ঢাকা, বুধবার, ২ আশ্বিন ১৪৩২, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

রাখাইন রাজ্যে দাঙ্গা: জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৪২, জুন ১১, ২০১২
রাখাইন রাজ্যে দাঙ্গা: জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে

ঢাকা: মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে মুসলিম-বৌদ্ধ সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার পর পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক না হওয়ায় ওই অঞ্চল থেকে জাতিসংঘ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরিয়ে  নেওয়া হচ্ছে। সোমবার কর্মীদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্মকর্তারা।

রাখাইন রাজ্যে জাতিসংঘের আবাসিক কর্মকর্তা ও মানবাধিকার সমন্বয়ক অশোক নিগম জানিয়েছেন, বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে রাখাইন রাজ্যের মংদু থেকে জাতিসংঘের প্রায় ৪৪ কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

নিগম বলেন, মংদুতে স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া কর্মকর্তাদের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জাতিসংঘ এখানে মানবাধিকার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে কিন্তু কারফিউয়ের মধ্যে তা চালিয়ে নেওয়া অসম্ভব।

কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে অশোক নিগম আরো জানান, মংদু কার্যালয় থেকে বেশিরভাগ বিদেশি কর্মকর্তাদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। তবে স্থানীয় কর্মকর্তারা সেখানেই থাকবেন।

তবে তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক সময়ের জন্য এবং ওই এলাকায় নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিরতার কারণেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কর্মকর্তাদের প্রথম একটি দল গত রোববারেই মংদু ছেড়ে গেছে আর দ্বিতীয় দলটি সোমবার তাদের অনুসরণ করে। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা সব এখন রাজ্যের রাজধানী সিতবেতে জড়ো হচ্ছে বলে জানান অশোক নিগম। এদের বেশিরভাগকেই মিয়ানমারের প্রধন শহর ইয়াঙ্গুনে বিমান যোগে পাঠানো হবে। একই সঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদেরও মংদু ছেড়ে যেতে সহায়তা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে গত শুক্রবার থেকে মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে চলা জাতিগত সংঘাত শনিবার ভয়াবহ রূপ নেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রোববার সমগ্র রাখাইন রাজ্যে জরুরি অবস্থা ও গুরুত্বপূর্ণ শহরে কারফিউ জারি করে মিয়ানমার সরকার।
যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শহরের রাস্তায় সেনা বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাখাইন রাজ্যে বৌদ্ধরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানে বিশাল সংখ্যার মুসলিম ও রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের জাতিসংঘ রাষ্ট্রবিহীন মানুষ বলে অভিহিত করে। সংখ্যালঘু হিসেবে বিশ্বে এরাই সবচে নিপীড়িত বলে মনে করা হয়।

কারণ বৌদ্ধরা এমনকি সরকারও এদের বহিরাগত বলে মনে করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মা নৃগোষ্ঠীর লোকেরা এদের ‘বাঙালি’ বলে এবং সীমন্তবর্তী বাংলাদেশে তাদের পুশইন করা হয়।

মিয়ানমারে গত বছর সরাসরি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের পর সাম্প্রতিক জাতিগত সংঘাতকে সবচে ভয়াবহ বলে বর্ণনা করা হচ্ছে। সম্প্রতি এক রাখাইন নারীকে ধর্ষণ এবং পরে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই সংঘাতের সূচনা হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ঘটনার পর গত সপ্তাহের রোববার বৌদ্ধ প্রহরীরা একটি বাসে হামলা করে ১০ জন মুসলিমকে হত্যা করে।
এ ঘটনার পরেই শুক্রবার দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এদিন কমপক্ষে চার জন বৌদ্ধ নিহত হয়। সংঘাত চলে শনিবার ও রোববারও। এ দু’দিনে পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন গ্রামে সংঘাত ছড়িয়ে পড়েছে। এ যাবত কমপক্ষে ১৭ জন মারাত্মক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংঘাত ঠেকাতে সরকার রাজ্যজুড়ে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনা বাহিনী মোতায়েন করেছে। রাজ্যজুড়ে জরুরি অবস্থা চলছে এবং গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে চলছে কারফিউ।

উল্লেখ্য, মিয়ানমারে বসবাসরত মুসলিমরা মূলত ভারত, চীন ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। দেশটির ছয় কোটি জনসংখ্যার চার শতাংশ মুসলিম। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠরা হচ্ছে বার্মিজ বৌদ্ধ।

জাতিসংঘের হিসাবে মিয়ানমারে আট লাখ রোহিঙ্গা মুসলিমের বাস। যাদের বেশিরভাগই রাখাইন রাজ্যে বসবাস করে। এ জাতিগোষ্ঠীর আরো ১০ লাখ বা তারও বেশি মুসলিম অন্যান্য দেশে বসবাস করে।

এদিকে সীমান্ত সংলগ্ন রাখাইন প্রদেশের সংঘাত এপারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া চট্টগামে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

অপরদিকে গত রোববার ইয়াঙ্গুনে শুয়েদাগোন প্যাগোডায় ছয়শ’ রাখাইন জড়ো হয়ে মিয়ানমার থেকে ‘বাঙালিদের’ বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১২
সম্পাদনা: জাহাঙ্গীর আলম, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।