ঢাকা: নারী কূটনীতিককে বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশির পর গ্রেফতারের বিষয়ে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেননকে ফোন করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে দিয়ে ‘দুঃখ প্রকাশ’ করালেও এবার স্ববিরোধী অবস্থান নিল যুক্তরাষ্ট্র!
নারী কূটনীতিক দেবযানী খোবরাগাড়েকে হেনস্তা ও গ্রেফতারের বিষয়ে ক্ষমা চাইতে এবং তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করতে ভারতের দু’টি দাবিই নাকচ করেছে মোড়ল রাষ্ট্রটি।
শুক্রবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মারি হার্ফের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো এ খবর জানিয়েছে।
ভারতের পাল্টা কড়া জবাবে গত বুধবার শিব শঙ্কর মেননের সঙ্গে ফোনালাপ করে জন কেরি ‘দুঃখ প্রকাশ’ করলেও মারি হার্ফ জানান, দু’টো দাবির কোনোটিই মানতে পারবে না যুক্তরাষ্ট্র।
মারি হার্ফ বলেন, আমরা এসব অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। এসব অভিযোগের ব্যাপারে আমরা পিছু হটতে পারবো না। আবারও বলছি, এ ঘটনা সত্যিই আইন প্রয়োগের ব্যাপার।
নারী কূটনীতিক দেবযানী এই অভিযোগ থেকে খালাস পাবেন কিনা এবং আদালতে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাফ ‘না’ বলে দেন মারি হার্ফ।
কূটনীতিকের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা যায় কিনা এ ব্যাপারটি খণ্ডন করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, আমি এই অভিযোগের ব্যাপারে বিস্তারিত জানি না, এবং আমি এটাও জানি না এসব অভিযোগ প্রত্যাহার করা যায় কিনা। আমি এটাও বলছি না যে, কারও বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার হতে পারে। আবার মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা হতে পারে এমন কিছুও বলা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই এ ধরনের অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিই। তাছাড়া এ বিষয়টি আমাদের সংশ্লিষ্ট নয় যে, আমরা এটাকে বিচারের মুখোমুখি করবো কি করবো না এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করবো।
ভারতের সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরম্যান ও ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের মধ্যকার ফোনালাপের পর এই অবস্থান তুলে ধরলেন মারি হার্ফ।
এছাড়া, জন কেরি ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ফোনালাপ হতে পারে-ভারত সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া এমন বিবৃতি অস্বীকার করে মারি হার্ফ বলেন, তাদের মধ্যে (কেরি ও সালমান খুরশি) ফোনালাপের কোনো পরিকল্পনা নেই যুক্তরাষ্ট্রের।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ভারতের নিউইয়র্ক কনস্যুলেটের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবযানী খোবরাগাড়েকে প্রকাশ্যে হাতকড়া পরিয়ে হাজতে নিয়ে যাওয়ার পর বিবস্ত্র করে দেহ তল্লাশি করে মার্কিন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা মার্শালস’।
দেবযানীর দেহ তল্লাশি ও গ্রেফতারের পর মাদকসেবীদের সঙ্গে হাজতবাসে বাধ্য করানোর ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় ভারত।
ক্ষুব্ধ হয়েই ক্ষান্ত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থাও নেয় ভারত সরকার। নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ ব্যারিকেড উঠিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। বিশেষ আমদানি অগ্রাধিকার ও এয়ারপোর্ট পাস প্রত্যাহারসহ বেশ কিছু কূটনৈতিক সুবিধা স্থগিত করে ভারত।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিশেষ বৈঠকও বাতিল করেন রাহুল গান্ধী, নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে লোকসভার স্পিকার মীরা কুমার প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৩
সম্পাদনা: হুসাইন আজাদ, নিউজরুম এডিটর