ঢাকা, সোমবার, ২৪ চৈত্র ১৪৩১, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পের আমদানি শুল্ক পৃথিবীজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ ঘটাবে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৬, ২০২৫
ট্রাম্পের আমদানি শুল্ক পৃথিবীজুড়ে বাণিজ্য যুদ্ধ ঘটাবে?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ট্যারিফ বা শুল্ক আরোপ এখন পর্যন্ত যতখানি কার্যকর হয়েছে, তা পুরো পৃথিবীকে প্রতিশোধের পথে নিয়ে যেতে পারে। বাণিজ্য উত্তেজনা বেড়ে যেতে পারে।

এমন পরিস্থিতি ভৌগোলিক অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে।

শনিবার (৫ এপ্রিল) থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর ও শুল্ক গুদামগুলোয় প্রাথমিক ১০ শতাংশ ‘বেজ-লাইন’ শুল্ক কার্যকর হয়। এর মাধ্যমে ট্রাম্প দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী পারস্পরিক সম্মত শুল্ক হারের ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।

১০ শতাংশ শুল্ক প্রথম যে দেশগুলোর ওপর আরোপ করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কলম্বিয়া, আর্জেন্টিনা, মিশর ও সৌদি আরব। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে ‘পারস্পরিক সহযোগিতার অভাব’ ও ‘অতিরিক্ত মূল্য সংযোজন করের’ মতো অন্যান্য নীতির কারণে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

জাহাজ চালকদের কাছে পাঠানো মার্কিন শুল্ক ও সীমান্ত সুরক্ষা বুলেটিনে শনিবার মধ্যরাতে জলপথে পণ্যবাহী জাহাজের জন্য কোনো অতিরিক্ত সময়সীমার নির্দেশ দেওয়া হয়নি। কিন্তু মার্কিন কাস্টমস ও সীমান্ত সুরক্ষা বুলেটিনে শনিবার মধ্যরাতের আগে জাহাজ বা বিমানে লোড করা ও যুক্তরাষ্ট্রে ট্রানজিট করা পণ্যের জন্য ৫১ দিনের অতিরিক্ত সময়সীমা দেওয়া হয়েছে। ১০ শতাংশ শুল্ক এড়াতে ২৭ মে মধ্যরাতের মধ্যে পণ্যগুলো পৌঁছাতে হবে।

তাছাড়া, ৯ এপ্রিল থেকে, ট্রাম্পের ১১ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত উচ্চতর ‘পারস্পরিক’ শুল্ক হার কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। চীনা পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ফলে চীনের ওপর ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ৫৪ শতাংশে দাঁড়াবে।

চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের বাণিজ্য যুদ্ধের পর চীন থেকে মার্কিন সাপ্লাই চেইন সরিয়ে নেওয়ার ফলে উপকৃত হয় ভিয়েতনাম। দেশটির ওপর ৪৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তবে, গত শুক্রবার ট্রাম্পের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে ভিয়েতনাম।

কানাডা ও মেক্সিকো দুই দেশই ট্রাম্পের সর্বশেষ শুল্ক থেকে অব্যাহতি পেয়েছে। কারণ, দেশ দুটি এখনো মার্কিন ফেন্টানাইল সংকট সম্পর্কিত পণ্যের জন্য ২৫ শতাংশ শুল্কের অধীন, যেগুলো মার্কিন-মেক্সিকো-কানাডার উৎপত্তির নিয়ম মেনে চলে না।

আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের ইকোনমিক পলিসি স্টাডিজের পরিচালক মাইকেল স্ট্রেন কাতারের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে বলেন, বিনিয়োগকারীরা মার্কিন শুল্ক বেশ খারাপভাবে গ্রহণ করেছে। তার আশঙ্কা, এটি শ্রমিক, পরিবার এবং ব্যবসার অর্থনৈতিক পরিণতির ওপর সত্যিই খারাপ প্রভাব ফেলবে। এমন পদক্ষেপ চলতি বছর মার্কিন পরিবার ও ব্যবসার ওপর চারশ থেকে ৫০০ বিলিয়ন ডলার কর বৃদ্ধি করবে।

কর ও শুল্ক অনেক বেড়ে যাওয়ায় পরিবারগুলো আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি মোকাবিলা করবে। এর মানে সম্ভবত, পরিবারগুলোর আয় বাড়বে না। কেবল এতেই যুক্তরাষ্ট্রে মন্দার ঝুঁকি তৈরি হবে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

গত শুক্রবার চীন ঘোষণা করেছে, তারা ১০ এপ্রিল থেকে মার্কিন পণ্যের ওপর নিজস্ব ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবে। চীন আরও বলেছে, তারা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মামলা করবে এবং উচ্চমানের চিকিৎসা ও ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত বিরল ধাতুর উপাদানের রপ্তানি সীমিত করবে। ওই দিনই সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রাম্প এই বলে সতর্ক করেন, চীন ভুল করেছে। তারা এমন কিছু করতে পারবে না। অন্যান্য প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদাররা আন্তর্জাতিক অচলাবস্থা এবং মন্দার আশঙ্কা করছে।

ট্রাম্পের বুধবারের শুল্ক ঘোষণা বিশ্বব্যাপী শেয়ার বাজারকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। শুক্রবারের শেষের দিকে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজার মূল্য ৫ ট্রিলিয়ন ডলার নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। এটি দুই দিনের রেকর্ড পতন। তেল এবং নিত্যপণ্যের দাম কমে গেছে। অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরা সরকারি বন্ডের নিরাপত্তায় রয়েছে।

অর্থনীতিবিদরাও সতর্ক করে দিয়েছেন যে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে প্রবৃদ্ধি ও জ্বালানি মূল্যস্ফীতি ব্যাহত হতে পারে।

হোগান লাভেলসের বাণিজ্য আইনজীবী ও ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন বাণিজ্য উপদেষ্টা কেলি অ্যান শ বৃহস্পতিবার ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের একটি অনুষ্ঠানে বলেন, আমি আশা করেছিলাম দেশগুলো কম হারের জন্য আলোচনা করলে সময়ের সাথে সাথে শুল্ক পরিবর্তিত হবে। কেলি এটিকে জীবদ্দশায় একক বৃহত্তম বাণিজ্য পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন। পৃথিবীর প্রতিটি দেশের সাথে মার্কিন বাণিজ্যের পদ্ধতিতে এটি একটি বড় ভূমিকম্প এবং উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন বলেও জানান তিনি।

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে বলেছেন, তার নীতি কখনো পরিবর্তন হবে না। তবে, তার সর্বশেষ আমদানি শুল্কে উল্লেখযোগ্য ব্যতিক্রম রয়েছে। ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং অটোমোবাইল আমদানিতে সম্প্রতি আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্কের ওপর এসব নির্ভর করে না।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং জ্বালানি পণ্যের পাশাপাশি তামা, ওষুধ, সেমিকন্ডাক্টর এবং কাঠ সাময়িকভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে ট্রাম্প তামা এবং কাঠের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে শীঘ্রই আরও শুল্ক আরোপ হতে পারে। তিনি ওষুধ ও সেমিকন্ডাক্টরের মতো অন্যান্য শিল্পকেও আঘাত করার হুমকি দিয়েছেন। এর মানে যেকোনো স্থগিতাদেশ সীমিত হতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০২৫
এমএইচডি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।