রাজশাহী: যেন হিমঘরে চলে গেছে রাজশাহীর বাগমারা আহমদিয়া (কাদিয়ানি) জামে মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলার তদন্ত। ঘটনার এক মাস পূর্ণ হলেও তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই বললেই চলে।
জানা যায়, সেদিন আত্মঘাতী হামলায় নিহত যুবকের পরিচয় মেলেনি এখনও। ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে এমন সন্দেহে সম্প্রতি চট্টগ্রামে আটক তিন জেএমবি সদস্যকে এই মামলায় সেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে আশানুরূপ কোনো তথ্য বের করতে পারেননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। ফলে অজানাই থেকে যাচ্ছে এ হামলার সঙ্গে জড়িতদের পরিচয়।
ঘটনার পর থেকে বাগমারা থানা পুলিশ এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) দু’টি টিম তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, হামলার পরিকল্পনাকারী সংগঠন, পরিকল্পনাস্থল, বোমা বিস্ফোরণে আত্মহননকারীর পরিচয়, হামলায় অংশ নেওয়া হামলাকারীর সংখ্যাসহ বিভিন্ন ইস্যু চিহ্নিত করে তদন্ত এগিয়ে যাচ্ছে। তবে দীর্ঘ সময়েও হামলাকারীর পরিচয় এবং কোনো সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, তা প্রকাশ না হওয়ায় তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ২৫ ডিসেম্বর শুক্রবার জু’মার নামাজের সময় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের সৈয়দপুর মচমইল চকপাড়া আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কাদিয়ানি মসজিদটিতে আত্মঘাতী বোমা হামলা হয়। হামলায় বোমা বহনকারী যুবক নিহত হয়। আহত হন ১০ জন মুসল্লি। ঘটনার পর প্রথমে নিহত যুবকের পরিচয় হিসেবে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী বলে প্রচার হলেও অনুসন্ধান করেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় ২৮ ডিসেম্বর বেওয়ারিশ হিসেবে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) রাজশাহীর একজন কর্মকর্তা দাবি করেন, নিহত যুবকের পরিচয় শনাক্তের ব্যাপারে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। এছাড়া এ হামলায় আরও কয়েকজন জড়িত ছিল, সে ব্যাপারে অনেকটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। কেননা, এ ধরনের হামলা কেউ একা ঘটাতে পারে না। এর পেছনে অবশ্যই আরও কয়েকজনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। এছাড়া হামলাটি কোনো ব্যক্তি বিশেষের নয়, এটি কোনো গোষ্ঠীর পরিকল্পিত, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
হামলার সময় মসজিদের অদূরেই একজন যুবক অবস্থান করছিল। বোমা বিস্ফোরণের পরেই সে দ্রুত ঘটনাস্থল ছাড়ে। এরপর ওই যুবক কিছুটা দূরে অপেক্ষমাণ আরেক যুবকের মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যায় বলে জানিয়েছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী মুসল্লিরা। তদন্তকারীরা এ বিষয়টিকে আমলে নিয়ে তা খতিয়ে দেখছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানালেও ঘটনার এক মাসেও তাদের হদিস পায়নি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তবে, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাগমারা থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি-তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ বাংলানিউজকে জানান, মামলার তদন্ত নিজ গতিতেই এগিয়ে চলছে। সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে এমন সন্দেহে সম্প্রতি চট্টগ্রামে আটককৃত তিন জেএমবি সদস্যকে এই মামলায় সেখানে গিয়ে জিজ্ঞাসবাদও করা হয়েছে। তবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে আশানুরূপ কোনো তথ্য মেলেনি। তাছাড়া, নিহত হামলাকারী সুসংগঠিত জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে এখনও।
তিনি বলেন, হামলাকারীর কোমরে সুইসাইড বেল্ট বাঁধা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, হামলায় নিহত যুবক প্রশিক্ষিত ছিল। সুসংগঠিত কোনো জঙ্গি সংগঠনের সদস্য না হলে এভাবে ঘটনা ঘটানো সম্ভব হতো না। কিন্ত নিহত যুবক কোন সংগঠনের সদস্য তা শনাক্ত করা যাচ্ছে না।
তবে তদন্তের কাজের কিছুটা অগ্রগতি দাবি করে রাজশাহীর বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, ইতোমধ্যে বেশকিছু বিষয় শনাক্ত করা হয়েছে। আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর কাছে পরিচয় শনাক্ত করার মত কিছু না পাওয়ায় তার পরিচয় নিশ্চিত হতে বেগ পেতে হচ্ছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০১৬
এসএস/জেপি/এইচএ/