ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ফরিদপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনে পদ্মায় ভাঙন, হুমকিতে শহর রক্ষা বাঁধ 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
ফরিদপুরে অবৈধ বালু উত্তোলনে পদ্মায় ভাঙন, হুমকিতে শহর রক্ষা বাঁধ  পদ্মার ভাঙনে বিলীন ঘরবাড়ি, হুমকিতে শহর রক্ষা বাঁধ

ফরিদপুর: ফরিদপুরে পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে ধলারমোড়ের কাছে পালডাডাঙ্গীতে পদ্মা তীরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে একরাতের মধ্যেই শহর রক্ষা বাঁধসংলগ্ন দশ-বারোটি বসতবাড়ি ধসে গেছে।

এতে শহর রক্ষা বাঁধ তীব্র ঝুঁকিতে পড়ে গেছে।  

এদিকে শহর রক্ষা বাঁধসংলগ্ন এসব বসতিরা ঘরবাড়ি হারিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। অনেকের টয়লেট ও রান্নাঘর ভাঙনে বিলীন হওয়ায় তারা নিত্যকর্মও সাড়তে পারছেন না। বাড়িতে রান্নাবান্না করতে না পারায় এসব পরিবার সারাদিন নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে ঘরের মালামাল সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।  

এদিকে স্থানীয়রা ওই ‘বালুখেকোদের’ ব্যবহৃত এক্সকেভেটর তথা ভেকু আটকে রাখেন সড়কে। তারা এভাবে বালি উত্তোলনের প্রতিবাদ করলে তাদের অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হুমকি-ধামকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খবর পেয়ে পুলিশের পাশাপাশি পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। নদীতে বসতভিটা ভাঙনের কবলে পড়ায় তারা চরম উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।  

সরেজমিনে সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের পালডাঙ্গীতে গিয়ে দেখা যায়, শহর রক্ষা বাঁধের সামনেই পদ্মা নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। আর সেখানে সরকারি বালুমহাল না থাকলেও ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি তুলে গড়ে তোলা হয়েছে বালির বিশাল মজুদ।  

এভাবেই ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু

স্থানীয়রা জানান, প্রথমে ভেকু দিয়ে শহররক্ষা বাঁধ ঘেঁষে প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ফুট গভীর করে বালি তুলে বালির ঢিবিতে মজুদ করা হয়। এরপর ড্রেজার মেশিন বসিয়ে নদী থেকে বালি তোলা হচ্ছিলো। গত বৃহস্পতিবার রাতে ভেকু দিয়ে ওই বালি ট্রাকে করে বিক্রির সময় শহর রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন এলাকায় পানির ঘূর্ণি স্রোতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এতে মাঝরাত হতে ভোর হওয়ার আগেই  আফজাল শেখ, মজলু শিকদার, মো. হাসান মাস্টার, বাদশা শেখ, সাহেব শেখ,  আলী, দেলোয়ার শেখ, সাদ্দাম শেখ, সালাম শেখ, জাহানারা বেগমের ঘরবাড়ি নদীর পানিতে ধসে যায়। বাড়িঘর ছাড়াও বাঁশবাগান ও বেশকিছু গাছপালাও পানিতে ধসে গেছে।  

পালডাঙ্গী মামুনের দোকানের কাছে ভাঙন একেবারে শহর রক্ষা বাঁধ পর্যন্ত চলে এসেছে।  

ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি হারানো মো. হাসান মাস্টার বলেন, ৮৮ সালের বন্যার সময় পদ্মা নদীতে ঘরবাড়ি হারানোর পরে আমরা এই বেড়িবাঁধের পাশে সরকারি জমিতে এসে আশ্রয় নেই। এরপর স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই আমরা এখানে ঘরবাড়ি তুলে বসবাস করছি। কিন্তু স্থানীয় আজম নামে এক ব্যক্তি এখানে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি তুলে বিক্রি করছে। শহর রক্ষা বাঁধ সংলগ্ন এলাকা থেকে বালি তোলার কারণে আমাদের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করায় উল্টো হুমকি দিচ্ছেন তারা।

আফজাল শেখ বলেন, রাতের বেলায় ভেকু দিয়ে লেয়ার ধরে বালি তুলে নিয়ে যায়। তার জন্য আমাদের ঘর-দুয়ার সব ভাইঙ্গ্যা নিয়ে গেছে। পায়খানা-প্রশ্রাব করবো সেই কায়দাও নাই। টিউবওয়েল নাই, পায়খানা নাই, রান্নার জায়গাও নাই। সব ভাইঙ্গ্যা নিয়ে গেছে।

মজনু শিকদার বলেন, বেড়িবাঁধ থেকে দেড়শ’ ফুট জায়গা সরকারের। আমরা প্রায় পঞ্চাশটি পরিবার এখানে বাড়িঘর তুলে বসবাস করি। এই সরকারি জায়গায় পঞ্চাশ ফুট গভীর করে বালি তুলে নিয়েছে। এ কারণে এভাবে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। এখন এই বেড়িবাঁধও ভাঙার উপক্রম।  

ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু ফকির বলেন, অনেকদিন  ধরে তারা মানুষের ক্ষতি করছে। যখন আমরা অভিযোগ দিই, তারপর দুই তিনদিন হয়ত বন্ধ থাকে। তারপর আবার শুরু হয়। তবে এইবার তারা যা করছে তাতে বেড়িবাঁধ ধরে গেছে। আর মাত্র চার-পাঁচ ফুট ভাঙলেই শহর রক্ষা বাঁধে ভাঙন ধরে যাবে।

এ ব্যাপারে ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলা হবে। আর সেখানে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২৪
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।