ঢাকা: বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ও অবস্থান নিশ্চিত করতে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের শুমারির প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সে রোহিঙ্গা শুমারির নমুনা জরিপের হালনাগাদ তথ্য ঢাকাস্থ কূটনীতিকদের ব্রিফিংও করেছে সরকার।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কূটনীতিকদের এ ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারসহ প্রায় ৪০টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে অংশ নেওয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের বাইরেও কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালী জেলায় মায়ানমারের বহুসংখ্যক নাগরিক বসবাস করছে। তাদের সঠিক সংখ্যা জানতে সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পরিসংখ্যান ব্যুরো জরিপের কাজ শুরু করেছে। পররাষ্ট্র সচিব সেই জরিপ প্রক্রিয়া সম্পর্কেই বিদেশি কূটনীতিকদেরকে অবহিত করেন।
মূলত গত নভেম্বরে পরিসংখ্যান ব্যুরো জরিপের ফিল্ড টেস্ট সম্পন্ন করে। চলতি মাসেই শুরু হবে এলাকাভিত্তিক জরিপ। এরপর খানা জরিপ এবং মার্চে শুরু হবে মূল জরিপ কাজ। সরকার আশা করছে, এ বছরই জরিপের ফলাফল পাওয়া যাবে।
‘বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মায়ানমারের নাগরিক শুমারি ২০১৫’ শীর্ষক প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২১ কোটি ৭৫ লাখ। এপিল ২০১৫ থেকে মার্চ ২০১৬ এর মধ্যে এ প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের নেওয়া জাতীয় কৌশলপত্র বা ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক পেপারের হালনাগাদ তথ্য ব্রিফিংয়ে তুলে ধরা হয়েছে। রোহিঙ্গা শুমারির প্রাথমিক পর্যায়ে একটি নমুনা জরিপ করা হয়েছে। সেখানে দেখা হয়েছে যে প্রশ্নপত্র যা তৈরি করা হয়েছে, তা থেকে সঠিক উত্তর আসছে কিনা। এখন সে নমুনা জরিপের ওপর ভিত্তি করে পূর্ণাঙ্গ শুমারি শুরু করা হবে। তার আগে রোহিঙ্গাদের জন্য নেওয়া প্রকল্প এবং শুমারির বিষয়ে কূটনীতিকদের অবগত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে তাদের কাছে আনুমানিক কোনো সংখ্যা বলা হয়নি। কারণ এটি এখনও জরিপ পর্যায়ে রয়েছে। তবে সেখানে প্রশ্নপত্র এবং রোহিঙ্গাদের জন্য নেওয়া প্রকল্পর বিষয়ে কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে। সরকার রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য পরিষ্কার পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, তাদের জন্য স্কুল তৈরি করাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এগুলোও কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে অবস্থানরত অবৈধ রোহিঙ্গা নাগরিকদের ছবি ও অন্যান্য তথ্য নিয়ে একটি তথ্যভাণ্ডার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থান এবং অনুপ্রবেশের আগে মায়ানমারে তাদের মূল বাসস্থানের ঠিকানা বের করা হবে। সেইসঙ্গে এসব রোহিঙ্গার বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের কারণ এবং বাংলাদেশে তাদের আর্থ-সামাজিক ও জনমিতি সংক্রান্ত পরিসংখ্যান বের করবে সরকার। এজন্য এরইমধ্যে মায়ানমারের নাগরিক শনাক্তকরণে একটি জরিপ প্রশ্নপত্র তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন জেলা কার্যালয় এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে অবৈধ অধিবাসীদের চিহ্নত করতে এ জরিপ প্রশ্নপত্র ব্যবহার করবে।
জানা গেছে, বিভিন্ন জেলা কার্যালয় এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে অবৈধ অধিবাসীদের সঠিক হিসাব এবং বর্তমানে কোন স্থানে তারা অবস্থান করছে তা বের করা হবে।
এদিকে, মায়ানমারের শরণার্থীরা যেন স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হতে না পারে সেজন্য সুনির্দিষ্ট বিধান এবং এ বিষয়ে বিয়ে নিবন্ধকদের কঠোর নির্দেশ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে শরণার্থী শিবিরে থাকা মায়ানমারের শরণার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৪৫ জন। এদের সংশ্লিষ্ট মেম্বারের সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি। আর অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা প্রায় ৪-৫ লাখের মত বলে ধারণা করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
জেপি/এইচএ/