ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

আন্তর্জাতিক

অর্ধ শতাব্দী পর স্বামী-স্ত্রীর দেখা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:০৫, জুলাই ২৬, ২০১৩
অর্ধ শতাব্দী পর স্বামী-স্ত্রীর দেখা

ঢাকা: পার্কের বেঞ্চে বসে ফিক ফিক করে হাসছেন ৮৯ বছর বয়সী লি সুন-সাং ও তার স্ত্রী কিম ইউন-হায়ে। হাসবেনই তো, বিয়ের পর ছাড়াছাড়ি হয়েছিল তাদের, অর্ধ শতাব্দীর বেশি সময় পর বৃহস্পতিবার ফের মিলন হলো।

ছাড়াছাড়িটা হয়েছিল দুই কোরিয়ার যুদ্ধের কারণে। কিম মনে করেছিলেন, ১৯৫০ থেকে ১৯৫৩ সালের কোরীয় যুদ্ধে মারাই গেছেন তার স্বামী।

বিধবার মতো জীবন যাপন করছিলেন তিনি। দিন যাচ্ছিল এভাবেই। কিন্তু ২০০৪ সালে একটি ফোনকল কিমের জীবনযাপনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

চীন থেকে ২০০৪ সালে কিমের কাছে একটি ফোনকল আসে। তিনি মনে করেছিলেন, তার কাছে টাকা-পয়সা চেয়ে কেউ ফোন করে থাকবেন। বিগত বছরগুলোতে এরকম অনেক ফোনকল পেয়েছিলেন তিনি। তাই ওই কলটির প্রতিও তেমন গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না।

কিন্তু যখনই ফোন রিসিভ করে অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে আসা কণ্ঠস্বরটা শুনতে পেলেন, নিজেকে আর বিশ্বাস করতে পারছিলেন না কিম। ফোনটি যে অন্য কারও নয়, তার হারিয়ে যাওয়া স্বামীর।

ফোনে স্বামীকে কিম জিজ্ঞেস করেন, ‘আসলে তুমি বেঁচে আছ?’ উত্তর আসে, ‘হ্যাঁ, আমি জীবিত’।

এরপর তিনি আরও কতগুলো প্রশ্ন করেন স্বামীর দাবিদার ফোনকারীকে, যেমন অমুক-অমুককে চেন। সবগুলোর উত্তর নির্ভুলভাবে দেয়ার পরেই ফোনকারীকে চিনতে পারেন কিম।

কিন্তু যখন তারা সাক্ষাৎ করলেন, একে অপরকে তেমন একটা পরিচিত মনে হচ্ছিল না তাদের। হবেই বা কী করে, শুকিয়ে তো কৃশকায় বনে গেছেন লি, টলতে টলতে পথ চলেন।

অন্যদিকে ভালোমন্দ খেয়ে বেশ মোটাসোটা হয়েছেন কিম। লির বিশ্বাসই হচ্ছিল না কিম তার সহধর্মিনী।

কিম জানান, তিনি নাক দেখেই শনাক্ত করেছেন স্বামীকে। স্ত্রীর চেহারা সম্পর্কে রসিকতা করে লি বলেন, ‘ওকে দেখেতো মনে হচ্ছিল আগের সময়ের জমিদারনী। সব দক্ষিণ কোরীয় না খেয়ে মারা যাচ্ছে, আর আমেরিকানরা সব চাল নিয়ে যাচ্ছে, শুধু পঁচা আটাগুলো দিয়ে যাচ্ছেন-এমন অপপ্রচার শুনে তো আমি বিশ্বাস করেছিলাম সে মারা গেছে। ’

লি বলেন, ‘আমরা একে-অপরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলাম’।

১৯৫৩ সালে যুদ্ধবিরতি চুক্তি সইয়ের দুদিন আগে লি সুন-সাংকে উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনীর আটক করে। তিনি যুদ্ধশিবিরের একটি কারাগারে সাড়ে তিন বছর কাটান। এরপর তাকে উত্তর কোরিয়ার বিপজ্জনক কয়লা খনির স্থান অজিতে পাঠানো হয়। অজিতে গানপাউটার উৎপাদিত হয়। সেখানে তিনি ফের বিয়ে করেন, বাচ্চা-কাচ্চায় আসে নতুন সংসারে। কিন্তু যুদ্ধের আগের জীবন কখনও ভুলতে পারেননি তিনি।

তিনি বলেন, “উত্তর কোরিয়ার জীবন ছিল কঠিন। তাই আমি আমার নিজ শহরের কথা ভাবতাম। যদিও আমি বিশ্বাস করতাম আমার স্ত্রী ‍মারা গেছে। আমি সবসময় বিশ্বাস করতাম একদিন আমি ফিরব। ’

কয়েক দশক পর ২০০৪ সালে উত্তর কোরিয়ার বাইরে লোক পাঠানো ও ভেতরের প্রবেশ করানোর দালাল চক্রের একজনের সঙ্গে পরিচয় হয়। ওই ব্যক্তি কিমের কবর দেন লিকে।

লি বলেন, ‘সে আমাকে বলে যে কিম ইউন-হায়ে ও আমার ছেলে চীনে রয়েছে, তারা অনেক টাকা পয়সার মালিক। টাকা পয়সা নিয়ে ভালো জীবন যাপনের জন্য উত্তর কোরিয়ায় (নিজ শহরে) ফিরে যাওয়া উচিত। ’

সেই সময়ের ৭৭ বছর বয়সী লি ২০ হাজার উত্তর কোরীয় মুদ্রা ওন (প্রায় ১৫০ মার্কিন ডলার) জমা করেন। সিগারেট বিক্রি করে কষ্টে এ টাকা জমা করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘উত্তর কোরিয়ায় এটাই অনেক টাকা। এটা দিয়ে আপনি একটি ছোট বাড়ি কিনতে পারবেন। আমি আমার স্ত্রীকে টাকাগুলো দিলাম এবং বললাম আমি ওক (বাদাম জাতীয় ফল) পারতে যাচ্ছি। আমি দু-তিন দিনের মধ্যে ফিরব। এভাবেই আমি বাড়ি ছাড়লাম। ’

বাড়িতে ফেরার কথা বলেছিল, কিন্তু আর ফিরেনি সে।

যে পরিবারকে ছেড়ে এসেছে সে সম্পর্কে বলতে চাইলেন না তিনি কিছু। কিমকে তিনি বলেন, ‘আমি এখন খুশি। তুমি আমার স্ত্রী। ’

লির জীবনের এই তিক্ত অভিজ্ঞতা কোরিয়া দ্বিখণ্ডিতের শিকারদের অনেকের জীবনের বাস্তবতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫২ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর-eic@banglanews24.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।