ঢাকা, শুক্রবার, ২ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৮ জুলাই ২০২৫, ২২ মহররম ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্ল্যাশ ফ্লাড, জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল 

আন্তর্জাতিক ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৪৬, জুলাই ১৭, ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্ল্যাশ ফ্লাড, জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, নর্থ ক্যারোলিনা, ইলিনয়, নিউ মেক্সিকো, নিউ ইয়র্ক সিটিতে আচমকা রেকর্ড পরিমাণ বন্যায় দুর্গতির খবর আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি। গতবছরেই দাবানলে দেশটির মাইলের পর মেইল এলাকা পুড়ে যাওয়ার ক্ষত এখনো দগদগে।

এরই মধ্যে এমন বন্যা এক অপরিচিত চেলেঞ্জের মুখোমুখি এইসব অঞ্চলের বাসিন্দারা।  

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ধীরগতির বজ্রবৃষ্টির ফলে ৪ জুলাই পুরো গ্রীষ্মের মোট বৃষ্টির চেয়েও বেশি বৃষ্টি হয়েছে। বন্যায় ১৩০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ে উত্তর ক্যারোলিনায় প্রায় এক ফুট বৃষ্টি ঝরেছে, ভাবা যায়? তীব্র তাপদাহ বাতাসের আর্দ্রতা বাড়িয়েছে অস্বাভাবিকভাবে। তারপর ঝড়ের প্রভাবে তীব্র বৃষ্টি নেমেছে। নদীর পানি ২৫ ফুটেরও বেশি ফুলেফেঁপে বিপদ ডেকে এনেছে। সবকটি দুর্যোগই ছিল চরম, হঠাৎ আর দ্রুত।

যুক্তরাষ্ট্রের শহরাঞ্চলের অবকাঠামো আর রাস্তাঘাটের কারণে এমন ভারী বৃষ্টির পানি মাটির ভেতরে যেতে পারে না। দাবানলে পুড়ে অনেক অঞ্চলের মাটি পানি শুষে নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার ড্রেনেজ সিস্টেমও এত বৃষ্টির পানি সামলানোর জন্য ডিজাইন করা হয়নি।

তবে এমন জীবনবিনাশী প্রাকৃতিক দুর্যোগের পেছনে আসল ভিলেন কিন্তু আমরা, মানুষ। জীবাশ্ম জ্বালানির নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবহার করে পরিবেশ দূষণ ঘটিয়েছি বহু বছর ধরে। ফলে জলবায়ু পরিবর্তন এমন পরিস্থিতিকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। তাই ফ্লাশ ফ্লাডের মতো আশঙ্কা বেড়ে গেছে।

প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লে বাতাসে প্রায় ৭ শতাংশ বেশি জলীয় বাষ্প যোগ হতে পারে। ফলে ঝড়ের সঙ্গে ভয়ঙ্কর বৃষ্টিপাত বেড়ে যায়। পৃথিবীর তাপমাত্রা আমরা যত বাড়াচ্ছি, ততই এসব ঝড়-বাদল উষ্ণ গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের সীমা ভেঙে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলগুলোতেও হানা দিচ্ছে। সেইসব অঞ্চলেও তাই বাড়ছে তীব্র বৃষ্টি। অলাভজনক গবেষণা সংস্থা ক্লাইমেট সেন্ট্রালের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭০ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯০ শতাংশ বড় শহরে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে।

গ্লোবাল ওয়ার্মিংই যুক্তরাষ্ট্রের আজকের দুর্দশা ডেকে এনেছে, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের দায় এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দায় কতটুকু, তা সামনে আনা দরকার। নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নিয়েই তিনি প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে আনেন। ওই চুক্তির লক্ষ্য ছিল, পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা কমানো। পৃথিবীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং খাদ্য উৎপাদনকে হুমকির মুখে না ফেলে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে চায় প্যারিস চুক্তি।

অথচ ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলক দেশ করে রাখার পথে হেঁটেছেন। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্বাহী আদেশ জারি করে তিনি জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন নিয়ে তামাশাও করেছেন। পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে এভাবেই অবদান রাখছে যুক্তরাষ্ট্র। তাহলে আজকে দেশটিতে যে ফ্ল্যাশ ফ্লাড আর মৃত্যুর মিছিল দেখছি, তাকে যদি সেই ভুলের শাস্তি বলি, তা কি বেশি বলা হবে?

এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।