বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিদিন ৪৪২ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আইন থাকলেও, প্রয়োগ না থাকা এবং তামাক কোম্পানিগুলোর হস্তক্ষেপের কারণে এটি বন্ধ করা যাচ্ছে না।
বুধবার (২৭ আগস্ট) ধানমন্ডির ডাম অডিটোরিয়ামে ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টর আয়োজিত ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র এফসিটিসি’র বাস্তবায়ণ ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী দ্রুত পাস’ শীর্ষক গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি ডা. মোহাম্মদ খলিলউল্লাহর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক হাসান হাফিজ, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ্, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের স্বাগত বক্তব্যে সভায় কো-সভাপতি হিসেবে ছিলেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. শহিদুল আলম।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক।
তিনি বলেন, বিশ্বে প্রতি বছর তামাকের কারণে ৭০ লাখের অধিক মানুষ অকালে প্রাণ হারান। এর মধ্যে ১৬ লাখ মানুষ প্রাণ হারান পরোক্ষ ধূমপানের কারণে। বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ৩০ হাজার ১৩৫ জন মানুষ মারা যান তামাকের কারণে। বিশ্বজুড়ে প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান আটটি কারণের ছয়টির সাথেই তামাকজড়িত।
তামাক কোম্পানিগুলোর প্রভাব তামাক নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যগুলো সফল হতে দেয় না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এর ফলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আন্তর্জাতিক চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) আর্টিক্যাল ৫ দশমিক ৩ হলো তামাক নিয়ন্ত্রণ তথা জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার একটি রক্ষাকবজ। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিমালায় স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ও এগুলোকে তামাক কোম্পানির প্রভাবমুক্ত রাখতে এ অনুচ্ছেদ বা ধারা বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে মন্তব্য করে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ বলেন, ধূমপায়ীর সংখ্যা বেড়েছে। যেটা খুবই উদ্বেগজনক ও আমাদের মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। শুধু আইন করে তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। পারিবারিকভাবে এই শিক্ষাটা দিতে হবে। এটাকে একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে নিতে হবে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এটি যুক্ত করতে হবে। এই দাবিটা আমাদের তুলতে হবে।
ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাধারণ সম্পাদক এম এম বাদশাহ্ বলেন, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার তুলনায় তামাক ব্যবহারে মৃত্যুর হার বেশি। কিন্তু আমরা (সাংবাদিক) যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রচার করি, তামাক নিয়ে করি না। সরকার তামাক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে চাই। কিন্তু সেই চাওয়ার ভেতরে যে ফাঁকগুলো আছে, সেখানে আমাদের আরো অনেকের দায় রয়ে গেছে। সরকারের সাথে নীতিনির্ধারকদের দায় রয়ে গেছে।
সভার কো-সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. শহিদুল আলম বলেন, তামাক ব্যবহার বন্ধ করার বিষয়টিকে আমাদের সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে এমন সরকার না এলে এটি সমাধান করা কঠিন হবে। দ্রুত এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫ দশমিক ৩ বাস্তবায়ন করতে হবে।
সভপতির বক্তব্যে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি ডা. মোহাম্মদ খলিলউল্লাহ বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে আমরা এখনো আইন প্রণয়ন করে সচেতনতা তৈরি করতে পারিনি। কিন্তু আমাদের এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আমরা তামাক ব্যবহার যত কমাতে পারি সেই লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে।
সভায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও তামাকজনিত মৃত্যু হ্রাসে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়া সংশোধনী অবিলম্বে পাস এবং ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র এফসিটিসি’র বাস্তবায়ণের দাবি জানানো হয়।
এসসি/এএটি