করাচি: পাকিস্তানের বৃহত্তম শহর করাচির পুলিশ সদর দপ্তরে ভয়াবহ ট্রাক বোমা হামলায় ২৮ জন নিহত এবং ১৩০ জন আহত হয়েছেন। পাকিস্তানের তালেবান তাৎক্ষনিকভাবে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।
বৃহস্পতিবার রাতে করাচির বাসিন্দারা যখন কাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন তখনই এই হামলা চালানো হয়। বিস্ফোরণের প্রচণ্ডতায় ভবনটির দরজা-জানালার কাঁচ প্রায় দুই কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। উদ্ধারকর্মীরা ধ্বংসস্তুপের মধ্যে হতাহতদের খোঁজ করছেন।
করাচির এই পুলিশ দপ্তরটি সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বন্দিশালা হিসেবে পরিচিত। করাচি রাজনৈতিকভাবে বিুব্ধ হলেও সরকারি নিরাপত্তবাহিনীর ওপর হামলা ঘটনা প্রায় বিরল।
পাকিস্তানের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত করাচি থেকে আফগানিস্তানে তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটোবাহিনীর জন্য যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করা হয়।
করাচির কেন্দ্রস্থলে বেশ কয়েকটি পাঁচ তারকা হোটেল, মার্কিন এবং পাকিস্তানি কনস্যুলেটের কাছেই অবস্থিত পুলিশের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট ছিল জঙ্গিদের হামলার লক্ষ্যবস্তু। সেখানে মহিলা পুলিশের মহিলা সদস্যরাও ছিলেন।
বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর আগে জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশ সদস্যদের প্রচণ্ড বন্দুকযুদ্ধ হয়।
সিন্ধুর পুলিশ সার্জন হামিদ পারহিয়ার জানিয়েছেন, আহতদের মধ্যে ২৫ মহিলা এবং ২০টি শিশুও রয়েছে। ১৩০ জন আহতকে দু’টি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জিন্নাহ হাসপাতালের চিকিৎসক সামি জামালি শতাধিক আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে একজন মহিলা পুলিশও রয়েছেন।
সিন্ধু পুলিশের প্রধান জানিয়েছেন, হামলায় পুলিশ দপ্তর ভবনটি সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় ১৮ জন নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি আরও জানিয়েছেন জঙ্গিরা বোমার বিস্ফোরণ ঘটানোর আগে বন্দুকের ছুঁড়ে পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙ্গে ফেলে।
নিহতদের মধ্যে পাঁচ পুলিশ সদস্য রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সিন্ধু সরকারের মুখপাত্র শর্মিলা ফারুকি।
এদিকে অজ্ঞাত স্থান থেকে তালেবান মুখপাত্র আজম তারিক হামলার দায় স্ব^ীকার করে বলেছেন, তাদের সঙ্গীদের আটক এবং নির্যাতনের প্রতিশোধ হিসেবেই তারা এই হামলা চালিয়েছে।
যারাই এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদেরই তালেবান হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন।
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি মসজিদে হামলার ঘটনার এক সপ্তাহের মধ্যেই এই হামলার ঘটনা ঘটলো। মসজিদে হামলায় ৬৮ জনের প্রাণহানি হয়।
এদিকে ইসলামাবাদে অবস্থানরত মার্কিন সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য ক্রিস্টিন গিলিব্র্যান্ড এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, সেনা এবং গোয়েন্দাবাহিনীকে জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয়গুলো ধ্বংস করতে হবে। এছাড়া শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন এবং এমন সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে যাতে তরুণ প্রজন্ম সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সঙ্গে জড়িত হতে না পারে।
তিনি আরও বলেছেন, পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পুরোপুরি অংশ না নিলে এ ধরনের হামলা বন্ধ হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১০