ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ১২ আগস্ট ২০২৫, ১৭ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

প্রাইভেটকারে দুই লাশ: পরিবারের দাবি ‘হত্যা’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:২৪, আগস্ট ১২, ২০২৫
প্রাইভেটকারে দুই লাশ: পরিবারের দাবি ‘হত্যা’ জাকির ও মিজানুর

ঢাকা: রাজধানীর মৌচাকের ড. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেজমেন্টের পার্কিংয়ে গাড়িতে জাকির ও মিজানুর নামে যে দুজনের লাশ মিলেছে, তারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে থাকতে পারেন বলে দাবি স্বজনদের।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে তারা এ অভিযোগ তোলেন।

নিহত দুজন হলেন প্রাইভেটকারটির চালক জাকির ও তার বন্ধু মিজানুর। এর মধ্যে জাকির নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার লটপটিয়া গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে এবং মিজানুর উপজেলার দক্ষিণ গোমাতলী গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে।

মর্গে মিজানুরের ভাগিনা মো. রিয়াদ বলেন, আমার মামা আগে গ্রামে বালু ব্যবসা করতেন। তবে সেই ব্যবসা বাদ দিয়ে আপাতত মাছের খামার করছিলেন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নন। জাকির আর মিজানুর বন্ধু। জাকির প্রাইভেটকার চালাতেন, আর প্রায়ই মিজানুরকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন এবং তাকেও গাড়ি চালানো শেখাতেন। শনিবার (৯ আগস্ট) রাতেই তারা দুজন, গাড়ির মালিক ও মালিকের সম্বন্ধী গ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। মালিকের সম্বন্ধীর ওইদিন রাতে বিদেশে যাওয়ার ফ্লাইট ছিল। গ্রামের এক রোগী আবার সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন, ঢাকা থেকে পরদিন ওই রোগীকে নিয়ে গ্রামে ফেরার কথা ছিল তাদের। এরপর কী হয়েছে আমরা জানি না। তবে তাদের মেরে ফেলা হয়েছে এটা বুঝতে পারছি।

জাকিরের বাবা কৃষক মো. আবু তাহের বলেন, আমার ছেলের কারও সঙ্গে কোনো ঝগড়াঝাঁটি নেই। কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। কারা তাকে মেরেছে তাও জানি না। তবে, গত দুই বছর আগে আমেরিকা যাওয়ার জন্য এলাকার এক দালালকে টাকা দিয়েছিলাম। সেই দালাল তাদের নিয়ে এসেছিল ঢাকায় পল্টনে এক ট্রাভেল এজেন্সির ফজলু নামে এক ব্যক্তির কাছে। সব মিলিয়ে তখন প্রায় ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছিল। এরপর জাকিরকে শ্রীলঙ্কা নিয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে অবৈধ পথে আমেরিকা পাঠানোর কথা ছিল। তবে তখন সেটি পারেনি। এরপর আরও কিছু টাকা দিয়ে তাকে আমরাই দেশে ফেরত আনি।

তিনি বলেন, এরপর থেকে ফজলুর কাছে সেই টাকা ফেরত চাইতে গেলে তিনি কিছুদিন পর টাকা ফেরত দেবেন বলে জানান। এরপর বহুবার তার পেছনে ঘুরেও টাকা ফেরত পাচ্ছিলাম না। এই টাকা চাওয়ার কারণে তারা আমার ছেলেকে একবার মারধরও করেছিল। সবশেষ কিছুদিন আগে এলাকায় দালালের সঙ্গে কথা হয় এবং দালাল স্ট্যাম্পে সই করে যে, চলতি মাসের ১০ তারিখে সেই টাকা ঢাকায় এজেন্সিতে এসে ফেরত দেবে। কিন্তু ওই ১০ তারিখেই জাকিরকে মেরে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনা তারাই ঘটিয়েছে বলে আমাদের ধারণা। তারা ছাড়া আর কেউ এটি করতে পারে না।

প্রাইভেটকারের মালিক জোবায়েদ আল মাহমুদ সৌরভ জানান, মৃত দুজন ও তার বাড়ি একই উপজেলায়। ১১ বছর ধরে গাড়ির ব্যবসা করেন তিনি। তিনমাস ধরে তার প্রাইভেটকার ভাড়ায় চালাচ্ছিলেন জাকির। শনিবার তার সম্বন্ধী ইতালি যাবেন বলে রাতে গাড়িতে করে চারজন ঢাকায় আসেন। তাকে বিমানবন্দর নামিয়ে দিয়ে তিনজন মৌচাক সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে তাদের গ্রামের এক রোগী ভর্তি আছেন। তাকে রোববার (১০ আগস্ট) সকাল ১১টায় ছুটি দেওয়ার কথা ছিল। শনিবার ভোরে হাসপাতালে পৌছানোর পর মালিক সৌরভ সিদ্ধান্ত নেন, তিনি বাসে করে গ্রামে চলে যাবেন, আর জাকির ও মিজানুর সকালে রোগীসহ গ্রামে ফিরবেন। সেই কথামত তিনি বাসে করে চলে আসেন আর ওই বাসের টিকিট কেটে দেন জাকির।  

এরপর রোববার বিকেলে প্রথমে তিনি জাকিরকে ফোন দেন গাড়ি নিয়ে ফিরেছেন কি না জানার জন্য। কিন্তু তার ফোন রিসিভ হচ্ছিল না। এরপর থেকে অনেকবার চেষ্টা করেও জাকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। পরদিন অর্থাৎ সোমবারও (১১ আগস্ট) যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। সোমবার বিকেলে তিনি ঢাকায় আসার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এর আগে অর্থাৎ সোমবার বেলা ৩টার দিকে রমনা থানা পুলিশ তাকে ফোনকল করে জানায়, হাসপাতালের পার্কিংয়ে তার গাড়ির ভেতর থেকে দুজনের লাশ পাওয়া গেছে।

এর আগে, মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে রমনা থানা পুলিশ। প্রতিবেদনে উপপরিদর্শক (এসআই) আওলাদ হোসেন উল্লেখ করেন, তাদের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ফোলা ও ফোসকা পড়া। এছাড়া মুখ লালচে ফোলা ও রক্তমাখা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে তাদের মৃত্যুর কোনো কারণ উল্লেখ নেই প্রতিবেদনে।

রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম বাংলানিউজকে বলেন, সিসিটিভি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, গাড়িতে তারা দুইজন ছাড়া বাইরের কেউ ছিলেন না। গাড়ির মালিক ভোরের দিকে সেখানে গাড়ি থেকে নেমে চলে যান। তখন চালক গাড়িটি আন্ডারগ্রাউন্ডে পার্কিং করেন। এর আগে মিজান গাড়ি থেকে নেমে গেলেও আবার ওঠেন। সিসিটিভির ফুটেজে এরকম দৃশ্যই দেখা গেছে।

তাদের শরীরে তেমন কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে মাসুদ আলম বলেন, গাড়ির ভেতর থেকে উল্লেখযোগ্য কিছুই পাওয়া যায়নি। বেজমেন্টে সাফোকেশন থাকে, প্রচণ্ড গরম। গরমের কারণে মরদেহ কিছুটা পচে গেছে। এছাড়া প্রাইভেটকারের দরজাগুলো লাগানো থাকলেও সেগুলোর লক ছিল না।

আরও পড়ুন: প্রাইভেটকারে দুই লাশ: সিসিটিভি ফুটেজ দেখে যা বলছে পুলিশ

এজেডএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।