লন্ডন: স্মরণকালের সহিংস ছাত্রবিক্ষোভে ব্রিটেন উত্তাল হয়ে ওঠেছে। কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ব্রিটেনের জোট সরকার।
বিক্ষোভকারীরা এ সময় কেন্দ্রীয় লন্ডনে অবস্থিত কনজারভেটিব পার্টির কার্যালয় মিলব্যাংক ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।
সহিংস বিক্ষোভ পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অতিরিক্ত দাঙ্গা পুলিশ তলব করে তা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। তাতেও ব্যাপক য়তি রোধ করা সম্ভব হয়নি। শেষ খবর অনুযায়ী এ ঘটনায় ১৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সাত পুলিশ সদস্য রয়েছেন। পুলিশের এক সদস্যের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। টিভি ফুটেজ ও পত্রিকার ছবি দেখে আরও গেপ্তারের পরিকল্পনা করছে পুলিশ।
দি ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব স্টুডেন্ট, ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ ইউনিয়ন ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর আহবানে অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ প্রথম দিকে শান্তিপর্ণূভাবে পালিত হলেও এক পর্যায়ে তা সহিংস রূপ নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রায় ২০ জন বিক্ষোভকারী প্রথমে টোরি পার্টির প্রধান কার্যালয় মিলব্যাংক ভবনের প্রধান হল দখল করে বসে থাকে। পরে তারা প্রধান প্রবেশ পথের কাচের দরজা জানালা ভাঙচুর করে। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ভবনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। অগ্নি নির্বাপক বিভিন্ন যন্ত্র খুলে তা নিচে পুলিশের দিকে নিক্ষেপ করা হয়।
বিক্ষোভ উত্তাল হয়ে ওঠলে পুলিশ ভবনের পেছন দরজা দিয়ে কনজারভেটিব পার্টির অফিস কর্মকর্তাদের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। এ সময় পার্টির চেয়ারম্যান সাঈদা ওয়ারসি অফিসে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে দণি কোরিয়ার রাজধানী সিউলে অবস্থান করছেন। এ সময় তিনি টেলিফোনে পার্টি অফিসে সহকর্মীদের খোঁজ নেন।
সিউলে বিবিসি চ্যানেল-৫ এ দেওয়া সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন ছাত্রবিক্ষোভের এই সহিংস ঘটনায় কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, ‘সরকারের কোনো সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার অধিকার সবারই আছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে সহিংসতার আশ্রয় নিতে হবে। ’
এদিকে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেওয়ার ঘটনার দায় সংগঠনের কেউই নিতে চাচ্ছেন না।
দি ন্যাশনেল ইউনিয়ন অব স্টুডেন্টের মূখপাত্র সহিংস ঘটনার পেছনে কারা আছে তা তারা জানেন না বলে মন্তব্য করে বলেন, ‘তবে যারাই থাকুক এরা অশুভ শক্তি। সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে মিশে তারা এই সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে। ’
ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ ইউনিয়নের মূখপাত্র ডান আসলি সহিংস ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে সহিংসতায় রূপ দিতে নিশ্চয়ই কোনো পেশাদার বিক্ষোভকারী গোষ্ঠী পেছন থেকে কলকাটি নেড়েছে। ’
ইউনির্ভাসিটির বর্তমান বার্ষিক ফি ৩,২৯০ পাউন্ডের স্থানে তা বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৯ হাজার করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করার পর থেকেই ব্রিটেনের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাধছিল।
২০১২ সাল থেকে ইউনিভার্সিটি টিউশন ফি বৃদ্ধির এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
এক সময় ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটিতে ফ্রি পড়াশোনার সুযোগ ছিল। ১৯৯৮ সালে লেবার পার্টির সরকার সর্বপ্রথম ইউনিভার্সিটি ছাত্রদের জন্যে ফি ধার্য করে, যা বর্তমানে ৩,২৯০ পাউন্ড। বর্তমান সরকার বলছে, ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাঋন পাওয়ার যে সুযোগ ছিল তা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বর্তমান পদ্ধতিতে একজন ছাত্র বা ছাত্রী যখন ইউনিভার্সিটি থেকে শিক্ষা শেষে বের হবে, তখন তাঁর মাথায় থাকবে ৩০ থেকে ৩৮ হাজার পাউন্ডের ঋণের বোঝা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১০