ঢাকা, সোমবার, ৬ মাঘ ১৪৩১, ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯ রজব ১৪৪৬

জাতীয়

অভাব-অনটনে দিন কাটছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে চাকরি হারানো সেই শিক্ষকের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২৫
অভাব-অনটনে দিন কাটছে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলে চাকরি হারানো সেই শিক্ষকের মাদরাসার চাকরি হারান মো. শাহজামাল

লক্ষ্মীপুর: বিগত ফ্যাসিবাদ শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলায় মাদরাসার চাকরি হারান মো. শাহজামাল নামে এক মাদরাসাশিক্ষক। চাকরি হারিয়ে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাব-অনটনে জীবন কাটছে তার।

চাকরিতে পুনর্বহাল হতে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু চাকরি ফিরে পাওয়ার সুখবর আসছে না।

ভুক্তভোগী শাহজামাল লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার খাতুনে জান্নাত মহিলা দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলেন। ২০১১ সালে তাকে ‘আওয়ামী লীগ বিরোধী' শিক্ষক আখ্যা দিয়ে জোরপূর্বক চাকরি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।  

শাহজামাল জানান, ১৯৯৭ সালে ক্বারি পদে শাহজামাল খাতুনে জান্নাত দাখিল মাদ্রাসায় যোগ দেন। ২০১১ সালে তখনকার মাদরাসা সুপার মুরাদ হাছানের সঙ্গে তার বিরোধ দেখা দেয়। এতে মুরাদ তাকে আওয়ামী লীগবিরোধী শিক্ষক আখ্যা দিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। একই বছর লোকজন দিয়ে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে তার কাছ থেকে সাদাকাগজে সাক্ষর নেন মাদরাসা সুপার। এরপর থেকে তিনি আর মাদরাসায় শিক্ষকতা করতে পারেননি। জীবন রক্ষায় তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে পাঠদান থেকে বিরত থাকতে বাধ্য হন।  

অভিযোগ করে শাহজামাল বলেন, স্বার্থান্বেষী মহল আমাকে অনুপস্থিত দেখিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করে এমপিও তালিকা থেকে আমার নাম বাদ দেয়। এখনো আমার পদে অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। চাকরিটি না থাকায় স্ত্রী-ছেলেমেয়েকে নিয়ে দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছি। চাকরিতে পুনরায় যোগদানের অনুমতির জন্য বিভিন্ন দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েছি, কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না।  

স্থানীয় বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান মেহেদী ও মো. সেলেমান জানায়, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ ক ম রুহুল আমিন। তখন মাদরাসা সুপার মুরাদও আওয়ামী সমর্থিত ছিলেন। এজন্য শাহজামালকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করতেন। একপর্যায়ে কৌশলে তাকে চাকরি থেকে বিতাড়িত করেছেন। ১৯৯৭ সালে যোগদানের পর দীর্ঘ ৭ বছর শাহজামাল বিনা বেতনে চাকরি করেছেন। তখন মানুষের দানের টাকায় মাদরাসা চলতো। চাকরি হারিয়ে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। চাকরিটি ফিরে পেলে তিনি স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারবেন।  

মাদরাসার নৈশপ্রহরী সামছুল হক বলেন, এমপিওভুক্ত হওয়ার আগে শাহজামাল হুজুর বিনা বেতনে চাকরি করেছেন। দীর্ঘ কয়েক বছর তিনি আর মাদরাসায় আসেন না, পাঠদানও করান না। তবে কারণটি বলতে পারছি না।

মাদরাসার বর্তমান সুপার আব্দুল মতিন বলেন, ঘটনাটি ১৩ বছর আগের। এ নিয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।  

অভিযুক্ত মাদরাসার সাবেক সুপার মুরাদ হাছান বলেন, ঘটনার দিন আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে ছিলাম। মাদরাসা থেকে আমাকে মোবাইলফোনে জানানো হয় এক ছাত্রীর সঙ্গে শাহজামাল অসদাচরণ করেছেন। এর প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে তিনি চাকরি হারিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মামুন বলেন, ঘটনাটি অনেক পুরোনো। পুরোপুরি জানা নেই। শাহজামালকে আসতে বলেছি, ওনার কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে হবে। পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২০, ২০২৫
এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।