ঢাকা: ট্রেন প্রতি আয় শুধু যাত্রীর কাছ থেকে পাওয়া ভাড়ার ওপর নির্ভর করে না, কোচের সংখ্যা, অকুপেন্সি এবং ট্রেনের টার্ন অ্যারাউন্ডের ওপরও নির্ভর করে। ট্রেন পরিচালনায় এই বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়ে ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করলে ট্রেন প্রতি ব্যয় হ্রাস করে রেলকে স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
সোমবার (২৫ জানুয়ারি) পরিবেশ বাচাঁও আন্দোলন (পবা) ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে সাশ্রয়ী ও নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে ‘রেলের ভাড়া: প্রাসঙ্গিক ভাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়।
পবা কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মো. আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় সেবা খাত হিসেবে রেলের পরিচালন ব্যবস্থা সঠিকভাগে পরিচালনা না করায় যাত্রী সেবা যেমন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না, তেমনি রেলের পরিচালনা ব্যয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। রেললাইন সংস্কার, নতুন রেলপথ নির্মাণ ও অবকাঠামো তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও ট্রেনের সময়ানুবর্তিতার কোনো উন্নয়ন হয়নি।
তিনি বলেন, রেললাইন খারাপ থাকায় পূর্বাঞ্চলে ৩১টি স্থানে লোকোমোটিভকে নির্ধারিত গতির চেয়ে ধীর গতিতে চলতে হয়। এমনকি লোকোমোটিভ যা আছে, তাও ব্যবহার করতে পারছি না। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে পূর্বাঞ্চলে ১৫৪টি লোকোমোটিভ ব্যবহারের হার ছিল ৬৮.২০ শতাংশ এবং পশ্চিমাঞ্চলে মিটারগেজ ৮০ শতাংশ ও ব্রডগেজ ৭৪.০৬ শতাংশ।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান। তিনি বলেন, ট্রেন প্রতি আয় কোচের সিটের অকুপেন্সির ওপরও নির্ভর করে। কেননা একটি সিট খালি যাওয়া মানে যাত্রী থেকে আয়ের সুযোগ নষ্ট হওয়া। বাংলাদেশ রেলওয়ের নভেম্বর মাসে পূর্বাঞ্চলে প্রথম শ্রেণির সিটের অকুপেন্সি ছিল ৬২ শতাংশ এবং এসি সিটের অকুপেন্সি ছিল ৮৪ শতাংশ। ফলে রেল কাঙ্ক্ষিত আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়া মৌসুম অনুযায়ী বিভিন্ন রুটে ট্রেনের চাহিদা অনুযায়ী কোচের কম্বিনেশন করে ট্রেনের আয় বাড়ানো যায়।
সুষ্ঠু টিকিট ব্যবস্থাপনার অভাবে রেলযাত্রী যেমন টিকিটপ্রাপ্তি নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে, তেমনি রেলওয়ে কাঙ্ক্ষিত আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে পূর্বাঞ্চলে যাত্রী থেকে আয়ের লক্ষমাত্রা ৩৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার বিপরীতে আয় করা হয় ৩১ কোটি ৮২ লাখ। অথচ নভেম্বরে আয় ছিল ৩২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ ২০ শতাংশ কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকার করেছে এবং তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনায় ২০ শতাংশ রেলের যাত্রী বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। ভাড়া বৃদ্ধি করা হলে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের পরিচালনক গাউস পিয়ারি বলেন, রেলওয়ের ভূসম্পত্তিসহ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, পণ্য পরিবহনে মনোযোগ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা টাকা, কারখানা আধুনিকায়ন করে লোকোমোটিভ ও কোচ তৈরিতে সক্ষমতা অর্জন এবং পরিচালন ব্যবস্থা যুগোপযোগী করার মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়েকে স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে রেলের জায়গা রেলের অধীনে রেখে আয় বর্ধনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা; স্টেশনগুলোর আশেপাশের জায়গা রেলের উন্নয়নের সঙ্গে সম্পর্কিত করে উৎপাদন/আয় বর্ধনমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা; পণ্য পরিবহনে রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগসমূহকে বিশেষ করে মার্কেটিং বিভাগকে সচল করা; পোশাক শিল্প খাতের পণ্য, বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের পণ্য এবং কৃষিপণ্য রেলের মাধ্যমে পরিবহনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা; রেলওয়ে সঙ্গে সমগ্র দেশের বন্দর ও শিল্প কারখানাগুলোর সংযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ; ডাবল লাইনের কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন; দেশে বিদ্যমান রেলওয়ে কারখানাগুলো সচল করে কোচ তৈরি করে প্রতিটি রেলের ইঞ্জিনের ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী কোচের সংখ্যা বাড়িয়ে আয় বৃদ্ধিতে প্রকল্প গ্রহণ করাসহ বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৪০৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৫, ২০১৬
এডিএ/এইচএ/