ঢাকা: ইউরোপ সফরের দ্বিতীয় দিনে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি সুইজারল্যান্ডের পার্লামেন্ট পরিদর্শন করতে যাচ্ছেন। ঐতিহাসিক ইউরোপ সফরে গত বুধবার রাতে সুইজারল্যান্ড পৌছাঁন সু চি।
বৃহস্পতিবার তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরে আন্তর্জাতিক লেবার অরগানাইজেশনের একটি সম্মেলনে বক্তব্য দেন।
পরবর্তীতে রাজধানী বার্নে অংশ নেওয়া সংবাদসম্মেলনের সময় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ফলে তার সম্মানে আয়োজন করা একটি ভোজ সভায় অংশ নিতে পারেননি তিনি। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে তার অসুস্থতার কারণ ভ্রমনজনিত অবসাদ।
এর আগে সফরের প্রথম দিন দেওয়া বক্তব্যে তিনি মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য সমর্থন দিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালের পর প্রথম ইউরোপ সফরে বের হয়েছেন সু চি। গত ২৪ বছরের মধ্যে অধিকাংশ সময়েই মিয়ানমারে গৃহবন্দি থাকা সু চিকে ২০১০ সালে মুক্তি দেওয়া হয়। মুক্তির পর থেকেই নিজ দেশে গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সুচি । এরই ধারাবাহিকতায় দুই মাস আগে মিয়ানমারের পার্লামেন্টের এক উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করেন তিনি।
১৪ জুন আইএলওতে দেওয়া নিজের বক্তব্যে মিয়ানমারের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক উত্তরণের পথে সহায়তা করে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করেন সু চি। তিনি বলেন,‘মিয়ানমারের এখন প্রয়োজন গণতন্ত্র-বান্ধব উন্নয়ন। ’ একই সঙ্গে তিনি এসব উন্নয়নের সঙ্গে মিয়ানমারের সাধারণ নাগরিকদেরও সম্পৃক্ত করার আহবান জানান।
ইউরোপ সফরের শুরুতেই সু চি আইএলও’র অনুষ্ঠানে অংশ নেন, কারণ মিয়ানমারে বাধ্যতামূলক শ্রমের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে প্রচারণা চালিয়ে আসছে সংস্থাটি।
সু চির দু’ সপ্তাহের এই ইউরোপ সফরকে মিয়ানমারের গনতান্ত্রিক উত্তরণের পথে একটি ইতিবাচক মাইলফলক হিসেবে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সামরিক জান্তার দীর্ঘশাসনাধীনে থাকার সময় মিয়ানমার বাকি পৃথিবীর থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিলো।
সুইজারল্যান্ড দিয়ে সফর শুরু করে সু চি আগামী শনিবার নরওয়ের রাজধানী অসলোতে তার নোবেল পুরষ্কার গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার পান তিনি। তবে সামরিক জান্তার অসহযোগিতায় নিজ হাতে পুরষ্কার গ্রহণ করতে পারেননি তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে এটি হলো সু চির দ্বিতীয় বিদেশ যাত্রা। গত মে মাসে অনুষ্ঠিত প্রথম সফরে প্রতিবেশী থাইল্যান্ড ভ্রমণ করেন সু চি।
সু চি ব্রিটিশদের অধীনতা থেকে বার্মার স্বাধীনতার জনক অং সানের কন্যা। ১৯৪৭ সালে নিহত হন অং সান।
বহুবছর প্রবাসে থাকার পর ১৯৮৮ সালে অসুস্থ মাকে দেখতে দেশে ফিরে আসেন সুচি। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে বাধ্য হন। এরপর আর মিয়ানমার ত্যাগ করতে পারেননি তিনি। একবার মিয়ানমার ত্যাগ করলে সামরিক জান্তা তাকে আর দেশে ফেরত আসার অনুমতি নাও দিতে পারে, এই আশঙ্কাতেই মূলত দেশ ত্যাগ করেননি সু চি।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১২
সম্পাদনা:রাইসুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর