ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

অচিরেই অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দেবে চীন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৮
অচিরেই অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দেবে চীন

চীনে ভ্রমণ করতে যাওয়া যেকোনো পর্যটক এ কথা বলতে বাধ্য যে, দেশটি এগিয়ে চলছে ভবিষ্যতের দিকে। হাজার হাজার নতুন ভবন, রাস্তা, ব্রিজ, এয়ারপোর্ট, দ্রুতগতির ট্রেন ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে সেখানে। মাত্র কয়েক বছর আগেও নকল প্রযুক্তি প্রস্তুতে ‘খ্যাতি’ ছিল দেশটির। কিন্তু এখন তারা প্রস্তুত করছে দারুণ, অনন্য সব প্রযুক্তি; যার একটা বড় অংশই সেদেশের জনগণ স্মার্টফোনের সাহায্যেই কিনতে পারছেন। 

সরকারি সিদ্ধান্ত অতি দ্রুত সম্পাদন করা হচ্ছে। ২৬ দশমিক ৪ মাইল দীর্ঘ কিং দাও হাইওয়ান ব্রিজ চীনারা নির্মাণ করে ফেলেছে মাত্র চার বছরে।

নিজের ক্ষমতা সুসংহত ও নিরঙ্কুশ করা,দুর্নীতি দমন, শিক্ষা ও অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ও নব মিতালি স্থাপনের মধ্য দিয়ে চীন সরকারকে আরও শক্তিশালী করে তুলছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

চীনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিবছর কোটি কোটি প্রযুক্তিবিদ তৈরি করছে। আর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সরকার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়িকে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের লক্ষ্যবস্তু করেছেন। এখাতে ঢালা হচ্ছে কাড়ি কাড়ি ডলার।  

দেশীয় কোম্পানিগুলোর বিকাশের সব পথ উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে, পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে এগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী আমাজন, অ্যাপল, ফেসবুক, গুগল ও টুইটারের মতো বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর চলার পথে সৃষ্টি করা হচ্ছে নানা লিখিত অলিখিত বাধা।  

জেডিডট কমকে (JD.com) বলা হয় চীনের আমাজন; যা পণ্য ডেলিভারিতে ব্যবহার করে বিশাল ড্রোনবহর। অ্যাপল তাদের পণ্য চীনে প্রস্তুত করলেও হুয়াওয়েইর মতো ব্র্যান্ডগুলো সেই স্থান ধীরে ধীরে দখল করে নিয়েছে। ফেসবুক এবং টুইটারের বিকল্প হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে উইচ্যাট। একইভাবে বাইদু (Baidu) যে চীনে সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে এক নম্বর স্থানে চলে এসেছে, সেটাও কিন্তু সরকারেরই কৃপায়।  

দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের গুইঝোও প্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে স্থাপিত ‘ফাইভ-হান্ড্রেড-মিটার অ্যাপাচার স্ফেরিক্যাল টেলিস্কোপ’ (ফাস্ট)।  এটি বিশ্বের বৃহত্তম রেডিও টেলিস্কোপ।

চীন যে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে অচিরেই পেছনে ফেলে দেবে, এ বিষয়ে কারো মনে তিল পরিমাণ সন্দেহ নেই; এখন প্রশ্ন হলো, সেটি কখন ঘটবে।

চীনের উত্থান বাস্তবিক। ব্যক্তি অধিকারের বদলে সামষ্টিক ঐক্যকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে তারা। বর্তমানে তারা পরিণত হয়েছে ‘উদ্ভাবনী’ অর্থনীতিতে।

অপর দিকে যুক্তরাষ্ট্র ব্যক্তি অধিকারকে লালন করে। তারা মুক্তবাজারে বিশ্বাসী। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের মুক্তবাজারনীতির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেখানে বিনিয়োগের মাধ্যমে লাভবান হওয়াসহ অনেক রকম সুবিধা হাসিল করছে চীনা কোম্পানিগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্রাটেজি বিগত শতাব্দীতে কার্যকর ফলাফল দিয়েছিল বটে; যখন চীন ছিল তুলনামূলক গরীব, বিচ্ছিন্নতাবাদী আর একান্তই কৃষিনির্ভর এক দেশ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চীন তাদের বিচ্ছিন্নতাবাদী ভাবমূর্তি থেকে বেরিয়ে এসে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারে গুরুত্ব আরোপ করেছে।  

চীনের তৈরি রোবট জিয়াজিয়া

দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলগুলো রাষ্ট্রের বদলে নিজেদের স্বার্থকে বড় করে দেখে। সেদেশের সরকার অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে এবং শিক্ষার্থীরা যেকোনো বিষয়ে পড়ালেখার জন্য বিশাল অংকের ঋণ সুবিধা ভোগ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ জনগণ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অতীত ভুলগুলো নিয়ে পড়ে রয়েছেন। সবাই জানে নির্বাচনী প্রচারণাকে ঘিরে বেশ কিছু ইস্যু তৈরি করেছেন ট্রাম্প, এরপরও তিনিই নির্বাচনে জিতেছেন যিনি বিভিন্ন দেশ ও অর্থনৈতিক অংশীদারদের ওপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা আরোপেই বেশি আগ্রহী।

অল্প কথায় বলতে গেলে, যুক্তরাষ্ট্র যেন ছুটছে প্রজাপতির পেছন। অপর দিকে চীন দুর্বার গতিতে ছুটে চলছে নিজেদের ভবিষ্যত গড়তে। সুতরাং এ কথা বলাই যায়, বিশ্ব অর্থনীতিতে চীন অচিরেই ছাড়িয়ে যেতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রকে।

বাংলাদেশ সময়: ১২০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৮
এনএইচটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।