ময়মনসিংহ: শিশুটির নাম আরশুভা বিনতে আজিজ। মোমেনশাহী ক্যান্টনম্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
পেট্রোল বোমার অন্ধকার রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে নিজের ইচ্ছেতেই স্কুলের ‘যেমন খুশি তেমন সাজ’ প্রতিযোগিতায় এমন ‘অগ্নিকন্যা’ সেজেছে আরশুভা।
একই স্কুলের কেজি শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্রী মেহেরীন হক তাসনিমের কোমল মনেও দাগ ফেলেছে আগুন সন্ত্রাসের অমানবিকতা। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীতে কর্মরত বাবার এ আদুরে সন্তানও সেজেছে অগ্নিদগ্ধ। কাতর চেহারায় যন্ত্রণাকিষ্ট অভিব্যক্তি। তাদের এমন সাজ হৃদয় ছুঁয়েছে অনুষ্ঠানস্থলে সমবেত সবার। তারা একেকজন হয়ে উঠেছিল সমকালীন অগ্নিকন্যা।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত চলা মোমেনশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২৩তম আন্তঃহাউজ বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সমাপনী দিবসের এ অনুষ্ঠানে ফুটে ওঠে সমাজ বাস্তবতার ছাপ। কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীদের এমন সাজগোজ উৎসাহভরে উপভোগ করেন অতিথি-দর্শকরা।
পেট্রোল বোমার সহিংসতার বিরুদ্ধে কেন এ প্রতিবাদ, জানতে চাইলে কোমলমতি আরশুভা জানায়, ‘হরতালের নামে ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষদের পোড়ানো হয়। এমন বীভৎসতা আমার কাছে যন্ত্রণাদায়ক। তাই মায়ের সহায়তায় এমন সেজেছি। ’
ময়মনসিংহ নগরীর স্বনামধন্য এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কুল পড়ুয়া মেয়েরা যেমন খুশি তেমন সাজতে গিয়ে আধুনিক ফ্যাশনের দিকে না তাকিয়ে কেবল কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের দিকেই তাকিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তাদের হৃদয়ের মর্মমূলে প্রবাহিত। এ চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে এ বিদ্যালয়ের নার্সারিতে পড়ুয়া ছাত্র পরশ সেজেছিল পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, আর তার বড় বোন রোজা সেজেছিল আহত মুক্তিযোদ্ধার মা।
ছোট্ট শিশু পরশের বুকে মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি। ছবিতে ফুলের মালা। এক পাশে লেখা ‘তুমিই মহান নেতা। ’ আর মুক্তিযোদ্ধার মা সাজা বড় বোন রোজার বুকে ছোট্ট করে লেখা, ‘হে বঙ্গবন্ধু, তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে কেন এ করুণ পরিণতি?’
পরশ ও রোজার বাবা মিয়া মো. রূপক মানিক কলেজটির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক। সন্তানরা যখন অতিথিদের সামনে পারফরম্যান্স শো করছিল, তখন সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন তিনিও।
এ সাজের নেপথ্য কারণ জানিয়ে মিয়া মো. রূপক জানান, এখানে বোঝানো হয়েছে, পরশ পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা হয়েও জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধুকে ভুলেনি। এর মাধ্যমে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান তুলে ধরা হয়েছে। নতুন প্রজন্ম যেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে যেতে পারে, সেজন্যই এ প্রয়াস।
এ ইভেন্টে ‘গণক’, ‘বেদের মেয়ে’, ‘পরিবেশ বাঁচাও’, ‘শরণার্থী শিবির’র প্রতিচ্ছবিও তুলে এনেছিল কোমলমতি শিশুরা।
এর আগে, দুপুরে সম্মিলিত কুচকাওয়াজের মাধ্যমে সমাপনী দিবসের অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ অনুষ্ঠানে ১৯ পদাতিক ডিভিশন ও ঘাটাইল এরিয়ার কমান্ডার মেজর জেনারেল ফিরোজ হাসান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন মিসেস রেবেকা হাসান।
সমাপনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট কলেজ প্রিন্সিপাল লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শহীদুল হাসান। সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও ৭৭ পদাতিক ব্রিগেড মোমেনশাহী সেনানিবাসের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন।
৩ দিনব্যাপী এ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে জয়নুল হাউজ। রানার আপ হয় নজরুল হাউজ। পরে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা। এ সময় সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা এবং অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি মেজর জেনারেল ফিরোজ হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের মনের একান্ত গহীনে প্রাণ-প্রাচুর্য ছড়িয়ে দেয় ক্রীড়া। পুরস্কার আনন্দের পাশাপাশি নিষ্ঠা, অধ্যবসায় ও এগিয়ে যাবার প্রেরণা জোগায়। শিক্ষাকে ব্যবসায়িক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করার জন্যও তিনি শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
এইচএ/