ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

তেহেলকা থেকে সোমা চৌধুরীরও পদত্যাগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৩
তেহেলকা থেকে সোমা চৌধুরীরও পদত্যাগ সোমা চৌধুরী ও তরুণ তেজপাল

ঢাকা: ভারতের প্রভাবশালী সংবাদ সাময়িকী ‘তেহেলকা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তরুণ তেজপালের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ লুকানো চেষ্টার ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করলেন সাময়িকীটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সোমা চৌধুরীও। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২৫ নাগাদ তিনি পদত্যাগ করেন।


 
বৃহস্পতিবার সহকর্মীদের কাছে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় সোমা চৌধুরী বলেন, আমি চাই না আমার ন্যায়পরায়ণতা প্রশ্নবিদ্ধ হোক। গত এক সপ্তাহে অভিযোগ উঠেছে যে, আমি যৌন হয়রানির অভিযোগ লুকানোর চেষ্টা করছি ও আমার নারীবাদী অবস্থান থেকে সরে গিয়েছি।

তিনি বলেন, আমি হয়তো আরও ভিন্নভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতাম। তবে আমি লুকানোর অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছি।

সপ্তাহখানেক আগে অভিযোগ ওঠে, গোয়ায় একটি হোটেলে অনুষ্ঠান চলাকালে লিফটের মধ্যে টেনে নিয়ে গিয়ে এক নারী সহকর্মীর ওপর যৌন নির্যাতন করেন তেজপাল।

প্রথম দিকে অভ্যন্তরীণভাবে ই-মেইল চালাচালিতে এই খবর সীমাবদ্ধ থাকলেও তেহেলকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সোমা চৌধুরীর কাছে পাঠানো ওই নারী সাংবাদিকের অভিযোগ ফাঁস হতে থাকে। ঘটনা প্রকাশ্যে চলে আসার পর তেজপালের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা দায়ের করে গোয়া পুলিশ।

অর্থাৎ বেকাদায় তেহলকার প্রতিষ্ঠাতা তথা `স্টিং কিং` তরুণ তেজপাল। গোয়ার সেই হোটেলে লিফটে ওঠার ঠিক আগে সিসিসিটিভি ফুটেজ মিলল। সেই ভিডিও ফুটেজে দেখা গিয়েছে তেজপাল এক মহিলা সাংবাদিকের সঙ্গে লিফটে উঠছেন। তদন্তকারী এক অফিসার এই খবর জানিয়ে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে পরিষ্কার ৭ নভেম্বর, হোটেলে ব্লক ৭ এর বাইরের লিফটে কিছু একটা গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটেছিল।

তিনি আরও বলেন, ``সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে হলিউড অভিনেতা রবার্টো দি নেরো ও ধর্ষণের অভিযোগ আনা সেই তরুণী সাংবাদিকের সঙ্গে রাত ৯টা নাগাদ তরুণ তেজপাল হোটেলর রুমে ঢুকছেন। সেই সময় তেজপালের হাত ছিল সেই তরুণী সাংবাদিকের ঘাড়ে। ``

কিছুদিন আগে তেহলকার এক সাংবাদিক অভিযোগ করেন, গোয়ার একটি হোটেলের লিফটে তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছেন পত্রিকার সম্পাদক তরুণ তেজপাল৷কিন্তু লিফটে সিসিটিভি না থাকায় প্রমাণ করার কঠিন হচ্ছিল। কিন্তু এই সিসিটিভি ফুটেজের পর তরুণী সাংবাদিকের অভিযোগ আরও পরিষ্কার হল।

এই ঘটনায় সোমা চৌধুরীর ভূমিকা নিয়ে আগেই প্রচুর সমালোচনা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে তেহেলকা সম্পাদককে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন তিনি। এর সঙ্গেই অভিযোগ ওঠে মিথ্যা কথা বলে নিগৃহীতা তরুণীর চরিত্র হননের চেষ্টা করছেন তিনি।

অন্যদিকে, গোয়া পুলিশের সামনে তেহলকা সম্পাদকের হাজিরা দেওয়ার `ডেডলাইন` শেষ হচ্ছে বৃস্পতিবার। তিনি বলেন, তেজপালের কাণ্ডকে যৌন হয়রানি বলে মনে না করে তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন সোমা চৌধুরী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোমা চৌধুরীর উচিত ছিল ওই ঘটনা পুলিশকে জানানো। তবে সোমা চৌধুরী জানিয়েছেন, ওই নারী সাংবাদিক এই ঘটনার অভ্যন্তরীণ সমাধান চেয়েছেন বলেই তিনি পুলিশকে কিছু জানাননি।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ নভেম্বর তেজপালের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির মামলা দায়ের করে গোয়া পুলিশ। এরপর অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই সোমবার আগাম জামিনের আবেদন করেন তেজপাল। পাশাপাশি নিজের গ্রেফতারিতে নিষেধাজ্ঞা জারির জন্যও আদালতে আবেদন জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় গোয়া পুলিশ কার্যালয়ে গিয়ে ওই ঘটনার জবানবন্দি দিতে ৫০ বছর বয়সী তেজপালকে নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এর আগে, মঙ্গলবার গোয়া পুলিশের কাছে নির্যাতিত ওই নারী সাংবাদিক ঘটনার পূর্ণ বিবরণ দেন (রেকর্ড স্ট্যাটমেন্ট)। বুধবারও ঘটনার বিবরণ আদালতে উপস্থাপন করেন তিনি।

গোয়া পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ওই নারী সহকর্মীর বিবরণগুলো শুনিয়ে বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে তেজপালের কাছ থেকে জবানবন্দি নেওয়া হবে।

পুলিশ সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, যেহেতু তেজপাল নিজেই নারী সহকর্মীর কাছে পাঠানো ই-মেইলেই অপরাধ স্বীকার করেছেন সেহেতু তার বিরুদ্ধে ‘স্পষ্ট’ মামলা দায়ের করা হয়েছে।

নারী সহকর্মীর কাছে পাঠানো ই-মেইলে ‘অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার সঙ্গে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্কে জড়ানোর’ কথা স্বীকার করেন তেজপাল। অবশ্য, নারী সাংবাদিক দাবি করেছেন, তেজপাল ‘যৌন নির্যাতনই’ চালিয়েছেন তার ওপর।

সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, স্পষ্ট মামলা বলে ‘ধর্ষণ’ মামলাই বুঝিয়ে থাকতে পারে পুলিশ। যদি ধর্ষণ মামলা দায়ের হয় তবে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে পারেন ভারতের প্রভাবশালী সাংবাদিক তেজপাল।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।