ঢাকা: ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থান এবং নাজিমউদ্দিন রোডে ছয়জন হত্যার ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধানত দায়ী করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ সাক্ষ্য দিয়েছেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার সাক্ষ্যে আন্দোলনের পুরো ঘটনাক্রম এবং সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের নাম তুলে ধরেছেন। তিনি ৫ আগস্ট নাজিমউদ্দিন রোডে ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ সারাদেশে হওয়া হত্যাযজ্ঞের জন্য সব কমান্ডিং অথরিটি, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং সরাসরি গুলি চালানো পুলিশ সদস্যদের দায়ী করেন।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, ৫ আগস্ট ‘লং মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সময় ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। সেখানে পুলিশের গুলিতে তার সামনেই দু’জনসহ মোট ছয়জন নিহত হন। তিনি এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনটি বিনা উসকানিতে সরকারের হামলায়, বিশেষ করে ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের হামলায় সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ ধাপে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা, ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট এবং আন্দোলনকারীদের গুম করে নিয়ে যাওয়া হয় উল্লেখ করে আসিফ মাহমুদ জানান, ডিবিতে আটক থাকা অবস্থায় গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের জানানো হয় যে তাদের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক) হত্যা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সরাসরি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৯ জুলাই তাকে রাজধানীর গুলশান নিকেতন এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আন্দোলন প্রত্যাহারের ভিডিও বার্তা দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে ইনজেকশন পুশ করে অজ্ঞান করে রাখা হয়। পরবর্তীতে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষায় ‘প্যাথেডিন’ পুশ করার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।
আসিফ মাহমুদ বলেন, ১৮ জুলাই থেকে সেতু ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন লাগিয়ে সেই দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এই স্থাপনাগুলো সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় আগুন লাগানো হয় এবং এর দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ব্যাপক ধরপাকড় চালানো হয়েছিল।
তিনি জানান, তার সাক্ষ্য গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান আছে এবং আগামী সপ্তাহে একই দিনে তিনি আবারও সাক্ষ্য দেবেন।
এই মামলায় আটজন আসামি। এর মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ্ আলম মো. আখতারুল ইসলাম এবং রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল পলাতক।
আসামি শাহবাগ থানার সাবেক পরিদর্শক আরশাদ হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন হোসেন, ইমাজ হোসেন ও মো. নাসিরুল ইসলাম গ্রেপ্তার আছেন।
এ মামলায় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ১১ এপ্রিল তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, চানখাঁরপুল এলাকায় আসামিরা নিরস্ত্র ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর ‘প্রাণঘাতী’ অস্ত্র ব্যবহার করে শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক এবং মানিক মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে।
এ ঘটনায় ১৪ জুলাই অভিযোগ গঠন করা হয়। আর ১০ আগস্ট থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।
ইএসএস/এইচএ/