ঢাকা: যানজটে জর্জরিত নগরবাসী। যানজট থেকে মুক্ত করতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
এই রেলপথ বাস্তবায়িত হলে ঢাকাসহ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও মুন্সিগঞ্জের মানুষ কোনো ধরণের যানজটে না পড়েই ঢাকায় আসতে পারবেন। এর পরে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে পুনরায় নির্দিষ্ট স্থানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়তে পারবেন তারা।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চারপাশে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ করা হলে ঢাকার উপরে চাপ কমবে। অনেকে বাড়তি আবাসন খরচ না করে ঢাকার আশেপাশে বসবাস করবেন।
ঢাকার চারপাশে রেলপথ নির্মাণ করার জন্য প্রথমে ঢাকা শহরের চতুর্দিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের উপর সম্ভাব্য সমীক্ষা করা হবে। এর পরেই মূল প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। সম্ভাব্য সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরবর্তীতে বড় আকারে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। যেখানে উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থার অর্থায়নের প্রয়োজন হবে।
সে লক্ষে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। ২০১৬ সাল থেকে ২০১৭ মেয়াদে জরুরি ভিত্তিতে সমীক্ষা চালানো হবে ঢাকার চারপাশে। জরুরি ভিত্তিতে সরকারি অর্থায়নে সমীক্ষা চালানো হবে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কমল কৃষ্ণ ভট্টাচার্য্য বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকাবাসীকে যানজট মুক্ত করতে হলে সার্কুলার রেলপথ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। প্রতিদিনই ঢাকায় জনসংখ্যা বাড়ছে সেই তুলনায় ইচ্ছা করলেই ঢাকার অভ্যন্তরীণ সড়কের স্পেস বাড়াতে পারবো না। কিন্তু ঢাকার চারপাশে রেলপথ করার যথেষ্ট সুযোগ আছে সেটাকে কাজে লাগাতে চাই। এই লক্ষ্যে মূল প্রকল্প হাতে নেয়ার আগে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডির কাজ শুরু করে দিয়েছি। ’
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্ভাব্য রেলপথটি হবে আব্দুল্লাহপুর-ধউর-বিরুলিয়া-গাবতলী-রায়েরবাজার—বাবুবাজার-সদরঘাট-ফতুল্লা-চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড-শিমরাইল-পূর্বাচল সড়ক থেকে তেরমুখ পযর্ন্ত। এছাড়া এর পাশাপাশি নৌরুটও করা হবে যেখানে উন্নত মানের ওয়াটার বাস চলাচল করবে। নৌরুটের পাশে নদীতীর ঘেঁষে হবে ইকোপার্ক, ওয়াকওয়ে। এজন্যও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে রেলওয়ের এক প্রতিনিধি বাংলানিউজকে জানান, প্রকল্পের সমীক্ষা সম্পন্ন করা হলে এর ফলাফলের ভিত্তিতে উন্নয়ন সহযোগীর অর্থায়ন অনুসন্ধান করা হবে। সেই লক্ষ্যে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকার চারপাশে সমীক্ষা চালানো হবে যার মাধ্যমে রেলপথ নির্মাণের প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা যায়। ’
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে যানজটের সমস্যা থেকে নগরবাসীকে স্বস্তি দেয়া। বর্তমানে ঢাকা শহরে দেড় কোটি মানুষের বসবাস। প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নগরীর আয়তন। এর পাশাপাশি বাড়ছে নগরীর জনসংখ্যা। এছাড়া ভেঙে পড়ছে ট্রাফিক ব্যবস্থা, যে কারণে প্রতিদিন কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে। যানজট থেকে রক্ষা করতে হলে ঢাকার চারপাশে রেলপথের কোনো বিকল্প নেই।
এ লক্ষ্যে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ঢাকার চারপাশে সার্কুলার রুটের জন্য একটি সমীক্ষা চালাচ্ছে। রাজধানী ঢাকার চারপাশে ৯১ কিলোমিটার সার্কুলার নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। প্রাথমিক প্রকল্পের সার-সংক্ষেপ প্রস্তুতির কাজ চলছে। ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এসটিপি) ঢাকা সার্কুলার রোডকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঢাকা সার্কুলার রোড প্রকল্পের সড়ক-নৌরুট ছাড়াও রেল লাইন স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়েছে এই মহা পরিকল্পনায়।
ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেটর অথিরিটির (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক কায়কোবাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার চারপাশে ৯১ কিলোমিটার সার্কুলার রুটের সমীক্ষা করেছি। এই রুটের পাশ দিয়ে রেলপথ নির্মাণ করা যাবে এতে কোনো ধরণের সমস্যা হবে না। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা মাথায় রেখেই রেলপথ নির্মাণের ব্যবস্থা রেখেছে সার্কুলার রুটের পাশে। শুধু সার্কুলার রেলপথই নয় ইচ্ছা করলে মেট্রোরেল নির্মাণ করা যাবে এই পথ ঘেঁষে। ’
২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে ঢাকার পারদিকে সার্কুলার ট্রেন চালু করার নির্দেশ দেন। এর আলোকেই প্রকল্পটি দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রহণ করতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।
ঢাকার চারপাশে ৯১ কিলোমিটার সার্কুলার রুট করার পরিকল্পনা নেয়া হলেও রেলপথের দৈর্ঘ্য হবে ৮০ কিলোমিটার। ৮০ কিলোমিটার রেলপথ কয়েকটি ধাপে বাস্তবায়িত হবে । তবে উন্নয়ন সহযোগী পাওয়া গেলে একটি প্রকল্পের আওতায় ঢাকার চারপাশে ৮০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯, ২০১৫
এমআইএস/আরআই