ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বিশ্বজিৎ হত্যার রায় কার্যকর নিয়ে পরিবারের সংশয়

রিফাত আলম রাজ, জবি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০১৫
বিশ্বজিৎ হত্যার রায় কার্যকর নিয়ে পরিবারের সংশয় ফাইল ফটো

জবি (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়): আজ সেই ৯ ডিসেম্বর। ২০১২ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক মোড়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল দোকানের কর্মচারী বিশ্বজিৎ দাসকে।



এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। জেগে ওঠে বিশ্ববিবেক। নাড়া দিয়ে ওঠে মানুষের জাগ্রত হৃদয়। বিশ্বজিতের খুনিদের গ্রেফতার করে অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনার দাবি ওঠে সব মহলে।

দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ২১ আসামির আট জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। আসামিদের ১৩ জন এখনও পলাতক।

তাদের অনেকেই প্রকাশ্যে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। আসামিরা সবাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত ছাত্রলীগ কর্মী।

রায় কার্যকর নিয়ে পরিবারের সংশয়
লক্ষ্মীবাজারে ৫৩ নম্বর হৃষিকেশ দাস লেনে নিহত বিশ্বজিৎ দাসের বাসা। । মঙ্গলবার সেখানে গেলে দেখা যায় থমথমে অবস্থা। বিশ্বজিৎ দাসের ভাই উত্তম দাস বলেন, অনেক আগে রায় হয়েছে কিন্তু তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। দুনিয়াতে তাদের বিচার না হলেও সৃষ্টিকর্তা তাদের ছাড়বেন না ।

যেসব পলাতক আসামি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তাদের আটকের দাবি জানান তিনি। খুনিরা সাংবাদিকদের চোখে পড়ে, কিন্তু পুলিশের চোখে পড়ে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় তার ভাই খুন হয়েছেন। কিন্তু সরকার থেকে তাদের কোন সহায়তা করা হয়নি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তৎকালীন বিরোধী নেতা খালেদা জিয়া তাদের ঢাকার বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে কেউ তাদের কোন সহযোগিতা করেনি।

অনন্ত দাস আরো বলেন, আশা ছিল রায় কার্যকর হবে। দিন যাচ্ছে সে আশাও ফিকে হয়ে যাচ্ছে। বিশ্বজিত খুনের মামলা সাধারণ মামলার সিরিয়ালে ফেলে দিয়েছে সরকার। রায় কার্যকর হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্বজিতের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও।    

নৃশংস হত্যাকাণ্ড
২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সকাল আনুমানিক ১০টা। সারা দেশে বিএনপি, জামায়াত-শিবিরের অবরোধ চলছিল। অবরোধ রুখতে রাজপথ পাহারা দিচ্ছিল ছাত্রলীগ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনেও ছাত্রলীগের শতাধিক কর্মী সেদিন উপস্থিত ছিলেন।

হঠাৎ অদূরে কয়েকটা ককটেল বিস্ফোরণের আওয়াজ পাওয়া যায়। সেদিকে ছুটে যায় ছাত্রলীগ এবং পুলিশ। সন্দেহবশে এক যুবককে ধাওয়া দেয় ছাত্রলীগ।

হাতের নাগালে পেয়ে তাকে প্রথমে আঘাত করা হয়। পরে একটি ছুরি বিশ্বজিতের পেটে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারপর চাপাতি দিয়ে ঘাড়ে ও হাতে কোপানো হয়। পরে রড ও বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বিশ্বজিৎ দাসকে হত্যা করে জবি ছাত্রলীগের কর্মীরা।

মামলার রায়
২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার রায়ে আটজনের ফাঁসি ও ১৩ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালন। ফাঁসির আসামিরা হলেন রফিকুল ইসলাম শাকিল, রাজন তালুকদার, মাহফুজুর রহমান নাহিদ, এমদাদুল হক এমদাদ, জিএম রাশেদুজ্জামান শাওন, নূরে আলম লিমন, সাইফুল ইসলাম সাইফুল এবং কাইয়ুম মিয়া টিপু। এদের মধ্যে রাজন ও নূরে আলম পলাতক। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন খন্দকার মো. ইউনুস আলী, তারিক বিন জহুর, গোলাম মোস্তফা, মো. আলাউদ্দিন, মো. ওবায়দুল কাদের, ইমরান হোসেন, আজিজুর রহমান, আল আমিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, এএইচএম কিবরিয়া, মনিরুল হক, মোহম্মদ কামরুল হাসান এবং মোশাররফ হোসেন।

এর মধ্যে এইচএম কিবরিয়া ও গোলাম মোস্তফা ছাড়া সবাই পলাতক। এ রায়ে তাৎক্ষণিক স্বস্তি প্রকাশ করেন বিশ্বজিতের পরিবার।

তবে রায় ঘোষণার প্রায় তিন বছর পরও রায় কার্যকর না হওয়ায় সংশয় প্রকাশ করেছে বিশ্বজিতের পরিবারের সদস্যরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৯,২০১৫
আরএআর/আরআই

**  বিশ্বজিৎ হত্যায় আপিলে কিবরিয়ার জামিন স্থগিত

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।