ঢাকা, শুক্রবার, ২৫ আশ্বিন ১৪৩২, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১৭ রবিউস সানি ১৪৪৭

স্বাস্থ্য

স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা ও দ্রুত চিকিৎসা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:১৫, অক্টোবর ১০, ২০২৫
স্তন ক্যানসার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা ও দ্রুত চিকিৎসা

ঢাকা: দেশে প্রতি বছর ১৩ হাজার নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার নারী মৃত্যুবরণ করেন।

এর কারণ অসচেতনতা, লুকিয়ে রাখা ও দ্রুত চিকিৎসা না নেওয়া। তাই দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পরিবারসহ সব জায়গায় এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে সেটি লুকিয়ে না রেখে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে। তাহলে এ মরণব্যাধি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

শুক্রবার (১০ অক্টোবর) স্তন ক্যানসার সচেতনতা দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরাম আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন।

গোলটেবিল আলোচনায় বাংলাদেশ স্তন ক্যানসার সচেতনতা ফোরামের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক হাবিবুল্লাহ তালুকদার রাসকিন জানান, আগামী ৩০–৩১ অক্টোবর ‘গোলাপি সজ্জিত বাসে’ রাজশাহী ও খুলনা পথে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন হবে। আর ৮ নভেম্বর ঢাকায় ‘চতুর্থ সমাজভিত্তিক ক্যানসার সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হবে, অনলাইনেও নিবন্ধন করা যাবে। আগ্রহীরা ৫০০, ৭০০ ও এক হাজার টাকার রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে অনলাইন বা সরাসরি নিবন্ধন করতে পারবেন। গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে স্তন ক্যানসার অপারেশনের খরচ সর্বোচ্চ ৬৫ হাজার ও অতিদরিদ্রদের জন্য মাত্র পাঁচ হাজার টাকা বলেও জানান তিনি।

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, রোগ প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও উন্নয়ন একসূত্রে গাঁথা। এগুলোর শুধু একটি চর্চা করলে সামগ্রিক উদ্দেশ্য সাধিত হয় না। তিনটিকেই একসাথে মানতে হবে।

তিনি আরও বলেন, স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ করতে হলে এ বিষয়ে মানুষকে শেখাতে হবে। এক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা অনেক গুরত্বপূর্ণ। এছাড়া কমিউনিটি ট্রেনিংয়ে অংশগ্রহণকারীদের এ বিষয়টি জানালে তাদের মাধ্যমে অনেকে সচেতন হতে পারবে।

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, আমরা কেউই অসুস্থ হতে চাই না। ক্যান্সারের তো প্রশ্নই আসে না। আমাদের পরিবারের কেউই চায় না, আমরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হই। সুতরাং, আমাদের যাতে ক্যানসার না হয়, সেভাবে রোগপ্রতিরোধ গড়ে তোলা উচিত। তারপরও যদি ক্যান্সার হয়ে যায়, তাহলে দ্রুত সেটির চিকিৎসা করা উচিত। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থায় যদি ক্যান্সার নির্ণয় করা যায়, তাহলে অনেক বছর বাঁচা যায়। দেরি হলে সেটার চিকিৎসা বাংলাদেশে অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের ডাটাবেইজ তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি আরও বলেন, দেশে ক্যানসার  রেজিস্ট্রি নেই। এটা অত্যান্ত দুঃখজনক। আমরা বড় বড় মেশিন আনছি, আনতে পারি, সব কিছু করতে পারি। কিন্তু একটি রেজিস্ট্রি করতে তেমন খরচ নেই। সেটা করতে পারি না। এটি না থাকলে আমরা এগুতে পারবো না। এটাকে প্রায়োরিটি দিতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে জোরালো আন্দোলন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা যদি ক্যান্সারের আগাম স্ক্রিনিং করতে পারি তাহলে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি মেয়েদের স্বাস্থ্য সচেতন করতে পারলে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই কমবে।

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের সদস্য ও ক্যানসার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন বলেন, স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তদের প্রকৃত হিসাব না থাকলেও আনুমানিক প্রতি বছর ১৩ হাজার নারী এতে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে ছয় হাজার নারী মারা যান। পৃথিবীর কোথাও এ মৃত্যুর হার নেই। এর কারণ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর শেষ পর্যায়ে এসে রোগীরা ডাক্তারের কাছে আসে। কিন্ত ৮-১০ শতাংশ আক্রান্ত থাকার সময় সেটি নির্ণয় করা গেলে রোগীর ভালো হয়ে যায়। প্রতিটি নারী যদি তার নিজের স্তন হাত দিয়ে ধরে পরীক্ষা করে তাহলে ক্যান্সার আছে কিনা সেটি বোঝা সম্ভব। কিন্তু বেশিরভাগ নারীই এটি করে না।

পাঠ্য বইয়ে স্তন ক্যান্সারের বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পাঠ্য বইয়ে স্তন ক্যানসার, অন্যান্য ক্যানসার ও রোগ বিষয়ে খুবই কম তথ্য রয়েছে। এটি থাকলে অনেক সচেতনতা তৈরি হবে।

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ও নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. হালিদা হানুম আক্তার বলেন, আমাদের দেশের নারীদের স্তন ক্যানসার লুকিয়ে রাখার প্রবণতা রয়েছে। আমরা এটিকে নারীদের দোষ মনে করি। কিন্তু এটিকে লুকিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। প্রতিটি জায়গায় সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এটি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হলে স্কুল, কলেজ, পরিবারসহ সব জায়গায় এটি সম্পর্কে তথ্য পৌঁছে দিতে হবে।

স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের সদস্য মাশহুদা খাতুন শেফালী বলেন, মানুষকে কোনো বিষয়ে জানানো ও সচেতন করা সহজ নয়। এটি অনেক ব্যয়বহুল। স্তন ক্যানসারের বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হলে সরকারকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। যারা এটি নিয়ে কাজ করে, তাদের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে।

স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সারিয়া তাসনিম বলেন, স্তন ক্যান্সারের বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে তরুণদের সংযুক্ত করলে সচেতনতা বাড়বে।

গোলটেবিল আলোচনায় স্তন ক্যান্সারের স্ক্রিনিংয়ের খরচ কমানোর প্রতি জোর দেন অধ্যাপক মালিহা রশিদ।

আলোচনা সভার আগে স্তন ক্যানসার সচেতনায় প্রতীকী গোলাপি শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

এসসি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।