১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর। বলিভিয়ার সেনাবাহিনী চে গুয়েভারাকে (গ্যেভারা) গুলি করে হত্যা করে।
চে’র মৃতদেহটি অক্টোবর ৯ তারিখ ৫টায় বলিভিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ছোট্ট পার্বত্য শহরে আকাশ পথে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্ট্রেচারের ওপর কাপড় দিয়ে মুড়ে নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকে যুদ্ধের পোশাক পরে থাকা একটি লোকের কাঁধে বেশিরভাগ দায়িত্ব বর্তায়। এখানে উপস্থিত সব সাংবাদিকই জানেন যে, ওই লোকটি সন্দেহাতীতভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি।
চে একাই যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। তার প্রধান শত্রুর মুখোমুখি বসেন মৃত্যু হাতে নিয়ে। যেখানে লোকজনের ভিড় জমেছে সেই স্থানটা এড়িয়ে আরেক জায়গায় নেওয়া হলো। এরপর মৃতদেহটি দ্রুত একটি ভ্যানে তুলে রওনা হলো আরেক গন্তব্যে। আমরা জোর করে জিপ ভাড়া করে সেটা অনুসরণ করলাম। একটি হাসপাতালের রং করা ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে নেওয়া হলো। এই ঘরটাই সম্ভবত শবাগার।
বেশ জোরেই ভ্যানের দরজা খুলে গেল ও আমেরিকার ওই চরটি লাফিয়ে নেমে তীব্র চিৎকার নিক্ষেপ করল, ‘এখান থেকে সরো, জাহান্নামে যাও!’ সাংবাদিকদের একজন জিজ্ঞাসা করলেন কোত্থেকে নিয়ে হলো চে’র মৃতদেহ আর এখন কোথায় নেওয়া হচ্ছে। নিশ্চিতভাবেই একটি কর্কশ অস্পষ্ট জবাব পাওয়া গেল।
চেইনঅলা জ্যাকেট ও জলপাই সবুজ রঙের জামায় ঢেকে থাকা মৃতদেহে অবসাদ ভর করেছে। ওই কুঁড়ে ঘরে নেওয়া হলো। সন্দেহতীতভাবেই এটা চে গুয়েভারা। গত জানুয়ারিতে আমি সর্বপ্রথম প্রতিবেদন করেছিলাম যে, চে সম্ভবত বলিভিয়ায় আছেন। তার অবস্থান সম্পর্কে প্রচলিত মতামতকে আমি গ্রহণ করিনি।
এখানে সম্ভবত আমার মতো খুব লোকই আছেন যারা চেকে জীবিতাবস্থায় দেখেছেন। ১৯৬৩ সালে কিউবায় একটি দূতাবাসে তাকে আমি দেখি। আর আমার মনে কোনো সন্দেহই নাই, এটাই চে’র মৃতদেহ। তার ছাড়া ছাড়া কালো গোঁফদাড়ি আছে। দীর্ঘ জটপাকানো চুল। কপালের ডানপাশে একটি ক্ষত।
তার পায়ে মোকাসিন (ইন্ডিয়ানদের ব্যবহৃত মোজা)। জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ক্ষিপ্র গতিতে যাওয়ার সময় তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। ঘাড়ের নিচের অংশে দুটি ক্ষত এবং সম্ভবত পেটে আরেকটি। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে আহত অবস্থায় আটক করা হয়। যুদ্ধাক্ষেত্রে থেকে নিয়ে যাওয়ার জন্য হেলিকপ্টার পৌঁছার আগেই তিনি মারা যান।
আমার সন্দেহ হলো, আমি এর আগে চেকে যেমন দেখেছিলাম তার চেয়ে তাকে অনেক পাতলা ও খাটো দেখাচ্ছিল। তবে এটা আশ্চর্যজনক নয় যে, কয়েক মাস জঙ্গলে থাকার ফলে তার এ অবস্থা হয়েছে।
তিনি একজন মার্কসবাদী বিপ্লবী। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে মতাদর্শিক অবস্থানের পার্থক্য ছিলো। তিনিই সম্ভবত সর্বশেষ ব্যক্তি যিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত সব প্রগতিশীলদের একত্রিত করতে চেষ্টা করেন। তিনি এখন মৃত, তবে তার চিন্তারও মৃত্যু হয়ে গেছে এমন ভাবা অত্যন্ত কঠিন। -অনুবাদ করেছেন রানা রায়হান
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০১০