ঢাকা: রোববার অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। দেশীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোর মতো এ নির্বাচন নিয়ে সরব ছিলো আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোও।
রোববার সন্ধ্যার পর থেকেই নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর সেগুলো তাৎক্ষণিকভাবে প্রচার করতে থাকে দেশীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো, কিন্তু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব প্রচারেই ব্যস্ত ছিলো বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলো। রোববার দিনগত রাতে ফলাফল প্রায় পুরোপুরি জানা গেলেও গুটিকয় সংবাদ মাধ্যম ছাড়া এই ফলাফল দেখা যায়নি প্রখ্যাত সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যম ফলাফল প্রকাশ করলেও সেখানে জুড়ে দিয়েছে সহিংসতার খবর। বিদেশি সংবাদ মাধ্যমগুলোয় প্রকাশিত বাংলাদেশের নির্বাচনের খবর পড়তে গেলে মনে হবে বুঝি, এ দেশের উপর ‘মহাপ্রলয়’ বয়ে গেলো!
নির্বাচন ও নির্বাচনী সহিংসতার খবর ফলাও করে প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি, রয়টার্স, দ্য টেলিগ্রাফ, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম সিএনএন, এপি, এবিসি নিউজ, ইয়াহু নিউজ, ভয়েস অব আমেরিকা, ফরাসি সংবাদ মাধ্যম এএফপি, কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা, চীনা সংবাদ মাধ্যম সিনহুয়া, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম পিটিআই (রাষ্ট্রীয়), টাইমস অব ইন্ডিয়া, জি নিউজ, দ্য হিন্দু, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, ২৪ ঘণ্টা, নিউজ ইন্টারন্যাশনাল, পাকিস্তানি সংবাদ মাধ্যম ডন, রাশিয়ান সংবাদ মাধ্যম ভয়েস রাশিয়া, সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম স্ট্রেইট টাইমস, চ্যানেল নিউজ এশিয়াসহ খ্যাতনামা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসির এশিয়া পাতায় শীর্ষ খবর হিসেবে প্রকাশ হয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচনের খবর। তবে কেবল নির্বাচনী সহিংসতার খবর প্রচার করেই ক্ষ্যান্ত দিয়েছে প্রভাবশালী এই সংবাদ মাধ্যম। নির্বাচনের ফলাফল জানানোর প্রয়োজনই মনে করেনি তারা! এ জন্য সোমবার দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্তও নির্বাচনের খবরটিতে বিরোধী দলের বর্জন ও নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতার খবরই থেকে গেছে!
নির্বাচনের ফলাফল পেয়ে দেশের মানুষ স্বস্তি প্রকাশ করলেও প্রায় অর্ধদিন ধরে ফলাফল না জানিয়ে সহিংসতার খবরই অনলাইনে ধরে রেখে নিজেদের নেতিবাচক আচরণেরই পুনঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা বিবিসি।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্স তাদের অনলাইন পেজের প্রথম পাতায় শীর্ষ চতুর্থ সংবাদ হিসেবে প্রচার করেছে বাংলাদেশের নির্বাচনকেন্দ্রিক সংবাদ।
নির্বাচনের ফলাফলে রোববার মধ্যরাতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ জিতে যাওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেলেও সোমবার দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্তও ‘জিততে যাচ্ছে’তে রয়ে গেছে এই খ্যাতনামা সংবাদ মাধ্যমটিতে।
বিবিসির মতো রহস্যজনকভাবে সহিংসতার খবর প্রচারে ব্যস্ত দেখা গেলো রয়টার্সকেও।
বিবিসি-রয়টার্সের মতো সহিংসতার খবর প্রচারে পিছিয়ে নেই যুক্তরাজ্যেরই আর এক জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএন তাদের অনলাইন সংস্করণের এশিয়া পেজের শীর্ষ দ্বিতীয় সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের নির্বাচনের খবর।
তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের দলীয় ক্যাডাররা স্কুলে হামলা চালালেও সেটাকে ‘বিক্ষোভকারীদের ভাঙচুর’ বলে প্রচার করেছে সিএনএন।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, সিএনএন এর নির্বাচনের খবরটিতে সর্বশেষ আপডেট লেখা ৪ জানুয়ারি। অথচ বিশ্বের সচেতন নাগরিকরা এখন ৬ জানুয়ারির দিন অতিবাহিত করছেন!
জামায়াতের ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ সংবাদ প্রচারের জন্য অভিযুক্ত করা হয়ে থাকে কাতারভিত্তিক বিতর্কিত সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরাকে।
স্বাভাবিকভাবেই সহিংসতার খবর প্রচারে কোনোভাবেই পিছিয়ে থাকলো না তারাও।
সংবাদে ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনে জিততে কোনো বেগ পেতে হয়নি’ কথাটি উল্লেখ করার পাশাপাশি সহিংসতা উস্কে দিতে আল জাজিরা লিখেছে, এ ফলাফল বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কটকে আরও ঘনীভূত করবে!
পুরো ১৪৭ আসনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হলেও নেতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়ে সিনহুয়া প্রকাশ করলো ১৬০টি ভোটকেন্দ্রের ভোট স্থগিত হওয়ার খবর!
এছাড়া, সোমবার দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী ফলাফলের খবর জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি চীনের এই সংবাদ মাধ্যমও!
আর ‘প্রহসনের ভোটগ্রহণের পর নরকে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ’ শিরোনাম করে বাংলাদেশের মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে ফরাসি সংবাদ মাধ্যম এএফপি।
ভোটগ্রহণের পর দেশের কোথাও সহিংসতার খবর পাওয়া না গেলেও ‘দেশকে নরকে’ পরিণত করতে বিএনপি-জামায়াত জোটকে সহিংসতায় উস্কানি দেওয়ার প্রয়াসই চালালো ফরাসি সংবাদ সংস্থাটি।
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো, সোমবার নাকি বাংলাদেশ নরকে পরিণত হয়েছে। কী অদ্ভুত প্রতিবেদন এএফপির!
তবে, সহিংসতার খবর খানিকটা থাকলেও পাঠকের চাহিদা পূরণে নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করেছে প্রায় সব ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমই।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম পিটিআই, টাইমস অব ইন্ডিয়া, জি নিউজ, ২৪ ঘণ্টা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, নিউজ ইন্টারন্যাশনালসহ প্রায় সব ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম নির্বাচনের ফলাফল যথাসময়ে প্রচারের চেষ্টা করেছে।
তবে রয়টার্সের বরাত দিয়ে সহিংসতার খবর প্রচার করেছে ১৯৭১ এর আগে বাংলাদেশকে শোষণ করা পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম ডন অনলাইন।
এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ পূর্ব এশীয় ও আরব সংবাদ মাধ্যমগুলো পশ্চিমা ‘প্রভাবশালী’ সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে বেশ প্রভাবিত হয়েছে বৈকি!
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৪
সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, আউটপুট এডিটর