ঢাকা, বুধবার, ৫ ভাদ্র ১৪৩২, ২০ আগস্ট ২০২৫, ২৫ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

টনসিলের অপারেশনে অ্যানেস্থেসিয়া, জ্ঞান ফেরেনি সায়রার

অতিথি করেসপন্ডেন্ট, সাভার (ঢাকা) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:২১, আগস্ট ২০, ২০২৫
টনসিলের অপারেশনে অ্যানেস্থেসিয়া, জ্ঞান ফেরেনি সায়রার সায়রা আমিন

সাভারে টনসিলের অপারেশনের পর আর জ্ঞান ফেরেনি সাত বছরের শিশু সায়রা আমিনের। স্বজনদের অভিযোগ, অপারেশনে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণেই প্রাণ গেছে তাদের আদরের সন্তানের।

 

পরিবারের ভাষ্য, সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবুল বাশার ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাত্র দুই হাজার টাকায় ক্রাউন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অপারেশন থিয়েটার ভাড়া নেন। সেখানে অ্যানেস্থেসিয়ার জন্য ডাকেন একই হাসপাতালের আরেক চিকিৎসক ডা. ইরফানকে। কিন্তু অপারেশনের পর থেকে আর জ্ঞান ফেরেনি সায়রার।

শিশুটির বাবা বনি আমিন বলেন, আগেও ডা. আবুল বাশারের কাছে চিকিৎসা নিয়েছিলেন তারা। সেই পরিচয়ের সূত্রেই টনসিলের সমস্যার সমাধানে এই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। গত ১৮ আগস্ট চিকিৎসকের পরামর্শে সায়রাকে ক্রাউন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওইদিনই অপারেশনের সময় ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

সায়রার চাচা সুমন বাংলানিউজকে বলেন, অপারেশনের আগে আবুল বাশারের কাছে চিকিৎসা নেওয়া হয়েছে। তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে আমরা ক্রাউন হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সায়রাকে ভর্তি করি। তিনদিন আগে অপারেশনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেন আবুল বাশার। অপারেশনের আগে ৭ বছর বয়সী সায়রার ওজন ছিল মাত্র ১২ কেজি। কিন্তু আবুল বাশার বলেছিলেন, অপারেশন করলে কোনো সমস্যা হবে না। তাই গত ১৮ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অপারেশনের জন্য। অপারেশনের আগে অ্যানেস্থিসিয়া ডাক্তার ইরফান এসে ইনজেকশন দেন। সাধারণত টনসিলের অপারেশনে অ্যানেস্থিসিয়া করার ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর রোগীর জ্ঞান ফেরার কথা, কিন্তু অপারেশনের পর সায়রার জ্ঞান ফেরেনি। অপারেশন শেষে ডাক্তার বের হয়ে আমাদের বলেছে, অপারেশন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে, ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর জ্ঞান ফিরবে। এসময় নানা ইন্সট্রাকশন দিয়ে যান তিনি। কিন্তু দুই ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও সায়রার জ্ঞান না ফেরায় আবুল বাশারকে ডেকে আনি। বিকেল ৫টার দিকে তিনি রক্ত সংগ্রহ করতে বলেন। তার কথামতো রক্তও ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমার ভাতিজির জ্ঞান ফেরেনি।  

অন্যদিকে, অ্যানেস্থেসিয়া ডাক্তার ইরফান অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, আমি ডাবল ডিগ্রিধারী। রোগী যে অনেক দূর্বল ছিল, ওজন কম ছিল এসব কথা তার পরিবার গোপন করেছিল। আগে আমাদের বলে নাই, অপারেশনের পরে এসব তথ্য দিয়েছেন। আমরা যথাযথ নিয়ম মেনেই অপারেশন করেছি। তাছাড়া রোগীর পরিবারের কোনো অভিযোগ নেই, লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলে গেছেন।

এ বিষয়ে জানতে নাক-কান ও গলার ডাক্তার পরিচয় দেওয়া ডা. বাশারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দেওয়া হয়। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে তার মোবাইল নম্বরও বন্ধ পাওয়া যায়।  

অন্যদিকে, ক্রাউন হসপিটালের জেনারেল ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ বলেন, শিশুটি ডাক্তারদের মাধ্যমেই ভর্তি হয়েছিল। আমাদের হাসপাতাল শুধু ৩০ মিনিটের জন্য ২ হাজার টাকায় অপারেশন থিয়েটার ভাড়া দিয়েছে। রোগীও আমাদের না, ডাক্তারও আমাদের নয়। পুরো দায় ডাক্তারদের। পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই তারা অপারেশন করেছেন।

তবে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন, আবুল বাশার নামে একজন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আমাদের হাসপাতালে কর্মরত। তবে তিনি কোনো সার্জন নন।

এ বিষয়ে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদ আল হাসান বলেন, ঘটনা শুনেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

একই দিনে সাভার স্পেশালাইজড হাসপাতালে টনসিল অপারেশনের সময় মারা গেছে আরেক শিশু রাতুল (১৩)। সে মানিকগঞ্জের বাসিন্দা ছিল। সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুয়েল মিয়া বলেন, একই দিনে দুটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে এক শিশুর স্বজন লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।