ঢাকা : উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ দাবি করেছেন, তার কাছে যুক্তরাষ্ট্রের আরও অনেক গোপন নথি আছে। তার কিংবা উইকিলিকসের যদি কিছু হয়, তবে তা ফাঁস করে দেওয়া হবে বলে তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডকের নিউজ করপোরেশনের সুনির্দিষ্ট গোপন নথিগুলো উইকিলিকসে জমা আছে বলে তিনি দাবি করেছেন। এগুলোকে তিনি ‘ইনস্যুরেন্স ফাইল’ বা ‘রক্ষাকবচ’ বলে উল্লেখ করেন।
অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া আমেরিকান নাগরিক রুপার্ট মারডক ‘নিউজ করপোরেশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাহী। ফোর্বস ম্যাগাজিনের জরিপে তিনি পৃথিবীর ১৩ নম্বর ক্ষমতাবান ব্যক্তি। এছাড়া টাইমের চোখে পৃথিবীর ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় তিনি তিনবার স্থান পেয়েছেন। তার নিউজ করপোরেশনের মাধ্যমে তিনি সৃষ্টি করেছেন ফক্স ব্রডকাস্টিং কোম্পানি, ওয়াল স্ট্রিট জর্নালসহ বেশকিছু প্রভাবশালী গণমাধ্যম।
অ্যাসাঞ্জ আরও দাবি করেন, নিউজ করপোরেশন ছাড়াও উইকিলিকসের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ শ’রও বেশি গোপন কূটনৈতিক নথি আছে।
বুধবার ব্রিটেনের রাজনৈতিক ম্যাগাজিন নিউ স্টেটম্যানের সাংবাদিক জন পিলগারের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব দাবি করেন। ১৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার এই ম্যাগাজিনের নতুন সংখ্যায় অ্যাসাঞ্জের সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হবে।
সাক্ষাতকারে অ্যাসাঞ্জ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ শ’ চারটি গোপন কূটনৈতিক নথি উইকিলিকসে জমা রাখা হয়েছে। এছাড়া মারডক ও তার নিউজ করপোরেশনের গোপন নথিও উইকিলিকসে জমা আছে। ’
সুনির্দিষ্ট এই নথিগুলোকে তিনি ‘ইনস্যুরেন্স ফাইল’ বা ‘রক্ষাকবচ’ বলে উল্লেখ করে বলেন, এগুলো ফাঁস করা হবে ‘যদি আমার কিংবা উইকিলিকসের কিছু হয়’।
উইকিলিকস গত নভেম্বরের শেষ দিকে গার্ডিয়ানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের আড়াই লাখ স্পর্শকাতর গোপন নথি ফাঁস করে। এসব গোপন কূটনৈতিক নথির মধ্য থেকে গার্ডিয়ান সাত শ’রও বেশি নথি প্রকাশ করে।
সুইডেনের দুই নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অস্ট্রেলিয়ায় জন্ম নেওয়া ৩৯ বছর বয়স্ক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। সম্প্রতি এ মামলায় সুইডেনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করা হলেও ১৬ ডিসেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান। অ্যাসাঞ্জের বিচারের জন্য হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছে সুইডেন। তবে তাকে হস্তান্তর করা হবে কিনা সে বিষয়ে আগামী ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেছেন ব্রিটেনের আদালত।
তার আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন, অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সুইডেনের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হলে তারা অ্যাসাঞ্জকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে।
অ্যাসাঞ্জের আইনজীবীরা আশঙ্কা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দিলে তাকে গুয়ানতানামো বে বা অন্য কোনো কঠিন কারাগারে রাখা হবে। এমনকি তাকে মৃত্যুদণ্ডও দেওয়া হতে পারে।
অ্যাসাঞ্জের বিরুদ্ধে ব্রিটেন, সুইডেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধপূর্ণ আচরণে বিশ্ব গণমাধ্যম আজ উদ্বিগ্ন বলে উল্লেখ করেছেন অ্যাসাঞ্জের বন্ধু বলে পরিচিত লন্ডনে বসবাসকারী অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা জন পিলগার।
সুইডেনের কাছে অ্যাসাঞ্জকে হস্তান্তর করা হবে কি-না সে বিষয়ে পূর্ণ শুনানির জন্য ব্রিটেনের আদালত ফেব্রুয়ারির ৭ ও ৮ তারিখ ধার্য করার পর অ্যাসাঞ্জ ঘোষণা করেন- যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ধরনের গোপন কূটনৈতিক নথি ফাঁস করার প্রস্তুতি নিচ্ছে উইকিলিকস।
বাংলাদেশ সময় : ০৭৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১১