চীনে আকর্ষণীয় বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে বাংলাদেশি মেয়েদের পাচার করে জোরপূর্বক দেহব্যবসায় বাধ্য করার অভিযোগে আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের মূলহোতাসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্রের মূলহোতা আব্বাস মোল্লা (৩৬) এবং তার সহযোগী জাহিদুল ইসলাম ওরফে বাবু (৩১), মিনার সরদার (৩০) ও মোহাম্মদ রিপন শেখকে (২৮) গ্রেপ্তার করে র্যাব।
আসামিদের বিরুদ্ধে আগে থেকেই মানব পাচারের মামলা ছিল। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই তারা র্যাব কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়েছেন।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক (র্যাব-৪) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম।
মাহবুব আলম জানান, একটি আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্র বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অল্পবয়সী নারীদের চীনে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করত। সেখানে নিয়ে গিয়ে তাদের জোরপূর্বক দেহব্যবসায় বাধ্য করা হতো এবং ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো।
সম্প্রতি এক ভুক্তভোগী ও তার খালাতো বোনের এমন অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে র্যাব একটি ছায়া তদন্ত শুরু করে। অভিযোগে বলা হয়, তারা দুজন পিরোজপুরের একটি বিউটি পার্লারে কাজ করতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আসামি জাহিদুল ইসলাম বাবু। তিনি চীনে বিউটি পার্লারে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে তাদের ঢাকায় নিয়ে আসেন এবং চক্রের মূলহোতা আব্বাস মোল্লার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।
চক্রের সদস্যরা ভুক্তভোগীদের জানায়, চীনে গিয়ে তারা প্রতি মাসে এক লাখ টাকা বেতন পাবেন এবং সেখানে পৌঁছানোর পর আরও ১০ লাখ টাকা বোনাস দেওয়া হবে। পরবর্তীতে চক্রের নারী সদস্য সিলভির মাধ্যমে তাদের পাসপোর্ট ও ভিসা করিয়ে চীনে পাঠানো হয়।
চীনে পৌঁছে ওই দুই বোনকে আলাদা দুটি বাসায় আটকে রেখে জোরপূর্বক দেহব্যবসায় বাধ্য করা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে এক বোন অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। তবে অন্য বোন এখনও চীনে বন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে র্যাব জানিয়েছে।
র্যাব-৪’র অধিনায়ক জানান, দেশে ফিরে আসা ভুক্তভোগী আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বোনকে ফেরত আনার অনুরোধ জানান। কিন্তু আব্বাস মোল্লা তাকে মিথ্যা আশ্বাসে অনৈতিক সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করে এবং শারীরিক নির্যাতন চালায়। পরে ভুক্তভোগী থানায় মামলা করেন ও র্যাবের সহযোগিতা চান।
তারই পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আব্বাস, জাহিদুল, মিনার ও মোহাম্মদ রিপনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা স্বীকার করেছে, তারা গত আট বছরেরও বেশি সময় ধরে তরুণীদের চীনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে আসছে। অনেক সময় তারা ভুক্তভোগীদের চীনা নাগরিকের সঙ্গে বিয়ের প্রলোভনও দেখাতো, যাতে সহজে দেশত্যাগে রাজি হয়।
র্যাব জানায়, আব্বাস ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এর আগেও মানব পাচারের মামলা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
এমএমআই/এমজে