ঢাকা, সোমবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৯ মে ২০২৫, ২১ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

আন্দোলন স্থগিত করলেও ঢাকায় অবস্থান করবেন চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:০১, মে ১৮, ২০২৫
আন্দোলন স্থগিত করলেও ঢাকায় অবস্থান করবেন চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা আন্দোলনে চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা/ছবি: ডিএইচ বাদল

ঢাকা: গ্রেপ্তারকৃত সাবেক সৈনিক নাইমুল ইসলামকে মুক্তি দেওয়া ও তিন দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করেছেন চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। তবে দাবি আদায়ে লিখিত না দেওয়া পর্যন্ত তারা ঢাকায় অবস্থান করবেন।

পাশাপাশি আগামী সোমবারের (১৯ মে) মধ্যে গ্রেপ্তারকৃত সৈনিককে মুক্তি ও দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে লিখিত না দেওয়া হলে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা।

রোববার (১৮ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে দ্বিতীয় দফা বৈঠক শেষে বের হয়ে এ কথা জানান আন্দোলনকারীরা।

বৈঠক থেকে বের হয়ে চাকরিচ্যুত সেনা সদস্য মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা বলেছি, আমাদের গ্রেপ্তার হওয়া বরখাস্ত সৈনিক মো. নাঈমুল ইসলামকে মুক্তি দিতে হবে। সেনা কর্মকর্তারা বলেছেন, আজকে যেহেতু অফিস সময় শেষ হয়েছে এবং তাকে গ্রেপ্তার করে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমাদের প্রতিনিধিদল লেফটেন্যান্ট ইফতেখার স্যারসহ কাল তার মুক্তির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবো। যেহেতু অফিস সময় শেষ হয়ে গেছে, আজকে তার মুক্তি দেওয়া সম্ভব হবে না।

চাকরির পুনর্বহালের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, যাদের চাকরির বয়স ১০ বছরের নিচে তাদের চাকরি ফেরতের বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন সেনা কর্মকর্তারা। আর যাদের বয়স নেই তাদের পেনশনের আওতাভুক্ত করার কথা জানানো হয়েছে।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আমাদের প্রতি সদয়। তারা আমাদের দুইটি অপশন দিয়েছেন। যারা আমাদের মাঝে রেকর্ডেড কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি, তাদের আর নতুন করে অ্যাপ্লিকেশন করা লাগবে না। আর যারা অ্যাপ্লিকেশন জমা দেয়নি এবং রেকর্ডেড কার্যক্রম সম্পন্ন করেনি তাদের বাই নেমে আজ রাতের মধ্যে তা জমা দিতে হবে। আমরা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফ স্যার বরাবর সেই দরখাস্তগুলো পাঠাবো। আমরা আশা করবো আজকের আলোচনা ওনারা সেনাপ্রধানের কাছে তুলে ধরবেন।

তিনি আরও বলেন, তারা আমাদের লিখিত দিবে এই দাবি দাওয়ার বিষয়ে। আমরা লিখিত দেবো যে আমরা এ পরিস্থিতিকে কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করবো না। তবে দাবি আদায় না হলে আবারও আন্দোলনে নামা হবে। কালকে আমরা দেখবো নাইমুলকে মুক্তি দেওয়া হয় কি না। আজ আমরা সবাই ঢাকায় অবস্থান করবো। তাকে যদি মুক্তি না দেওয়া হয় এবং আমাদের দাবির বিষয়ে লিখিত দেওয়া না হয়, তাহলে আবার আমরা কর্মসূচি দেবো।

চাকরিচ্যুত সদস্য মো. শামীম বলেন, আমরা আগামীকাল সেনাসদরে যাবো। সেখান থেকে বিবৃতি নিয়ে আপনাদের সিদ্ধান্ত জানাবো। আমাদের সদস্যদের মধ্যে প্রায় ৩০ জন সদস্য যারা প্রবাসে রয়েছেন তাদের নাম, নাম্বারসহকারে আগামীকালের মধ্যে সেখানে পাঠানোর কথা বলেছে।

‎তিনি বলেন, আমরা যারা চাকরিচ্যুত আছি, আমাদের বাসায় বা আমাদের পরিবারের সদস্যদের যাতে কোনো ধরনের হুমকি দেওয়া না হয় সেই ব্যাপারেও তারা আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা যদি কোনো ধরনের নাশকতা না করি। কোনো ধরনের হয়রানি করবেন না। তারা আমাদের প্রতি সদয় ও সহনশীল। তারা আমাদের বলেছে আগামীকাল আমরা একটা মুচলেখা দেবো এবং তারাও একটা মুচলেখা দেবে।

এর আগে দুপুর ১২টায় ‘বাংলাদেশ সহযোদ্ধা প্ল্যাটফর্ম-বিসিপি’র ব্যানারে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে জাহাঙ্গীর গেট অভিমুখে লং মার্চ বের করেন চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। তখন তাতে বাধা দেয় পুলিশ। পর দুপুরে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমিনুর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রেস ক্লাবে এসে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বিকেল ৪টায় বৈঠক শেষে তারা দাবি মেনে নেওয়ার মৌখিক আশ্বাস দিলে আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে। এ সময় তারা প্রতিনিধিদলের গাড়ির সামনে শুয়ে তাদের পথ রোধ করেন।

পরে সন্ধ্যা ৬টায় পুনরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে সেনাসদর থেকে আসা প্রতিনিধিদল। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় দ্বিতীয় দফা বৈঠক থেকে বের হয়ে আর প্রেস ক্লাবে অবস্থান করেনি সেই প্রতিনিধিদল। তারা দ্রুত গাড়িতে উঠে প্রেস ক্লাব থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীরা গেট আটকে দেয়। তখন প্রেস ক্লাবে আগে থেকে অবস্থান করা সেনা সদস্যরা আন্দোলনকারীদের জোর করে সেখান থেকে সরিয়ে দিলে গাড়িগুলো প্রেস ক্লাব থেকে বেরিয়ে সেগুনবাগিচার রাস্তায় ঢুকে যায়। তখন তাদের পেছন পেছন আন্দোলনকারীরা যেতে থাকলে সেনা সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় কয়েকজনকে লাঠিচার্জ করা হয় বলে আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করেন।

এসসি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।