রোম: লিবিয়ায় চলমান সহিংসতায় দেশটির শাসক মুয়াম্মের গাদ্দাফির সেনাবাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
লিবিয়ার স্বৈরশাসক গাদ্দাফির চার দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।
বিক্ষোভকারীদের উপর ন্যক্কারজনক এ হামলার মধ্য দিয়ে লিবিয়ায় এখন আর গাদ্দাফির নিয়ন্ত্রণ বহাল না থাকার বিষয়টিই প্রমাণিত হয় বলে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাঙ্কো ফ্রাতিনি জানান।
একইসঙ্গে সহিংস এ হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ হামলায় কমপক্ষে এক হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন বলেই আমাদের ধারণা। ’
এদিকে, হামলায় ২৩৩ জন নিহত হয়েছেন এবং এর মধ্যে গত দু’দিনে ত্রিপলিতে নিহতের সংখ্যা ৬২ জন বলে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়। তবে এ সংখ্যা আরও বেশি বলে দেশটির বিরোধীদের দাবি।
লিবিয়ায় অব্যাহত সহিংসতার কারণে এরইমধ্যে দেশটি থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনা শুরু করেছে ইতালি।
একইসঙ্গে ব্রিটেনসহ অন্যান্য দেশও লিবিয়া থেকে নিজ দেশের জনগণকে ফিরিয়ে আনার জন্য বিমান ও জাহাজ পাঠিয়েছে।
এছাড়া গাদ্দাফির অনুগত বাহিনীর বেসামরিক জনগণের উপর সহিংস হামলার ঘটনায় দেশটির উপর প্রথম দেশ হিসেবে অবরোধ আরোপ করেছে ফ্রান্স।
এ বিষয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলো সারকোজি বলেন, ‘ভবিষ্যত কোনো ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত লিবিয়ার সঙ্গে সব ধরনের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং আর্থিক সম্পর্ক স্থগিত করা হলো। ’
এছাড়া পেরুও লিবিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে।
তবে লিবিয়ার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ব। কেননা লিবিয়াকে বিচ্ছিন্ন করতে চান না বলে কাতারের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।
এদিকে লিবিয়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে চলমান বিক্ষোভে প্রতিবাদকারীদের পুরোপুরি সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন দেশের জেষ্ঠ্য কর্মকর্তারা।
গাদ্দাফির প্রভাবশালী ছেলে সাইফের একটি সংস্থা থেকে এক জেষ্ঠ্য সহকারীর পদত্যাগই এর প্রমাণ। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইউসুফ সাওয়ানি রয়টার্সে পাঠানো এক খুদে বার্তায় (এসএমএস) বলেন, ‘সহিংসতার প্রতিবাদে আমি রোববার গাদ্দাফি ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করেছি। ’
গাদ্দাফির অনুগত বাহিনী বুধবার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে হামলা করার পর লিবিয়া এখন অনেকটাই শান্ত। দেশটির গ্রিন স্কয়ারে মাত্র ১৫০ জন বিক্ষোভকারীকে পতাকা হাতে প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। আতঙ্কে অনেকে এখন ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না।
পূর্ব লিবিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে আরও ৩০০ জনের সঙ্গে এক ব্রিটিশ তেলকর্মী আটকে আছেন বলে জানান। স্থানীয় জনগণ তেলের সরঞ্জামাদি লুট করতে শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।
জেমস কয়লে নামের ওই ব্যক্তি বিবিসিকে বলেন, ‘স্থানীয় জনগণ অস্ত্র বহন করছে বলে প্রতিদিন আতঙ্কের মধ্যে আমরা দিন অতিবাহিত করছি। এরইমধ্যে তারা পার্শ¦বর্তী জার্মান শিবিরে লুটপাট চালিয়েছে। তারা জার্মানসহ আমাদের সব যান নিয়ে গেছে। তাই আমরা এখন ব্রিটিশ সাহায্যের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। ’
তবে এ বিষয়ে ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১১