ইয়াঙ্গুন: সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভঙ্গি এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধ ক্ষমতা তার চোখে মুখেই ফুটে উঠে। আর একারণে প্রায় পাঁচ দশকের সেনা শাসনের মধ্যে এখনও অনেক মিয়ানমারবাসীর কাছে আশার প্রতীক গণতন্ত্রপন্থী নেতা অং সান সুচি (৬৫)।
আর একারণে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এ নেতার জনপ্রিয়তায় জেনারেল এতটাই ভীত যে তার মুক্তির সময় যখন হয়ে এসেছে তখনও মুক্তির প্রসঙ্গে মুখ খুলনি জান্তা। যদিও সরকারি মুখপাত্ররা তার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তারপর শঙ্কা রয়েই গেছে। সামরিক জান্তা নতুন করে কি বিধি আরোপ করে এই নেত্রীর ওপর।
সুচির বন্দীদশার মেয়াদ শনিবার শেষ হচ্ছে। আর কোনো বিধি নিষেধ আরোপ না করলে মুক্তি পাবেন এ জনপ্রিয় নেত্রী। তার জনপ্রিয়তার যাচাইয়ের জন্য জনগণকে ডেকে আনতে হয়নি। শুক্রবার থেকে সাংবাদিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ভিড় করেছেন তার বাড়ির সামনে। কেউ নিয়ে এসেছেন ফুল। কেউ ছবি প্লেকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। দীর্ঘ দিন পর তাদের প্রিয় নেত্রীকে একনজর দেখার আশায়।
বন্দী অবস্থায় টেলিফোন বা ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ না দিয়ে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। শুধু সঙ্গ দেওয়ার জন্য দু’জন সহকারী রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। প্রয়োজন ছাড়া তার বাড়িতে প্রবেশের অধিকার নেই চিকিৎসক ও আইনজীবীর।
কিন্তু সুচিকে মুক্তি দেওয়া হলেও জেনারেল তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ করবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। কেননা তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যে বিরোধীদের জান্তার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করতে সক্ষম।
এদিকে মুক্তি পেলে তিনি টুইটারে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা তার ভক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে জানা যায়। তবে মুক্তির পর গণতন্ত্রের জন্য তার দীর্ঘ এ লড়াই থেকে তিনি সরে দাঁড়াবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
তবে মিয়ানমারে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত অ্যান্ডে্রুা হেয়েন বলেন, ‘তার সেই উদ্যম, সেই অঙ্গীকার এখনও আগের মতই আছে। ’ গত বছর তার সঙ্গে সাাতের সুযোগ পাবার পর এ মন্তব্য করেন হেয়েন । এসময় তাকে কিছু পশ্চিমা কূটনীতিকের সঙ্গে আলাপের দুর্লোভ সুযোগ দেওয়া হয়।
১৯৮৮ সালের আগস্টে শয়েদাগনের এক জনসমাবেশে সুুচি বলেছিলেন, ‘গণতন্ত্র অর্জন করতে হলে জনগণকে অবশ্যই একত্রিত হতে হবে, এটা খুবই স্পষ্ট। এটা খুবই সহজ একটি বিষয়। ’
তিনি আরও বলেছিলেন, ‘কোনো লক্ষ্য অর্জনে আমরা যদি একত্রিত না হই তাহলে আমরা কখনোই কিছু অর্জন করতে পারবোনা।
উল্লেখ্য, সুচি’র ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) ২০ বছর আগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বড় ধরনের জয় পাওয়ার পর থেকেই সুচিকে গৃহবন্দী করে দেশটির জান্তা। একইসঙ্গে কখনোই তাকে বা দলটিকে ক্ষমতায়ও যেতে দেওয়া হয়নি।
এছাড়া গত বছরের আগস্টে সুুচির গৃহবন্দীর মেয়াদ আরও ১৮ মাস বাড়ানো হয়। অপ্রত্যাশিতভাবে এক মার্কিনি সাঁতরে তার হ্রদের পাশের বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করার পর তার শাস্তির মেয়াদ বাড়ায় জান্তা সরকার।
এদিকে প্রতারণার অভিযোগে গত ৯ নভেম্বর দেশটিতে দুই দশকের মধ্যে প্রথম অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করে এনএলডি।
তবে সুচির দলের আবারও জয়ের আশঙ্কায় জান্তা সরকার আগেই তার মুক্তির দিন ধার্য করে ১৩ নভেম্বর।
বাংলাদেশ স্থানীয় সময়: ১১৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১০