ঢাকা: ঢাকার সাবেক মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন বলেছেন, বিচার বিভাগ নিয়ে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। আদালতের রায়ে আমরা আশাবাদী।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা নন সাবমিশন মামলায় খালাসের পর প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
সোমবার (২৩ নভেম্বর) ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ নাজমুল আলম এ রায় দেন।
ইশরাক বলেন, আমরা গত ১৩ বছর ধরে বলে আসছি বিচার বিভাগকে কুক্ষিগত করে ফেলা হয়েছে, বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে ফেলা হয়েছে, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে এবং বিচার বিভাগকে একটি রাজনৈতিক বিরোধী মত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই জায়গায় আমি বলবো আজকে জনগণের বিজয় হয়েছে, দেশবাসীর বিজয় হয়েছে দলমত নির্বিশেষে। আমরা একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।
তিনি বলেন, যেই জায়গায় বিচার বিভাগকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে রাজনীতিকরণের মাধ্যমে, সেখানে আমরা আশাবাদী। এ রায়ের মাধ্যমে মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগকে ন্যায়বিচারের সেই জায়গায় আবার নিয়ে যেতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, সরকার যতোই অপচেষ্টা করুক বিচার বিভাগকে প্রভাবিত করে এটিকে দলীয়করণ করে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করায় এখনো বিচার বিভাগ ও প্রশাসনে সৎ, ন্যায়পরায়ন মানুষেরা রয়েছেন। আজকে যিনি বিচারক ছিলেন তিনি সৎ ও ন্যায়পরায়ন পথেই হেঁটেছেন বলে আমি মনে করি। তিনি সৎ সাহস নিয়ে এ রায়টি দিয়েছেন। এ রায়ে আমরা আশাবাদী দেশে যে অপশাসন চলছে আগামীতে সেখান থেকে আমরা উত্তোরণ ঘটাতে পারবো।
এর আগে দুপুর দুইটার পর দুদকের দায়ের করা নন সাবমিশন মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। রায় উপলক্ষে আগেই আদালতে হাজির হন ইশরাক হোসেন। রায় ঘোষণার সময় তিনি কাঠগড়ায় দাঁড়ান। এ সময় বিচারকের নির্দেশে আদালতের একজন বেঞ্চ সহকারী কাঠগড়ায় একটি টুলে তাকে বসতে দেন। প্রায় আধ ঘণ্টাব্যাপী বিচারক রায় পড়েন। এ সময় ইশরাক বসেই রায় শুনেন।
রায়ে আদালত বলেছেন, দুদক সম্পদের বিবরণী দাখিলের জন্য যে নোটিশ পাঠায় রমনা থানাধীন ঢাকার তৎকালীন মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সরকারি বাসভবনে। ওই সময় খোকা বা ইশরাক কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। সাক্ষ্যপ্রমাণে বলা হয়, ওই সময় ঘরের বাহিরে দেয়ালে নোটিশটি টানিয়ে দিয়ে তা জারি করা হয়।
রায়ে বলা হয়, আসামিপক্ষের দাখিলকৃত দলিলাদী অনুযায়ী সাদেক হোসেন খোকার স্থায়ী বাড়ি হচ্ছে গোপীবাগে। সেখানে কোনো নোটিশ পাঠানো হয়নি। এছাড়া তার ছেলে ইশরাক যে সরকারি বাড়িতেই থাকতেন সেরকম কোনো প্রমাণও রাষ্ট্রপক্ষ দেখাতে পারেনি। ওই সময় ইশরাক লন্ডনে পড়াশুনা করছিল বলে আসামিপক্ষ প্রমাণ দাখিল করেছে। ইশরাকের লন্ডনের ঠিকানায়ও কোনো চিঠি পাঠানো হয়নি। তাই এ নোটিশটি যথাযথভাবে জারি করা হয়নি বলে প্রমাণিত হওয়ায় আসামি ইশরাক হোসেনকে অত্র অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হলো।
গত ১৪ জানুয়ারি একই আদালত অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। এরপর ৩ মার্চ মামলার বাদী দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক শামসুল আলমের সাক্ষ্যের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
মামলায় মোট আট জন সাক্ষীর ছয় জন সাক্ষ্য দেন। গত ১৯ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। এরপর ২৭ অক্টোবর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় জবানবন্দি দেন ইশরাক। গত ১১ নভেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য ২৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত।
ওই আদলতে দুদকের সহকারী পরিদর্শক আক্কাস আলী বাংলানিউজকে এ তথ্য জানান।
সম্পদের বিবরণী দাখিল করতে নোটিশ দেওয়ার পরও তা দাখিল না করায় ইশরাকের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের হয়।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর ইশরাক ও তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিবর্গের স্ব-নামে, বেনামে বা তাদের পক্ষে অন্য নামে বা তাদের পক্ষে অন্য নামে অর্জিত যাবতীয় স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ, সম্পত্তির দায়-দেনা, আয়ের উৎস ও তা অর্জনের বিস্তারিত বিবরণ জমা দিতে বলেন। তবে নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে বিবরণী দাখিল না করায় ২০১০ সালের আগস্টে তাদের বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা থানায় নন সাবমিশন মামলা করেন সংস্থাটির তৎকালীন সহকারী পরিচালক শামসুল আলম।
নির্দিষ্ট তারিখে সম্পদের হিসাব জমা না দেওয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬(২) (ক) ধারামতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে মামলার অভিযোগে বলা হয়। ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর এ মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। এরপর মামলাটি বিচারের জন্য ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে বদলি করা হয়।
** দুদকের মামলায় খালাস পেলেন ইশরাক
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৩, ২০২০
কেআই/আরআইএস