গত সপ্তাহে দুবাইয়ে একটি বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিরা এক চমকপ্রদ দৃশ্যের সাক্ষী হন। সেখানে ২০০টি ড্রোন রাতের আকাশে নবদম্পতির প্রেমকাহিনি তুলে ধরে।
এক সময় ড্রোন প্রদর্শনী ছিল কল্পিত এক বিষয়। এখন তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। দুবাইয়ের মতো জায়গায় এই প্রদর্শনী এখন বিয়ের আয়োজনের জনপ্রিয় অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেল।
ড্রোন শো বা ড্রোন প্রদর্শনীর আয়োজক প্রতিষ্ঠান বটল্যাব ডায়নামিকসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সারিতা আহলাওয়াত বলছিলেন, যখন আমরা শুরু করেছিলাম, বিয়েতে ড্রোন শোয়ের কথা ভাবাটাই ছিল অদ্ভুত—এটি ছিল কেবলমাত্র বিলাসবহুল অনুষ্ঠানের জন্য। কিন্তু এখন বিয়েতে ড্রোন শো আয়োজনের প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে।
ভারতের বিভিন্ন শহরে এক শতাধিক বিয়ের ড্রোন শো আয়োজন করা প্রতিষ্ঠানটি এখন উপসাগরীয় অঞ্চলেও ব্যাপক চাহিদা দেখতে পাচ্ছে। সারিতা জানান, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ড্রোন প্রদর্শনী খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
‘আমরা দেখছি, দুবাই, আবুধাবি এবং অন্যান্য গন্তব্যে বিয়ের পরিকল্পনা করা ভারতীয় পরিবারগুলো আমাদের শোয়ের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকেও আমরা অনুরোধ পাচ্ছি—অনেকেই আমাদের শোয়ের ভিডিও দেখে যোগাযোগ করছেন। ’
‘ওয়াও’ অনুভূতির জাদু
সারিতা মনে করেন, ড্রোন প্রদর্শনীর সবচেয়ে বড় আকর্ষণই হলো অবাক করা অনুভূতি বা ‘ওয়াও’ অনুভূতির জাদু। তিনি বলেন, দুবাইয়ের বিয়েতে যখন শো শুরু হয়, তখন অতিথিদের মুখে একসঙ্গে একটি বিস্ময়বোধক আওয়াজ ওঠে। আর সেটি হলো ‘ওয়াও’।
‘বর-কনে একে অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, আর সবাই যেন মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলেন আকাশের দিকে। প্রযুক্তি-প্রেমী শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক আত্মীয়রাও সমানভাবে মুগ্ধ হচ্ছিলেন—এটা খুব আবেগঘন মুহূর্ত। ’
তিনি বলেন, ২০২৪ সালে অনন্ত আম্বানি ও রাধিকা মার্চেন্টের বিয়-পূর্ব অনুষ্ঠানে ড্রোন শোয়ের আয়োজনের পরই চাহিদা বেড়ে যায়। ভারতীয় ধনকুবের মুকেশ আম্বানির ছেলের ওই বিয়ে ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোর একটি। তাতে আনুমানিক খরচ ছিল ৬০০ মিলিয়ন ডলার।
সারিতা বলেন, আমরা সেখানে সাড়ে পাঁচ হাজার ড্রোন উড়িয়েছিলাম—এটি তখন ভারতের সবচেয়ে বড় ড্রোন প্রদর্শনী ছিল। সেই আয়োজনটি বিশ্বজুড়ে সংবাদের শিরোনাম। সেটি ছিল এক মোড় পালটানো মুহূর্ত। এর পর থেকেই সবাই ড্রোন শো নিয়ে আলোচনা শুরু করে।
নিখুঁত ড্রোন শোয়ের আয়োজন করতে হলে অনেক প্রস্তুতির দরকার হয়। এতে অনেক পরিকল্পনা, সমন্বয় আর নির্ভুলতা দরকার। আমরা সাধারণত বিয়ের অন্তত কয়েক মাস আগেই প্রস্তুতি শুরু করতে হয়।
আছে নানা চ্যালেঞ্জ
স্থানীয় এক বিয়ে-পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ জানান, এখনো এই ড্রোন প্রদর্শনীকে মূলধারার ট্রেন্ড বলা যাবে না—এর প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত খরচ। ব্রাইডক্লাবমি’র প্রতিষ্ঠাতা রিয়ানন ডাউনি-হার্স্ট বলেন, এখনো ড্রোন শো মূলত উচ্চবিত্তদের আয়োজনেই সীমাবদ্ধ।
‘তবে যারা ব্যতিক্রমী কিছু চায়, তাদের কাছে ড্রোন প্রদর্শনীর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে এ ধরনের প্রদর্শনী করতে হলে অনুমতি, ভেন্যুর সীমাবদ্ধতা, নিরাপত্তা নির্দেশিকা এবং অনুমোদিত অপারেটর বেছে নেওয়ার মতো বিষয়গুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ’
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে দুবাইয়ের এক বাসিন্দা বলেন, তিনি নিজের মেয়ের বিয়েতে ড্রোন প্রদর্শনী আয়োজনের কথা ভেবেছিলেন। ‘খরচ শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। বিয়ের খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেত। তাই শেষ পর্যন্ত আতশবাজিতেই সন্তুষ্ট থাকি। ’
তবে সারিতা বলেন, এখন বাজেট অনুযায়ী বিভিন্ন পরিসরে ড্রোন প্রদর্শনীর আয়োজন করা সম্ভব। ড্রোন প্রদর্শনী এখন অনেক বেশি সহজলভ্য হয়েছে। মাত্র কয়েকশ ড্রোন দিয়েই এক দারুণ জাদুকরী মুহূর্ত তৈরি করা যায়। এর খরচ বড় আতশবাজি বা ব্যয়বহুল কোনো পরিবেশনারই সমান।
খালিজ টাইমস অবলম্বনে
আরএইচ