পুর্নিয়া জেলার শ্রীনগরে অবস্থিত ‘পাকিস্তান’ গ্রামটি বিহারের প্রাদেশিক রাজধানী থেকে তিনশ’ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এই গ্রামে কোনো মুসলিম নেই।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ওই গ্রামের বাসিন্দা অনুপ লাল তুড়ুর বরাতে স্থানীয় এক সংবাদমাধ্যম জানায়, আমরা খুব বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছি। এ গ্রামের মেয়েদের কেউ বিয়ে করতে চায় না। পাকিস্তানি বলে ডাকা হলে আমরা লজ্জিত হই। কারণ, পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা গঙ্গা তুড়ু বলেন, ভারত সরকারের অনেক চেষ্টার পরেও পাকিস্তানের পরিবর্তনের কোনো লক্ষণ নেই। তারা যেভাবে ভারত বিরোধিতা করে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে, তাতে আমরা ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছি। এ নামের কারণে পাশের গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হচ্ছে। আমরা পাকিস্তানের অধিবাসী হিসেবে পরিচিত হতে চাই না।
স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা গ্রামবাসীদের এ উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন। নাম পাল্টানোর জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন তারা।
স্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তা নন্দন কুমার জানান, নাম পরিবর্তনের জন্য পিটিশন জমা দিয়েছে গ্রামবাসী। যথাযথ পদক্ষেপ নিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি আমরা।
পুর্নিয়া জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহুল কুমার বলেন, তিনি এখনো পিটিশনটি পাননি। তবে, সেটি না পেলেও নাম পাল্টাতে নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য সন্তোষ কুশ্বাহা গ্রামবাসীকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, নাম পাল্টাতে সাধ্যমতো চেষ্টা করবো আমি।
গ্রামবাসী জানান, একসময় পাকিস্তান গ্রামটি দু’দেশের নাগরিকদের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের প্রতীক ছিল। কিন্তু, এখন এ নামের কারণেই তারা মানুষের অবজ্ঞার শিকার হচ্ছেন।
গ্রামবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে গ্রামটি তখনকার বাংলার ইসলামপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। দেশভাগের সময় গ্রামের মুসলিম বাসিন্দারা পূর্ব পাকিস্তানে চলে যান, যা এখন বাংলাদেশ নামে পরিচিত। দেশান্তরিত হওয়ার আগে তারা তাদের সম্পত্তি হিন্দু প্রতিবেশীদের দিয়ে যান। তখন তাদের সম্মান জানাতে হিন্দু অধিবাসীরা গ্রামের নাম পাকিস্তান রাখেন। সেই নামই এখন তাদের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৯
এফএম