ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মানবিক সাংবাদিক জেমস ন্যাশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪
মানবিক সাংবাদিক জেমস ন্যাশ

টাইম পত্রিকার ফটো সাংবাদিক জেমস ন্যাশ। সাংবাদিকতা জীবনের বেশিটা সময়ই কেটেছে বিশ্বের সেইসব স্থানে যেখানে যেতে চাইবে খুব কম মানুষই।

ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ যুদ্ধ বিগ্রহের বিশ্বে যুদ্ধক্ষেত্র, শরণার্থী শিবির, ভুমিকম্পে বিধ্বস্ত নগরী, বন্যায় ডুবে যাওয়া গ্রাম, দুর্ভিক্ষপীড়িত জনপদ এসবই তার বেছে নেওয়া কর্মক্ষেত্র। এসব করতে করতে টাইমের সঙ্গেই কাটিয়ে দিলেন ৩০টি বছর।

মানুষের দুর্ভোগের সব চেহারাই দেখেছেন জিম।

নাইন ইলেভেনে টুইন টাওয়ারের সেই ধ্বসে পড়ার দৃশ্যও ধরা পড়ে জেমস ন্যাশের ক্যামেরায়। লোয়ার ম্যানহাটনে নিজ বাড়িতেই সেই সকালটা কাটছিলো তার। আরও অনেক ঘটনার মতোই ছোঁ মেরে ক্যামেরা তুলে নিয়ে দৃশ্যগুলো ফ্রেমবন্দি করতে ভুল করেননি জিম।
 
জেমস ন্যাশে সম্পর্কে টাইমের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ন্যান্সি গিবস লিখেছেন, যখন সব মানুষ আগুন দেখে দূরে পালায় তখন জিম ছোটে সেই আগুনের দিকে।

দুর্দশা আর বেদনায় জড়িয়ে থাকা দৃশ্যগুলো জিমের ক্যামেরায় ধরা পড়ে বিশেষ ভঙ্গিমায়। বেদনাতো অতি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। কিন্তু কি তার কারণ? প্রাকৃতিক নাকি মনুষ্যসৃষ্ট? তাও স্পষ্ট হয়ে ওঠে জেমস ন্যাশের ছবিতে। জিমের কোনো একটি ইমেজ সবাইকে ঠিক ঘটনার মাঝখানে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়।

টাইমের চলতি সংখ্যায় সিরিয়ায় বিপর্যস্ত মানবিকতা তুলে ধরা হয়েছে ন্যাশের ক্যামেরায়। উদ্বাস্তু মানুষের জীবনের খ-চিত্রগুলো দিয়েছে একটি সার্বিক চেহারা। ২০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুহারা। তারা ছুটে পালিয়েছে জীবনের খোঁজে লেবাননে কিংবা জর্ডানের পথে। আর তাদের অর্ধেকের বেশিই শিশু। এই শিশুদের জন্য জিম যতটা না সাংবাদিক তার চেয়ে বেশি মানবিক।

১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডার গৃহযুদ্ধ যখন কাভার করছিলেন তখন এক এতিম শিশুকে কোলে তুলে নেওয়া ন্যাশের ছবি ধরা পড়ে অন্য এক ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায়। একজন পেশাদার সাংবাদিক এভাবেই আলোড়িত হন বিপর্যস্ত মানবতা দেখে।

জিমের নিজেরই ভাষায়, “আমি উদ্বাস্তুদের শিবিরগুলোতে গিয়ে দেখেছি মানুষের ক্ষুধার কষ্ট। সেখানে বিশুদ্ধ পানি নেই, হাজার হাজার মানুষ কলেরায় মারা গেছে। আবার জাটারিতে দেখেছি সেখানে মানুষ টিকে থাকার জন্য সবকিছু পাচ্ছে কিন্তু তারা বহন করছে স্বজন হারানো দুঃখের বোঝা, আর সাথে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের উদ্বেগ।

ম্যাসাচুসেটেসে যৌবন কেটেছে ন্যাশের। তবে স্থায়ী নিবাস নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে। ডার্টমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট জিম এর আগে মার্চেন্ট ম্যারিনের জাহাজগুলোতে কাজ করছেন। আর যখন ফটোগ্রাফি শিখছিলেন তখন ট্রাক চালিয়ে যোগাতেন জিবীকা ও লেখাপড়ার খরচ।

টাইমের ফটোগ্রাফার হিসেবে গোটা বিশ্ব চষেছেন জেমস ন্যাশ। এলসালভেদর-নিকারাগুয়া থেকে বোসনিয়া ও কসভো। সোমালিয়া, রুয়ান্ডা, গাজা, ভারত, ইরাক ও আফগানিস্তান সর্বত্রই তার বিচরণ ছিলো একাধিকবার।

জেমস ন্যাসের এই অবদানকে সম্মান দেখিয়ে টাইম ম্যাগাজিন ২০১৪ সালটি জুড়েই তার তোলা ছবি প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ন্যান্সি গিবস বলেছেন প্রিন্ট ও অনলাইন উভয় ভার্সনে এসব ছবি নিয়মিত ছাপবে টাইম।   

বাংলাদেশ সময় ১২৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।