ঢাকা: লিবিয়ার শাসন ক্ষমতায় ৪২ বছর ধরে আঁকড়ে থাকা মুয়াম্মার গাদ্দাফির জন্ম ১৯৪২ সালে দরিদ্র পরিবারে জন্ম। সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া গাদ্দাফি মাত্র ২৭ বছর বয়সে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাদশাহ প্রথম ইদ্রিসকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশের শাসনভার নেন।
গাদ্দাফির প্রথম স্ত্রী ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষিকা। বিয়ের আগে তাদের কখনো দেখা হয়নি বলে জানা যায়। এই স্ত্রীর ঘরে একমাত্র পুত্র মোহাম্মদ। কিন্তু ছয়মাসের মাথায় প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয় গাদ্দাফির।
দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম সফিয়া আল-গাদ্দাফি। সাফিয়ার ঘরে গাদ্দাফির ছেলেমেয়ের সংখ্যা সাত। তারা ‘মিলাদ’ এবং ‘হান্না’ নামের একটি ছেলে ও একটি মেয়ে শিশু দত্তক নেন। হান্না ১৯৮৬ সালে চার বছর বয়সে ত্রিপোলিতে যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলায় প্রাণ হারায়।
প্রথম পুত্র মোহাম্মদ আল-গাদ্দাফি লিবিয়ার অলিম্পিক কমিটির প্রধান। ত্রিপোলিতে এর প্রধান কার্যালয়। তিনি জেনারেল পোস্ট অ্যান্ড টেলিকম কোম্পানির চেয়ারম্যান। এই কোম্পানি মোবাইল ফোন এবং স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনস কার্যক্রম চালায়।
দ্বিতীয় পুত্র সাইফ আল ইসলাম আল-গাদ্দাফি (৩৮): অনর্গল ইংরেজি বলতে পারদর্শী সাইফ লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিকস থেকে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী। তিনি ২০০৬ এ তার পিতার শাসনামলের সমালোচনা করে দেশ ছাড়েন। কিন্তু আবার তিনি দেশে ফেরেন। তাকে আধুনিক লিবিয়ার মুখ বলা হয়ে থাকে। কিন্তু ২০০৮ এ তিনি ঘোষণা করেন যে, পিতার উত্তরাধিকারী হওয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই। লিবিয়ার টেলিভিশনে সম্প্রতি বলেছেন, দেশ গৃহযুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যাবে।
তৃতীয় পুত্র সাদি গাদ্দাফি (৩৬): সাদি গাদ্দাফির দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান। সেনাবাহিনীর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মেয়েকে বিয়ে করেছেন তিনি। সাবেক ফুটবলার সাদি ইতালিতে অল্প কিছুদিন চাকরি করেছেন। লিবিয়ার জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার পর তিনি দেশটির ফুটবল ফেডারেশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর বর্তমানে তিনি সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত। একশ মিলিয়ন ডলারের একটি সিনেমার ফান্ড সংগ্রহ করেছেন সাদি। তার প্রথম সিনেমাটি হবে একটি জার্মান ছবি ‘দি এক্সপেরিমেন্ট’-এর রিমেক।
চতুর্থ পুত্র মুতাসিম গাদ্দাফি: বয়স জানা যায় নি। মুতাসিম সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল। পিতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং তিনি দেশে ফিরে আসেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং সেনাবাহিনীতে তার ইউনিটের প্রধান।
পঞ্চম পুত্র হান্নিবেল গাদ্দাফি বয়স জানা যায় নি। তিনি জাতীয় সমুদ্র পরিবহন কোম্পানির প্রধান। এই কোম্পানি তেল রপ্তানি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তিনি অনেক সহিংস ঘটনার দায়ে অভিযুক্ত। ২০০৫ এ প্যারিসে বসে গর্ভবর্তী বান্ধবীকে পেটানোর অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে। ২০০৮ এ জেনেভার একটি হোটেলে দু’জন চাকরকে পেটানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার হন হান্নিবেল। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। সেই থেকে লিবিয়া সুইস পণ্য বর্জন করে। তার কূটনীতিককে ডেকে পাঠায়। সব সুইস কোম্পানিকে লিবিয়া ছেড়ে যেতে বলে।
সাইফ আল-আরব: ষষ্ঠ পুত্র সাইফ আল-আরব সম্পর্কে খুব কম তথ্যই পাওয়া যায়। টেফিগ্রাফের এক রিপোর্টে জানা যায়, ২০০৮ এ উচ্ছৃঙ্খলভাবে গাড়ি চালানোর অভিযোগে জার্মান পুলিশ তার গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে। তিনি সম্ভবত তখন মিউনিখে পড়ছিলেন।
খামিস গাদ্দাফি: সপ্তম পুত্র খামিস গাদ্দাফি পুলিশ অফিসার। বেনগাজিতে বিক্ষোভ দমনের অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।
আয়েশা আল-গাদ্দাফি: আয়েশা গাদ্দাফির কন্যা। পেশায় আইনজীবি আয়েশার বয়স ৩৪। তিনি সাদ্দাম হোসেনের আইনজীবি ছিলেন। ২০০৬ এ আয়েশা তার বাবার চাচাতো ভাইকে বিয়ে করেন।
মিলাদ আল-গাদ্দাফি: পালিত পুত্র এবং ভাগ্নে। ১৯৮৬ সালে লিবিয়াতে গাদ্দাফিকে বোমা হামলা থেকে রক্ষা করেন মিলাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১১