ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

মস্তিষ্কের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে মুঠোফোন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১১
মস্তিষ্কের কার্যক্রমে প্রভাব ফেলে মুঠোফোন

মুঠোফোনের বিকিরিত রশ্মি মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্রমে ‘ক্ষতিকর’ প্রভাব ফেলে বলে একদল স্নায়ুবিজ্ঞানীর গবেষণায় এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

এর আগে মনে করা হতো, মুঠোফোনের রশ্মি মস্তিষ্কে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না।

নতুন এ গবেষণার ফলাফল সেই ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণ করেছে।

জার্নাল অব আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (জামা)-তে বুধবার এ গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়। তবে শুধু এর ফলাফল বা ওই সাময়িকীতে প্রকাশিত হওয়ার কারণেই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন ড্রাগ অ্যাবিউসের পরিচালক এবং বিশ্বের অন্যতম প্রধান স্নায়ুবিজ্ঞানী নোরা ভলকো এ গবেষণাটির নেতৃত্ব দেন, যা একইসঙ্গে গুরুত্বের দাবি রাখে।

সুস্থ ৪৭ জন ব্যক্তি ৫০ মিনিট কানে সেলফোন ধরে রাখার পর নোরা এবং তার সহকর্মীরা ব্রুকহেভেন জাতীয় গবেষণাগারের এনার্জি বিভাগে তাদের মস্তিষ্ক স্ক্যান করেন।    

এতে দেখা যায়, মুঠোফোন শব্দহীন থাকায় মস্তিষ্কের কার্যক্রমে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। কিন্তু ফোনটি যখন খোলা ছিলো তখন ফোনের কাছাকাছি থাকা মস্তিষ্কের অংশে বিজ্ঞানীরা তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ্য করেন।

তবে গবেষণার এ ফলাফলে ভিন্নমত প্রকাশ করে মাইক্রোওয়েভ নিউজ এর সম্পাদক লুইস লেসইন বলেন, ‘এ গবেষণা দল জনস্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করে এমন এক ফলাফলের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের একটি বিরোধ সমাধানের চেষ্টা করছেন। ’

‘একটি শিশুর শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় সেলফোনের প্রভাব কী? এখানেও এটি প্রভাব ফেলে?’ ১৯৮১ সাল থেকে এ বিষয়ে বিতর্ক চলে আসছে।

২০১০-এর মে মাসে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা যায়, মুঠোফোন ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের এক ধরনের ক্যান্সার গ্লিওমারের ঝুঁকি ১৯ শতাংশ কমে যায়। তবে এ গবেষণায় পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি ছিল বলে জানা গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ক্যান্সার বিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ১০ বছর ধরে ১০ হাজার ৭৫১ জনের ওপর পরিচালিত গবেষণায় এ সিদ্ধান্ত জানায়।

অনেকেই ওই গবেষণায় আস্থা রাখেননি। সেলফোনের সঙ্গে ক্যান্সারের সম্পর্ক আছে--এমন ধারণা থেকে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণা চালিয়ে যেতে থাকেন।

মস্তিষ্কের বিভিন্ন কার্যক্রম সংগ্রহ করে ভলকোর দল মস্তিষ্কে গ্লুকোজ বিপাকের পরিমাপ করে। মুঠোফোন অন বা চালু অবস্থায় মস্তিষ্কে গ্লুকোজের বিপাক ৭ শতাংশ বেড়ে যায়। স্নায়ুবিজ্ঞানীরা মানুষের কথা বলা, নড়াচড়া ও গান শোনার মতো নিয়মিত কর্মতৎপরতা বোঝার জন্য গ্লুকোজের এ পরিমাপ দেখেন।

ফোন যেখানে ধরা হয় মস্তিষ্কের সেই অংশে অর্থাৎ ডান কর্টেক্স এবং মস্তিষ্কের উপরিভাগে এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি বলেও জানা যায়। মস্তিষ্কের এ অংশ স্মৃতি, ভাষা এবং দেখার কাজে ব্যবহৃত হয়।    

নারী বিজ্ঞানী ভলকো ও তার দল দেখেন, মুঠোফোন নিঃশব্দ (মিউট) রেখে চালু অবস্থায় মস্তিষ্কের জ্বলে উঠছে। ‘এটা খুবই অসাধারণ একটি আবিষ্কার’, লস অ্যাঞ্জেলেসের সেডার-সিনাই মেডিকেল সেন্টারের নিউরোসার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান ড কিথ ব্ল্যাক বলেন।  

‘আমরা যদি ফোনে দীর্ঘসময় কথা বলি তাহলে কি দীর্ঘমেয়াদে আমাদের ভাষা ব্যবহারের দক্ষতা কমে যাবে? আমাদের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অনেক আগের ঘটনা ভুলে যাওয়ার ঘটনায় কি প্রভাব রাখবে?’ ব্ল্যাক প্রশ্ন করেন।

তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায় এটা সত্যিই উদ্বেগের বিষয়। শিশুদের শেখার দক্ষতার ক্ষেত্রে মুঠোফোনের বিকিরিত রশ্মির প্রভাব কি? এটা কি তাদের শেখার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে? এই বিষয়গুলোই আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। ’

এভাবেই এ গবেষণা অনেক বিতর্কিত প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। এ কারণেই সেলসিন বলেন, ‘ভলকো বিজ্ঞানের একজন সুপারস্টার। ’

তবে এত কিছুর পরও দমে যাচ্ছেন না ভলকো। তাই এটা একটি ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া জানা সত্ত্বেও তিনি সেলফোন ব্যবহারের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে চান। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই কঠিন, কিন্তু আমরা এটা বোঝার চেষ্টা চালিয়ে যাবো। ’

ইন্টারনেট অবলম্বনে নুসরাত জাহান

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।