রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়ির অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৬ জন। পোড়া সেই লাশগুলো আনা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরিবিভাগের মর্গে।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স যোগে লাশ বহন করা ব্যাগে পোড়া ১৬ দেহ ঢামেক হাসপাতালের জরুরিবিভাগের মর্গে নিয়ে আসেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই পোড়া লাশগুলো মর্গের সামনে রাখা হলে সেখানে সারিবদ্ধভাবে জড়ো হয় নিখোঁজের খোঁজে স্বজনরা। মর্গের সামনে তখন হৃদয়বিদারক দৃশ্য, প্রিয়জনের খোঁজে ভিড় করতে থাকেন স্বজনরা। কারো হাতে নিখোঁজ সন্তানের ছবি, কারো চোখে অশ্রুর ধারা। কেউ ভাইয়ের জন্য, কেউ বাবার জন্য, আবার কেউ খুঁজছেন জীবনের একমাত্র অবলম্বনকে। তাদের কান্না আর আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতাল মর্গ।
ছবি হাতে তেমনি দুইজন স্বজন দাবি করেন, এক সপ্তাহ আগে মিরপুরের শিয়ালবাড়ির ওই পোশাক কারখানায় চাকরি নিয়েছিলেন জয়মিয়া (২০) ও তার স্ত্রী মারজিয়া সুলতানা (১৮)। এই অগ্নিকাণ্ডের পর থেকেই তারা নিখোঁজ রয়েছেন। মর্গের সামনে যতটুকু সম্ভব পোড়া লাশগুলো দেখে নিখোঁজ থাকা দুইজনকে শনাক্তর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সেখানে থাকা অন্যান্য স্বজনদের মতোই লাশগুলো পোড়ার কারণে শনাক্ত করতে পারেননি। এমন আরও অনেকেই ছবি হাতে মর্গের সামনে থাকা ব্যাগের ভেতরে লাশগুলোর দিকে তাকিয়ে আপনজনদের চেনার চেষ্টা করতে দেখা যায়।
ঢামেক হাসপাতালের জরুরিবিভাগের আবাসিক সার্জন ডা. মোস্তাক আহমেদ বলেন, রাত সাড়ে ৮টার দিকে তিনটি অ্যাম্বুলেন্স যোগে ১৬ লাশ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরমধ্যে নয় জন পুরুষ ও সাতজন নারী। এদের শরীরের বেশিরভাগই পুড়ে গেছে।
তিনি বলেন, আপাতত এসব লাশ জরুরিবিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। আগামীকাল থেকে লাশের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তারপর আইনানুযায়ী পুলিশ পর্যায়ক্রমে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এ ছাড়া ময়নাতদন্তরও একটি বিষয় আছে সেগুলো পুলিশ দেখবে। কারণ প্রতিটি লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করবে পুলিশ। তারপরে ঢামেক মর্গে সেই লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন জমা দিলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা ময়নাতদন্ত শুরু করবেন।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানা ও কেমিক্যাল গোডাউনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও কেমিক্যাল গোডাউনে আবার জ্বলে উঠতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ কেমিক্যাল গোডাউনের স্থান থেকে এখনও ধোঁয়া বেরোচ্ছে। কেমিক্যালের আগুন আর অন্য আগুনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে তবে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা রাতেও কাজ করে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১৪ অক্টেবর) সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই পোশাক কারখানা ও একটি কেমিক্যাল গোডাউনে লাগা অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পায় ফায়ার সার্ভিস। প্রথমে সেখানে আটটি ইউনিট পাঠানো হলেও পরে ইউনিট বাড়িয়ে ১২টি করা হয়। একপর্যায়ে আগুন কিছুটা আয়ত্তে আনার পরে পোশাক কারখানার ভেতর থেকে প্রথমে নয়জনের লাশ উদ্ধার করে। এরপরে সন্ধ্যায় সর্বমোট ১৬ লাশ উদ্ধারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস বলছে, ধারণা করা হচ্ছে প্রথমে একতলা টিনশেড (উচ্চতার কারণে দোতলা সমতুল্য) কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনের সূত্রপাত হয়। সেই আগুন সামনে থাকা তিনতলা পোশাক কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। কারখানা থেকেই বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা ১৬ লাশ উদ্ধার করা হয়। অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানার ছাদের গেটে তালা মারা ছিল বলে অগ্নিনির্বাপণের পরে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা সেটি দেখতে পান। এ ছাড়া দুটি কারখানায় কোনো নির্বাপন যন্ত্র তো দূরের কথা আগুন নির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
এজেডএস/এএটি