ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

চুকনগর গণহত্যা-৩

মাটি খুঁড়লে এখনও মেলে কঙ্কাল

মাহবুবুর রহমান মুন্না, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
মাটি খুঁড়লে এখনও মেলে কঙ্কাল ছবি: মানজারুল ইসলাম/বাংলানিউজেটোয়েন্টিফোর.কম

খুলনার ডুমুরিয়ার চুকনগর বধ্যভূমি থেকে ফিরে: চুকনগরের ধানী জমিতে চাষ দিতে গেলে এখনো উঠে আসে মানুষের হাড়গোড়। মাটি খুঁড়লে মেলে মাথার খুলি, শিশুর ছেঁড়া জামা, নারীর শাড়ির খণ্ড অংশ।

শুধু হাড়গোড় নয়, সোনার আংটি কিংবা কানের দুলও পাওয়া যায় মাটির নিচে। মৃত মানুষের শেষ চিহ্ন এখনো চুকনগরের মাটিতে মিশে যায়নি। গণহত্যার সাক্ষ্য বহন করে চলছে চুকনগরের মাটি।

বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) চুকনগর বধ্যভূমির তত্ত্বাবধায়ক ফজলুর রহমান মোড়ল বাংলানিউজকে জানাচ্ছিলেন এসব তথ্য।

তিনি জানান, সব শেষ তিন বছর আগেও চুকনগরের মাটি কাটতে গিয়ে পাঁচ ফুট নিচে দু’টি কঙ্কাল পাওয়া যায়। যা চুকনগর গণহত্যা ১৯৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদে রাখা হয়েছে।

সেদিনের ভয়াবহ সেই গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী ফজলুর রহমান মোড়ল বলেন, পাকিস্তানি সেনারা মানুষ মেরে চলে যাওয়ার পর হাজার হাজার মরদেহ গুনে ভদ্রা নদীতে ফেলা হয়েছিলো। এরপরও অনেক মরদেহ খেত, বন-জঙ্গলে থেকে যায়। সেসব মরদেহের কঙ্কাল এখনও মাটি খুঁড়লে মাঝে-মধ্যে পাওয়া যায়।

চুকনগর গণহত্যার আরও এক প্রত্যক্ষদর্শী ‘চুকনগর গণহত্যা ১৯৭১ স্মৃতিরক্ষা পরিষদে’র সভাপতি ও চুকনগর কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলাম বলেন, চুকনগরের মাটি সেদিনের গণহত্যার নীরব সাক্ষী। তিন বছর আগে মাটি কাটার সময় যে দু’টি কঙ্কাল পাওয়া গেছে তা আমার কাছে বস্তাবন্দি আছে। বধ্যভূমিতে জাদুঘর থাকলে দর্শনার্থীরা তা দেখতে পারতেন।

তিনি দাবি জানান, চুকনগরের স্মৃতি চিহ্ন নিয়ে একটি জাদুঘর করার। যেখান থেকে নতুন প্রজন্ম বধ্যভূমি সম্পর্কে জানতে পারবে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৫ মে দক্ষিণাঞ্চলে বাংলাদেশের প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। এই রাজাকার বাহিনীর নেতৃত্ব দেন সে সময়ের জামায়াত নেতা এ কে এম ইউসুফ। এ বাহিনী গঠন হওয়ার পর প্রত্যন্ত অঞ্চলে সাধারণ মানুষের উপর শুরু হয় ভয়াবহ নির্যাতন। সেই নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বাগেরহাট, খুলনা, বটিয়াঘাটা, দাকোপ, ফুলতলাসহ বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার হাজার হাজার মানুষ ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আশ্রয় নেয় ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকায়।

২০ মে সকাল ১০টার দিকে খাবার খেয়ে চুকনগর বাজার, ভদ্রা নদী, মালতিয়া গ্রামের পাতখোলার মাঠে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন এসব মানুষ। দুপুরের দিকে কেশবপুর সীমান্ত পার হয়ে ভারতের দিকে রওয়ানা হওয়ার কথা তাদের।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাতক্ষীরা থেকে পাকিস্তানি বাহিনীর দু’টি গাড়ি আসে চুকনগর বাজারের পাতখোলার মাঠে। হানাদাররা সেখানে জড়ো হওয়া হাজার হাজার নারী-পুরুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে। জমিতে কাজ করা অবস্থায় মালতিয়া গ্রামের অধিবাসী কৃষক চিকন আলীকে সর্বপ্রথম গুলি করে হত্যা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫
এমআরএম/এএ

** ‘রক্তের স্রোতে লাশ ভাসতি দেহিছি’
** অরক্ষিত বধ্যভূমি, নেই গণহত্যার নামফলক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।