, গোল হতে পারে যে কোনো সময়। কিন্তু শেষ ফিনিশিংটা করতে পারেনি। কখনো থিয়াগো পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ, কখনো-বা আখমতোভের শট বাইরে যায় পোস্ট ঘেঁষে। আবার পোস্টে ঢুকতে যাওয়া বলটি অবিশ্বাস্যভাবে ফিরিয়ে দেন এক ডিফেন্ডার। আসলে ভাগ্যগুনে বেঁচে যায় পুলিশ ক্লাব।  

পেনাল্টির এই গোলের কয়েক মিনিট পরেই খেলার শেষের বাঁশি বাজিয়ে রেফারি মাঠ ছাড়েন। আজকের এই ড্র ম্যাচের সুবাদে তারা ৯ ম্যাচে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে আছে চতুর্থস্থানে। ৬ পয়েন্ট নিয়ে রাসেল একাদশ স্থানে থাকলো। আগামী ৩ এপ্রিল রাজশাহীর এই মঠে স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ ও লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব লিমিটেড পরবর্তী খেলায় অংশ নেবে।

এদিকে, খেলা শেষে এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের প্রধান কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, খেলার দ্বিতীয়ার্ধে ওই পেনাল্টির সাথে তারা একমত নন। শেষ সময়ে অসঙ্গতিপূর্ণভাবে তাদের বিরুদ্ধে পেনাল্টি দিয়েছেন রেফারি। তাই তারা ক্লাবের পক্ষ থেকে বাফুফে'র কাছে আপত্তি জানাবেন। এমন ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তাদের মত অনেক বড় বড় টিম এর আগেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই রেফারিদের মনিটরিং করার জন্য তারা বাফুফের কাছে আলাদা আবেদন দাখিল করবেন বলেও জানান- হেড কোচ জুলফিকার মাহমুদ মিন্টু।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২২
এসএস/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।