ঢাকা: পূর্ব চীন সাগরের বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জে নবঘোষিত আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চলে (এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন) যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে চীন।
বৃহস্পতিবার রাতে দেশটির বিমানবাহিনীর কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানিয়েছে, ৮টি দীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত নতুন এই এয়ার ডিফেন্স জোনে পাঠানো বেশ কিছু যুদ্ধবিমান এখন সেখানে পরিক্রমণ করছে এবং যেকোনো ধরনের জরুরি প্রতিরক্ষা পদক্ষেপ গ্রহণে প্রস্তুত।
অবশ্য, শনিবার এই অঞ্চলে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমানও চক্কর দিয়েছে।
চীনা বিমান বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল শেন ঝিনকের উদ্ধৃতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, বেশ কিছু যুদ্ধবিমান ও দ্রুতগামী সতর্কতা প্রদানে সক্ষম একটি বিশেষ বিমান নিয়মিত মহড়ার অংশ হিসেবে সেখানে পাঠানো হয়েছে।
শেন ঝিনক জানান, দেশের বিমানবাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নিতে সর্বদা প্রস্তুত।
তিনি আরও জানান, বিমানগুলি আকাশ প্রতিরক্ষা অঞ্চলের লক্ষ্যবস্তুতে আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ কাজ চালিয়ে যাবে।
এর আগে বৃহস্পতিবার জাপান জানায়, চীনের নতুন বিতর্ক সত্ত্বেও আগের মতোই পূর্ব চীন সাগর এলাকায় পর্যবেক্ষণ চালিয়েছে তাদের বিমানবাহিনী। তবে কখন এই পর্যবেক্ষণ কাজ চালিয়েছে তা নির্দিষ্ট করে জানায়নি তারা।
পূর্ব চীন সাগরে ৮টি দীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত বিতর্কিত ও বিস্তীর্ণ এলাকাটি চীন, জাপান, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়া নিজেদের এলাকা বলে দাবি করে। চীনের কাছে সেনকাকু নামে পরিচিত দ্বীপপুঞ্জটিকে দিয়াওউ বলে সম্বোধন করে থাকে জাপান।
নতুন এই বিতর্ক চীন সাগরসহ পূর্ব এশিয়ায় বেশ উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছে। মহড়া-পাল্টা মহড়ার কারণে মনে করা হচ্ছে হয়তো অপরিকল্পিতভাবেই সামরিক রূপ নিতে পারে এ ঘটনা।
এর আগে, বুধবার পূর্ব চীন সাগরের বিতর্কিত দ্বীপপুঞ্জের ওপর দিয়ে চক্কর মারে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিমান বি-৫২। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনকে আগ থেকেও কিছু জানানো হয়নি বলে যুক্তরাষ্ট্রের এ আচরণকে ‘প্রতিরক্ষা আইনের লঙ্ঘন’ বলে আখ্যা দেয় বেইজিং।
তবে পেন্টাগনের মুখপাত্র স্টিভ ওয়ারেন জানান, সাধারণ বিধি অনুযায়ীই বিমান চক্কর দিয়েছে। আমরা সাধারণ নিয়ম অনুসরণ করেছি। এ নিয়মের মধ্যে ফ্লাইট পরিকল্পনা আগে থেকে নথিভুক্ত করার দরকার নেই।
গত শনিবার ‘জরুরি প্রতিরক্ষা বিধি’ মেনে চলতে ওই এলাকাকে ‘আকাশ প্রতিরক্ষা শনাক্তকরণ অঞ্চল’ (এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশন জোন) হিসেবে ঘোষণা দেয় চীন।
চীনের এই বিতর্কিত পদক্ষেপের জবাবে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনঝো অ্যাবে একে ‘বিপজ্জনক’ হিসেবে অভিহিত করেন।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে জাপান তার নাগরিকদের কাছ থেকে ওই এলাকার তিনটি দ্বীপ কিনে নেয়। এ ঘটনায় চীনে জাপানি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেন চীনারা। জাপানি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলা চালায় অনেক উগ্র চীনা জাতীয়তাবাদী নাগরিক।
এ বছরের সেপ্টেম্বরে জাপান জানায়, তাদের সীমায় কোনো অপরিচিত বিমান ঢুকলে গুলিবর্ষণ করা হবে। জবাবে চীন জানায়, জাপানের গুলিবর্ষণের যে কোনো ধরনের চেষ্টাকেই যুদ্ধপ্রচেষ্টা বলে গণ্য করা হবে।
গত মাসে জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইতসুনোরি ওনোদেরা অভিযোগ করে বলেন, চীন সাগরের বিরোধপূর্ণ দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে চীনের আচরণের কারণে ওই অঞ্চলের শান্তি ঝুঁকির মুখে পড়বে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের জলসীমায় চীনের অনুপ্রবেশ শান্তি প্রতিষ্ঠা বিঘ্নিত ও জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে।
এ বছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দ্বীপগুলো জাপান চুরি করেছে বলে অভিযোগ করে চীন। এর প্রত্যুত্তরে জাপান বলে, দ্বীপ নিয়ে চীন মিথ্যাচার করছে। আর দু’দেশকে ঠাণ্ডা মাথায় এ সংকট নিরসনের আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
এখন এই ইস্যু দু’দেশের জাতীয়তাবাদী আবেগে পরিণত হয়েছে। আর এক্ষেত্রে যে কোনো পক্ষেরই ছাড় দেওয়াও ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।
৮টি ছোট দ্বীপ নিয়ে সেনকাকু বা দিয়াওউ দ্বীপপুঞ্জ গঠিত। ধারণা করা হয়, এ এলাকায় সাগর তলদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে। আর এ অমূল্য সম্পদের জন্যই কোনো দেশই এ এলাকার মালিকানা ছাড়তে রাজি নয়।
জাপানের দাবি করে, চীনকে পরাজিত করে তাইওয়ানে উপনিবেশ স্থাপনের মাধ্যমে ১৮৯৫ সালের জানুয়ারিতে তারা দ্বীপ এলাকাটির মালিকানা অর্জন করেছে। সে সময় থেকেই ওই এলাকা ‘নানসেই শোতো’ দ্বীপপুঞ্জের অংশ।
এদিকে চীনের দাবি, ওই এলাকাটি প্রাচীনকাল থেকেই তাদের ভূখণ্ডের অংশ। জাপান ১৮৯৫ সালে অবৈধভাবে এলাকাটি দখল করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীন ওই ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৪৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৩