বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজের ৭১তম জন্মদিন সাড়ম্বরে উদযাপিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে কেক কাটা, ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময় এবং তার নতুন বই ‘সত্তরের সকালে’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
জন্মদিনের এই বিশেষ আয়োজনে হাসান হাফিজ দেশের অভ্যন্তরে বিদ্যমান ‘জাতীয় সমস্যা, অন্তর্ঘাত ও ষড়যন্ত্র’ মোকাবিলা করে দেশকে গণতান্ত্রিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে কবি হাসান হাফিজের ৭১তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
জাতীয় প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য মীর আব্দুল আলীমের কেক উপহারের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। কেক কাটা পর্ব শেষে প্রেসক্লাবের কর্মচারী ইউনিয়ন প্রথম ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়। ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আইয়ুব ভুঁইয়াসহ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস), গাজীপুর সাংবাদিক সমিতি, জাতীয় কবিতা পরিষদ এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), জাতীয় প্রেসক্লাবের ক্রীড়া উপকমিটি, বেঙ্গল বুকস প্রকাশনীসহ বহু ব্যক্তি ও সংগঠন পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য দেন বাচসাস সভাপতি কামরুল হাসান দর্পণ।
অনুষ্ঠানে কবি হাসান হাফিজ বলেন, আমার পরিবার, তাদের অবদান ও ত্যাগের কারণে আমি কিন্তু এতখানি লেখালেখি করতে পেরেছি।
জাতীয় প্রেসক্লাবের বর্তমান দায়িত্ব প্রসঙ্গে হাসান হাফিজ জানান, একটি দুর্যোগময় মুহূর্তে পরিস্থিতির কারণেই তিনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন, চেষ্টা করে যাচ্ছি সবাই মিলে যেন একটা পরিবার হয়ে আমরা থাকতে পারি।
কবি হাসান হাফিজ সবার প্রতি দেশের সামনে থাকা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের অভ্যন্তরে অনেক জাতীয় প্রবলেম আছে, অন্তর্ঘাত আছে, ষড়যন্ত্র আছে। সেটা যেন আমরা সবাই মিলে ঘুচিয়ে দিতে পারি এবং একটা গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় আমাদের দেশকে নিয়ে যেতে পারি।
বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, হাসান হাফিজ একজন কর্মপাগল মানুষ। যেখানেই তাকে দেখি, গাড়িতে, প্রেসক্লাবের পেছনে বা অন্য যেকোনো স্থানে, সারাক্ষণ তিনি লেখালেখির মধ্যে থাকেন। সাংবাদিকতা তার পেশা হলেও লেখালেখিই তার নেশা।
তিনি আরও বলেন, সাহিত্যের খুব কম শাখা আছে যেখানে তার বিচরণ নেই। তিনি একাধারে কবি, প্রাবন্ধিক, রম্য লেখক, অনুবাদক, সংগঠক, শিশু সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। তার কবিতা ফরাসি, স্প্যানিশ, চীনা, জাপানি, জার্মান, আরবি, ফারসি, উর্দু, হিন্দি এবং চাকমা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
কাদের গনি চৌধুরী আরও বলেন, হাসান হাফিজের কবিতা পাঠের পর চৈতন্যের দুয়ার আটা প্রান্ত উন্মুক্ত হয়ে পড়ে এবং তাতে পাঠকের আনন্দ ও শৈল্পিক সিদ্ধি ঘটে। হাসান হাফিজের কবিতায় প্রেম, ভালোবাসা, দ্রোহ এবং দেশপ্রেমের পাশাপাশি অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়।
কবি মোহন রায়হান বলেন, হাসান হাফিজ তার মেধা দিয়ে, সাহিত্য দিয়ে আর প্রজ্ঞা দিয়ে লড়াই করেছেন। তিনি এদেশের মানুষের সকল আন্দোলনে অগ্রণী সৈনিক ছিলেন। অন্যায়ের সাথে তাকে কখনো আপস করতে দেখিনি।
কূটনীতিক মাসুদ মান্নান বলেন, লেখালেখির পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্য ও সাংগঠনিক কাজে তিনি নিজেকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
কাজী রওনক হোসেন বলেন, হাসান হাফিজ ভাই শুধু কবি ও সাংবাদিক হিসেবেই নন, মানুষ হিসেবেও অসাধারণ। অনেক কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও তিনি সিদ্ধহস্ত। আমি তার দীর্ঘ জীবন ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।
রেজানুর রহমান বলেন, একজন লেখক সব সময় কীভাবে সচল থাকেন, এটার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হাসান হাফিজ।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালীন নোমানী বলেন, তিনি একজন কাজপাগল সরল মানুষ। হাসান হাফিজ ভাই যেন সরকারি স্বীকৃতি পান, সেটাই সরকারের কাছে আমার দাবি।
অনুষ্ঠানে কবি হাসান হাফিজের ‘সত্তরের সকালে’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি খালি কণ্ঠে সংগীত পরিবেশন করেন মুহিন খান, আমীরুল মোমেনিন মানিক ও জেনস সুমন।
যৌথভাবে অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া ও প্রেসক্লাবের সিনিয়র সদস্য কবি শামীমা চৌধুরী।
ইএসএস/এমজেএফ