ফরিদপুর: ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে নিপীড়নের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার শরীফাবাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক মো. সাখাওয়াত হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (০২ ডিসেম্বর) দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
বৃহস্পতিবার (০১ ডিসেম্বর) দিনগত রাতে ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাত দমন আইনে ওই প্রধান শিক্ষকের নামে ভাঙ্গা থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভাঙ্গা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সিরাজ হোসেন জানান, ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষক মো. সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। শুক্রবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে, ০১ ডিসেম্বর সকালে ওই ছাত্রী নিজেই ভাঙ্গা থানায় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে প্রধান শিক্ষক মো. সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
লিখিত অভিযোগ দায়েরের পর বিভিন্ন মহল ও কোমলমতী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। দুপুরে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুলের সামনে ও সড়ক অবরোধ করে এবং প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে।
এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মরিয়া হয়ে ওঠে একটি প্রভাবশালী মহল।
ওই ঘটনার তদন্তে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে ভাঙ্গার ইউএনও ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শরীফাবাদ স্কুল এ্যান্ড কলেজে পৌঁছান। তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পান তারা। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেনকে থানা হেফাজতে নেয় পুলিশ।
শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগের সূত্রে জানা যায়, গত ৩০ নভেম্বর সকালে শরীফাবাদ স্কুলে পরীক্ষা দিচ্ছিল ওই ছাত্রী। পরীক্ষায় নকল করার অপরাধে তার পরিক্ষার খাতা নিয়ে যান স্বরবাণী সাহা নামে একজন শিক্ষিকা। এ সময় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী ওই ছাত্রীর খাতা আটকে রাখা হয়। সে কান্নাকাটি করলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে তার অনুমতি আনার কথা বলেন ওই শিক্ষিকা।
পরে ওই ছাত্রী প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেনের কাছে গিয়ে তার পরীক্ষার খাতা চাইলে সাখাওয়াত তার রুমে যেতে বলেন তাকে। পরে রুমের মধ্যে প্রবেশ করতেই প্রধান শিক্ষক তাকে জোর করে জড়িয়ে ধরে স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন ওই ছাত্রীর। একপর্যায়ে সে (ছাত্রী) চিৎকার দিলে তার মুখচেপে ধরেন প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত এবং ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য তাকে হুমকি দেওয়া হয়। পরে ওই ছাত্রী পরীক্ষা না দিয়ে বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে ঘটনাটি জানায়।
ওই স্কুল ছাত্রীর বাবা জানান, আমরা গরিব মানুষ। কাজ করি, ভাত খাই। খুব কষ্ট করে মেয়েটির পড়ালেখা চালাই। তার তিন মেয়ের মধ্যে ওই ছাত্রী তার বড় সন্তান। বিষয়টি মিমাংশার জন্য সাখায়াতের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মহল তার পরিবারকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করছে। কিন্তু তিনি কোন মিমাংসায় য়য়নি, একটি সুষ্ঠু বিচারের আশায় প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, ইতোপূর্বে ওই স্কুলে বিভিন্ন অনিয়ম সহ আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিপীড়ন করার অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াতের বিরুদ্ধে। লোক লজ্জার ভয়ে এ বিষয়ে অনেকেই মুখ খুলে না। সাখাওয়াতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
ভাঙ্গা থানার ওসি জিয়ারুল ইসলাম জানান, ওই ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষক সাখাওয়াত হোসেনকে বৃহস্পতিবার বিকালে থানা হেফাজতে আনা হয়। রাতে ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। শুক্রবার দুপুরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
ভাঙ্গার ইউএনও মো. আজিম উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের সিসিটিভি ফুটেজসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য-আলামত বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০২২
এসএম