ঢাকা: ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সকল কূটনীতিককে তাদের পরিচয়পত্র জমা দিতে বলেছে নয়াদিল্লি।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, বৃহস্পতিবার ভারতের নিউইয়র্ক কনস্যুলেটের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়েকে বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশির পর হাজতে পাঠিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি এই পদক্ষেপ নিলো।
সরকারি নির্ভরযোগ্য সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এনডিটিভি জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের পরিচয়পত্র জমা দিতে বলেছে নয়াদিল্লি।
এর আগে, মঙ্গলবার সকালেই ‘জাতীয় সংহতির’ স্বার্থে ভারত সফররত মার্কিন কংগ্রেসের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানান ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল কংগ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিনধে। মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আগামী নির্বাচনের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদিও।
নারী কূটনীতিকের সঙ্গে এমন আচরণকে ‘ঘৃণ্য ও বর্বর’ উল্লেখ করে কংগ্রেস প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সোমবার নির্ধারিত বৈঠক বাতিল করেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন। বৈঠক বাতিল করেন লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারও।
গত বৃহস্পতিবার ভারতের নিউইয়র্ক কনস্যুলেটের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়েকে বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশির পর হাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে জামিনের আগে মাদকসেবীদের সঙ্গে হাজতবাসে বাধ্য হন দেবযানী।
দেবযানীর বিরুদ্ধে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগের জেরেই এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় সংবাদ মাধ্যমগুলো।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে দাবি করা হয়, ভিসা জালিয়াতির মাধ্যমে সঙ্গীতা রিচার্ড নামে এক ভারতীয় পরিচারিকাকে আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে দেবযানীকে আটক করা হয়।
পরে ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলারে জামিনে মুক্ত হন দেবযানী।
তবে উচ্চ পর্যায়ের কূটনীতিকের সঙ্গে এমন আচরণ করায় যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বেজায় চটেছে ভারত।
এ ব্যাপারে দেবযানী কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, বিষয়টি চরম অবমাননাকর মনে করছে নয়াদিল্লি।
সরকারি সূত্র জানিয়েছে, মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যেই এ আচরণের ‘সমুচিত পদক্ষেপ’ নেওয়ার কথা ভাবছে ভারত।
বলা হয়েছে, ‘কূটনীতিকের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ অগ্রহণযোগ্য বলে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে মার্কিন প্রশাসনকে’।
দেবযানীর বাবা সাবেক সরকারি কর্মকর্তা উত্তম খোবরাগাড়ে জানান, বিষয়টি জানাতে তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের সঙ্গে দেখা করবেন।
উত্তম খোবরাগাড়ে সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আমার মেয়ে নির্ভীক, কিন্তু আমি শঙ্কিত। এ ঘটনা চোখের সহনশীলতাকেও হার মানিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা সালমান খুরশিদকেও মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া জানাতে তাদের সঙ্গে বৈঠক করার বিষয়টি বিবেচনা করছেন খুরশিদ।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে নিজের মেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে কূটনীতিক দেবযানীকে বিবস্ত্র করে তার দেহ তল্লাশি করা হয় এবং প্রকাশ্যেই তাকে হাতকড়া পরিয়ে হাজতে নেওয়া হয়।
ওই ঘটনার একদিন পর পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েলকে তলব করেন এবং এ ঘটনাকে ‘অগ্রহণযোগ্য আচরণ’ আখ্যা দিয়ে এর জোরালো প্রতিবাদ জানান।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে করা প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র নোয়েল ক্লে’র পক্ষ থেকে বলা হয়, দেবযানীকে আটকের সময় সর্বোচ্চ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে।
এছাড়া, আরও কোনো তথ্য জানার থাকলে প্রশাসনিক বাহিনী মার্শালস’র সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তবে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি মার্শালস’ কর্তৃপক্ষ।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তা ক্লে দাবি করেন, ভিয়েনা কনভেশনের আওতায় কূটনীতিক সম্পর্কের নিয়ম অনুযায়ী ভারতের ডেপুটি কনসাল জেনারেল সবরকমের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন।
তবে, এ আচরণের মাধ্যমে ভিয়েনা কনভেনশনের ৪১ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। ওই অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো কূটনীতিক যদি ‘মারাত্মক অপরাধ’ করে থাকেন, তবেই কেবল তাকে গ্রেফতার করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩
সম্পাদনা: হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর