ঢাকা: অনেক আগ থেকেই গুজব রয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কর্মসূচিতে গোয়েন্দাবৃত্তি চালিয়ে আসছে মার্কিন প্রশাসন। এতোদিন পর্যন্ত সেটা গুজব থাকলেও এবার হাতেনাতে গোয়েন্দাবৃত্তির প্রমাণ পেয়েছেন স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
বিপজ্জনক পরিবেশে কর্মবিরোধী যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন মানবাধিকার সংগঠন ইউএসএএস’র আইনজীবী জেফ্রে লাইট ও শ্যন কানাভান জানিয়েছেন, রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশের পোশাক কারখানাগুলোর সঙ্গে ব্যবসা বন্ধের দাবিতে ইউএসএএস যে বিক্ষোভ করেছিল সেখানে নারীর ছদ্মবেশে অনুপ্রবেশ করেন ওয়াশিংটন ডিসি মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মকর্তা নিকোল রিজ্জি।
ইউএসএএস’র আইনজীবীরা বলেন, কলম্বিয়া জেলার সরকারি কর্মকর্তাদের পরিচিতি তালিকায় পাওয়া তথ্য অনুসারে ২০০৩ সাল থেকে ওয়াশিংটন মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগে কাজ করছেন তরুণ রিজ্জি।
গোয়েন্দা রিজ্জিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কল্যাণেই চিহ্নিত করা গেছে বলে জানান তারা।
ইউএসএএস জানায়, অধিকার কর্মী ও ইনস্টিটিউট ফর পলিসি স্টাডিজের ব্যবস্থাপক লেসি ম্যাকঅলে বেশ কয়েক বছর ধরে ‘মিসি’ নাম্নী এক বিক্ষোভকারীকে ছদ্মবেশী গোয়েন্দা বলে সন্দেহ করেন। কারণ, তাকে সব বিক্ষোভ-সমাবেশেই দেখা যায়, অথচ কেউ তাকে চেনে না। তখন অবশ্য সন্দেহ প্রমাণের জন্য ম্যাকঅলের কাছে কোনো তথ্য-উপাত্ত ছিল না। তাই চুপ থাকেন তিনি।
কিন্তু ২০১২ সালের নভেম্বরে পাওয়া যায় রিজ্জির আসল পরিচয়। একদিন বারে বসে নাস্তা করছিলেন ম্যাকঅলে। তখন এক বন্ধু ম্যাকঅলকে ‘স্নাফটেস্টিক’ নামের একজন টুইটার ব্যবহারকারীর কথা বলেন। টুইটারে ‘স্নাফটেস্টিক’র ছবি দেখে ম্যাকঅলে তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হন, ‘মিসি’ বলে তিনি যেই তরুণী বিক্ষোভকারীকে সন্দেহ করে আসছেন ‘স্নাফটেস্টিক’ নামের এই তরুণ তিনিই। ম্যাকঅলের বন্ধু তাকে জানান, এই ব্যক্তি সর্বদা টুইটারে পুলিশ জীবনের ব্যস্ততা নিয়ে পোস্ট করতো।
ম্যাকঅলে বলেন, তারপর ২০১৩ সালের ২১ মার্চ কানাডা দূতাবাসের সামনে একটি বিক্ষোভ কর্মসূচিতে ফের ‘মিসি’কে দেখেন তিনি। তারপরই আইনজীবী বন্ধু জেফ্রে লাইটকে নিয়ে ‘মিসি’র বিরুদ্ধে তদন্তে নামেন ম্যাকঅলে।
ইউএসএএস জানায়, রানা প্লাজা ধসের পর বিক্ষোভ কর্মসূচিতে গোয়েন্দার অনুপ্রবেশ নিয়ে তুমুল বিতর্ক হলেও প্রশাসন আমলে না নেওয়ার ভান করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্নাফটেস্টিক, মিসি ও রিজ্জি একই ব্যক্তি বলেই নিশ্চিত হয় ইউএসএএসের তদন্তে।
মানবাধিকার সংগঠন ইউএসএএস আরও জানায়, ওয়াশিংটন ডিসির সকল সরকারি কর্মকর্তার পরিচিতি ঘেঁটে দেখা যায়, নিকোল নামে দু’জন কর্মকর্তার মধ্যে ফেসবুকের ‘নিকোল রিজ্জি’ নামধারী ব্যক্তি ও টুইটারের ‘স্নাফটেস্টিক’র ব্যক্তির মধ্যে সম্পূর্ণ মিল রয়েছে। আর স্নাফটেস্টিক যদি ‘মিসি’ হন তাহলে মিসিই পুলিশ কর্মকর্তা নিকোল রিজ্জি।
চতুর পুলিশ কর্মকর্তা ‘রিজ্জি’ নিজেকে তরুণী ‘মিসি’ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর কার্যক্রমেই তিনি ধরা পড়ে যান।
রিজ্জির গোয়েন্দা কার্যক্রমসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কর্মসূচিতে গোয়েন্দা তৎপরতা বন্ধ করতে একটি মামলা দায়ের করেছে ইউএসএএস।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৩
সম্পাদনা: হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর- eic@banglanews24.com