ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

গৃহকর্মীর বেশে ঘুরে ঘুরে চুরি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২৩
গৃহকর্মীর বেশে ঘুরে ঘুরে চুরি গ্রেপ্তার বিলকিস

ঢাকা: রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন নিউ ইস্কাটন দিলু রোডের নিজের বাসায় মাসে ছয় হাজার টাকা বেতনে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর গৃহকর্মী নিয়োগ দেন গৃহকর্তা মনোয়ার আলী (৬৬)।

গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় স্ত্রী ও গৃহকর্মী নূরহাজানকে রেখে অফিসে যান।

এরমধ্যে আমেরিকায় থাকা মেয়ে ফোন করে জানান মা ফোন রিসিভ করছে না। বাসায় ফিরে স্ত্রীকে অজ্ঞান অবস্থান পান মনোয়ার। এলোমেলো পুরো ঘর অথচ নুরজাহান নামে নিয়োগ দেওয়া গৃহকর্মী বাসায় নেই।

স্ত্রীকে মগবাজার ইনসাফ বারাকা হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে তিনি জানতে পারেন, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সোয়া ১১টার মধ্যে স্ত্রী রেজিনা রহমানকে (৫৫) বাসায় একা পেয়ে কজের মহিলা নুরজাহান ও অজ্ঞাত আরও একজন মিলে কৌশলে অজ্ঞান করে বাসায় থাকা সাড়ে ৪ লাখ টাকা ও একটি স্বর্ণের বালা ও একটি স্বর্ণের চামচ নিয়ে পালিয়ে যায়।

স্ত্রী সুস্থ হলে তিনি হাতিরঝিল থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার দায়িত্ব থানা পুলিশ থেকে পিবিআই'র ওপর ন্যস্ত হওয়ার পর খোঁজ মেলে গৃহকর্মী নুরজাহানের। তার আসল নাম বিলকিস।

বুধবার (২ আগস্ট) রাজধানীর কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর)।

পিবিআই জানায়, পেশাদার চোর চক্রের সদস্য বিলকিস একেক বাসায় একেক নামে গৃহকর্মীর কাজ নেন। এরপর সুযোগ বুঝে টাকা স্বর্ণালংকারসহ গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুট করে পালিয়ে যেতেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও ৬০ ফিট এলাকায় পিবিআই (ঢাকা মেট্রো-উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই'র বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি বলেন, গৃহপরিচারিকা সেজে বাসায় কাজ নিয়ে সুযোগ বুঝে কৌশলে গৃহকর্ত্রীকে অজ্ঞান করে বাসার টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া চক্রের সদস্য বিলকিস। তিনি নূরজাহান, কনা, রুজিনা নামে একাধিক বাসায় চুরি বা লুট করেছে।

তার স্বামীর বাড়ি ময়মনসিংহে ধোবাউড়ায় হলেও এখনও তিনি স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করেন বাবার বাড়ি জামালপুর মেলান্দহ রুকনাই গ্রামকে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পাশের বাসার দারোয়ান গোলাম মোস্তফার সহযোগিতায় ২০২২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভুক্তভোগী মনোয়ারের নিউ ইস্কাটনের বাসায় কাজের সুযোগ নেয় নুরজাহান। মামলার বাদী সরল বিশ্বাসে নুরজাহানকে তার বাসায় কাজ করার জন্য প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা বেতনে নিয়োগ দেন। এর তিনদিন পরই চুরির ঘটনা ঘটে।

মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পর হাতিরঝিল থানার এসআই রহমত উল্লাহ রনির ওপর তদন্তভার অর্পিত হয়৷ তিনি তদন্ত শেষে মামলার ঘটনায় আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন।

হাতিরঝিল থানা পুলিশের দাখিলকৃত চূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে বাদীর না-রাজির আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।

এরপর সে মামলা তদন্ত করছিল ঢাকা মেট্রো (উত্তর)। পিবিআই'র তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই রবিউল ইসলাম মামলার মূল রহস্য উদঘাটনে একটি টিম গঠন করেন৷ এরই ধারাবাহিকতায় বিলকিসকে গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর বলেন, নুরজাহান ঢাকা শহরের বিভিন্ন বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ নেওয়ার সময় ভিন্ন ভিন্ন নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে।  

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুরজাহান নিউ ইস্কাটনের ওই বাসায় নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা এবং হাতিয়ে নেওয়া স্বর্ণালংকার ডিএমপি ঢাকার খিলক্ষেত থানা এলাকা এবং জামালপুর জেলার ইসলামপুর থানা এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করার কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর এলাকার বিভিন্ন বাসায় একই কৌশলে ভিন্ন ভিন্ন নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করে টাকা ও স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথাও স্বীকার করেছে। পিবিআই অনুসন্ধান জানতে পেরেছে নুরজাহানের নামে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর থানা, ভাটারা থানা, উত্তরা পশ্চিম থানায় মোট চারটি চুরির মামলা রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২৩
পিএম/জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।