ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

হুয়ের জন্য ওবামার নৈশভোজ কেন জটিল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১১
হুয়ের জন্য ওবামার নৈশভোজ কেন জটিল

ওয়াশিংটন: চীনের সফররত প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের সম্মানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বুধবার রাতে হোয়াইট হাউসে নৈশভোজের আয়োজন করেছেন। ১৩ বছরেরও বেশি সময় পর কোনো চীনা প্রেসিডেন্টের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় ভোজ আয়োজনের ঘটনা এটাই প্রথম।

খবর নিউইয়র্ক টাইমস ও এনডিটিভির।

এর মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কূটনৈতিক আচরণ ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে বিপদজনক এলাকায় প্রবেশ করবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে।
 
কেননা, এর আগে ১৯৯৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল কিনটনের সময়ে চীনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন ও ২০০৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সময় হু জিনতাওকে আমন্ত্রণ জানিয়ে অনেক বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন তারা।

আর অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েই হয়তো ওবামা প্রশাসন অর্থাৎ হোয়াইট হাউস আসন্ন এ নৈশভোজের বিষয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করছে না।

এমনকি মঙ্গলবার হোয়াইট হাউস কর্তৃপক্ষ নৈশভোজের খাবারের মেন্যু বা অতিথির তালিকা বিষয়েও কোনো তথ্য জানাননি। তবে চারদিকে এ নিয়ে চলছে বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা। এর মধ্য একটি হচ্ছে- আয়োজিত এ নৈশভোজে অভিনেতা জ্যাকি চ্যানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে হাউসের স্পিকার জন এ. বোয়েনার চ্যানের আমন্ত্রণের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

মূলত এশিয়ার উত্থানশীল শক্তি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারেই ওবামা এ নৈশভোজের আয়োজন করেছেন। তবে বাণিজ্য, মুদ্রাব্যবস্থা এবং মানবাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে দেশ দু’টির মধ্যে মত এবং দৃষ্টিভঙ্গির যে ব্যাপক অমিল আছে এ বিষয়ে উভয় দেশের প্রশাসনই অবগত।

এর মধ্যে সবচেয়ে অস্বস্তিকর বিষয় হচ্ছে মানবাধিকার বিষয়ে চীনের দৃষ্টিভঙ্গি। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ ২০১০ সালে শান্তিতে নোবেল জয়ী চীনের ভিন্নমতাবলম্বী লিউ জিয়াওবোকে দেশটিতে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে আটক করে রাখে। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজেও ২০০৯ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী যিনি জিয়াওবোর বন্দিত্বের বিরোধিতা করেছেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট বুশের তৎকালীন এশিয়া বিষয়ক পরামর্শক মাইকেল গ্রিন এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা এমন এক পরিস্থিতি তৈরি করেছে যেখানে একজন নোবেলজয়ী নেতা এমন এক নেতাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন যিনি আরেক নোবেলজয়ীকে কারাবন্দী করে রেখেছেন। কি বিব্রতকর!’ বুশের আমলে প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের যুক্তরাষ্ট্র সফর পরিকল্পনায় মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সাহায্য করেছিলেন গ্রিন।  

তবে নৈশভোজের বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা। এমনই এক যুক্তি দেখিয়ে ওবামার এক মুখপাত্র টমি ভিয়েটর বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সফরের ক্ষেত্রে এটি একটি প্রথাগত অভ্যর্থনা এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ’

ফলে লাল গালিচা অভ্যর্থনা জানানো হুয়ের সম্মানে শুধু নৈশভোজই নয় আরও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে তার আগমনকে সেনা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্মান জানানো হবে এবং একইসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ আর. বাইডেন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম কিনটন মধ্যাহ্ণ ভোজের আয়োজন করেছেন।

এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় তাকে নিয়ে বন্ধুর মতো রাস্তা দিয়ে হেঁটে বেড়ান ওবামা। একইসঙ্গে সাধারণ একটি দোকানে গিয়ে শুধু বার্গার দিয়ে মধ্যাহ্ণ ভোজ সারেন দুজন।

কিন্তু চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন প্রধান লক্ষ্য হওয়া সত্ত্বেও হু জিনতাওয়ের সঙ্গে যে বার্গার খাওয়া যাবে না সে বিষয়ে স্বয়ং ওবামাও নিশ্চিত।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।