‘টাইম শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন ২০২৫’-এর সম্মান পেল আইসিডিডিআরবি ও ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির উদ্ভাবিত অন্ত্র সুস্থকারী খাবার।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) আইসিডিডিআরবি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে বিষয়টি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বিশ্বখ্যাত টাইম সাময়িকী তাদের অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ‘টাইম শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন ২০২৫’ তালিকায় ‘সামাজিক প্রভাব’ বিভাগে আইসিডিডিআরবি এবং সেন্ট লুইসের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির দীর্ঘদিনের যৌথ গবেষণার ফসল অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের অন্ত্রের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারকারী বিশেষ সম্পূরক খাদ্য এমডিসিএফ-২-কে স্থান দিয়েছে।
এমডিসিএফ হলো মাইক্রোবায়োটা ডিরেক্টেড কমপ্লিমেন্টারি ফুড বা অন্ত্রের জীবাণুদেরকে উদ্দীপ্ত করার জন্য একটি বিশেষ সম্পূরক খাবার।
বিগত বছরগুলোতে কিছুটা উন্নতি হলেও, বিশ্বব্যাপী শিশুদের জীবন রক্ষা ও বিকাশের পথে অপুষ্টি এখনও একটি বিরাট বাধা, যা পাঁচ বছরের কম বয়সি মোট শিশুমৃত্যুর প্রায় অর্ধেকের জন্য দায়ী। বর্তমানে যুদ্ধ, বাস্তুচ্যুতি এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এ সমস্যা আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে, ফলে কোটি কোটি শিশু খর্বতা (বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা) এবং কৃশতার (বয়স অনুযায়ী ওজন কম/রোগা পাতলা) ঝুঁকিতে রয়েছে।
ই উদ্ভাবনী খাবার এমডিসিএফ-২ তৈরি হয়েছে ছোলা, সয়াবিন, চিনাবাদাম ও কাঁচা কলার গুঁড়োর একটি বিশেষ মিশ্রণে। এ উপাদানগুলো এমনভাবে বেছে নেওয়া হয়েছে যেন তা অন্ত্রের ভেতরে থাকা নির্দিষ্ট উপকারী জীবাণুগুলোকে পুষ্টি দিতে পারে। এ জীবাণুগুলো অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের সুস্থ বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং স্নায়বিক বিকাশে সহায়তা করে।
আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক ড. তাহমিদ আহমেদ এবং ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির ড. জেফরি গর্ডনের মধ্যে এক অনানুষ্ঠানিক আলোচনার সূত্র ধরেই এ উদ্ভাবনের সূচনা।
শিশুদের অপুষ্টি নিয়ে গবেষণায় কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে ড. তাহমিদ আহমেদের, অন্যদিকে ড. জেফরি গর্ডন হলেন মানুষের অন্ত্রের জীবাণু জগৎ (মাইক্রোবায়োম) নিয়ে গবেষণার পথিকৃৎ, যিনি মূলত স্থূলতা নিয়ে কাজ করতেন।
ড. গর্ডন বলেন, আমাদের কয়েক দশকের গবেষণা থেকে জানা গেছে যে শিশুদের বৃদ্ধি এবং পুষ্টি গ্রহণে অন্ত্রের জীবাণুই মূল ভূমিকা পালন করে। আমরা যে উপকারী জীবাণুগুলো চিহ্নিত করেছি, তারা এমন গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদানগুলোকে প্রক্রিয়াজাত করতে সাহায্য করে, যা আমাদের শরীর নিজে থেকে করতে পারে না। এ জ্ঞানই সুস্থ বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য খাবার তৈরির ভিত্তি দিয়েছে।
বাংলাদেশি শিশুদের নিয়ে পরিচালিত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলোতে দেখা গেছে যে, এমডিসিএফ-২ এ শিশুদের অন্ত্রের মাইক্রোবায়োম পুনর্গঠনে সক্ষম এবং এর প্রভাব অন্ত্রের প্রাচীরের অনেক বাইরে পর্যন্ত বিস্তৃত। এতে প্রতীয়মান হয় যে, অন্ত্রে বিদ্যমান ট্রিলিয়ন জীবাণু শিশুর জন্ম-পরবর্তী বিকাশের বহু দিককে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
ড. তাহমিদ আহমেদ বলেন, এ স্বীকৃতি আমাদের জন্য গভীর অনুপ্রেরণার উৎস। এটি প্রমাণ করে যে, বিজ্ঞান ও মানবিক সহমর্মিতা একত্র হলে বিশ্বের সবচেয়ে জটিল স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান সম্ভব। এমডিসিএফ-২ আমাদের নতুন আশার আলো দেখাচ্ছে—স্থানীয়ভাবে তৈরি, সাশ্রয়ী সমাধান কোটি কোটি অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুকে কেবল বাঁচিয়ে রাখতেই নয়, বরং পরিপূর্ণ বিকাশের সুযোগ দিতেও সাহায্য করতে পারে।
বর্তমানে ভারত, পাকিস্তান, মালি, এবং তানজানিয়ায় এর বড় আকারের গবেষণা চলছে। এ উদ্ভাবনটি পুষ্টি কর্মসূচিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে বিশ্বজুড়ে অপুষ্টি রোধ ও চিকিৎসার পদ্ধতিকে বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
আরকেআর/জেএইচ