ঢাকা: অসুস্থ যে নারীটিকে ভিনদেশি এক নারী রাস্তা থেকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন, তিনি মারা গেছেন। তার নাম-পরিচয়ও পাওয়া গেছে।
তবে, তার মৃত্যু হাসপাতালে হয়নি। খবর পেয়ে পারুলের স্বামী মমতাজ তাকে গাজীপুরের শ্রীপুরের তাওরাইত বাজার এলাকার বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানেই মারা যান তিনি।
আবার পারুলকে উদ্ধারকারী সুইডেনের নাগরিক মায়াও হাসপাতালে এসে শেষ দেখা পাননি তার। বুধবার (০৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ওই বিদেশিনী নারী অসুস্থ নারীর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে ঢামেক হাসপাতালে এসে মৃত্যুর খবরটি জানতে পারেন। এ সময় তিনি আকুল হয়ে কান্নাকাটি করতে থাকেন।
পরে হাসপাতাল থেকেই পারুলের নাম-পরিচয় জানতে পারেন। স্বামী মমতাজের মোবাইল নম্বর নিয়ে তার সঙ্গে কথাও বলেন বিদেশিনী মায়া। এরপর স্বজন হারানোর মতো বেদনা নিয়ে কাঁদতে কাঁদতেই শ্যাওড়া এলাকার বাসায় ফিরে যান তিনি।
বুধবার সন্ধ্যায় একটি ব্যাগে কাপড়-চোপড় ও খাবার-দাবার নিয়ে ঢামেক হাসপাতালে আসেন মায়া। কয়েকজনের সহযোগিতায় ১০৯ নম্বর সার্জারি ওয়ার্ডে (মহিলা) নিজের মোবাইলে ওই নারীর (পারুল) ছবি বের করে তাকে খুঁজতে থাকেন। সামনে যাকেই পাচ্ছিলেন, তাকেই বলতে থাকেন, ‘বাই, সে কোতায়’, ‘ভোন সে কোতায়’।
ওয়ার্ডের কয়েকজন কর্মচারীর মাধ্যমে জানতে পারেন, নারীটি মারা গেছেন। শুনেই বলতে থাকেন, ‘এটা কি হল? আমি বিশ্বাস খরি না, সে মারা গেছে। সে অসুস্থ’।
এ সময় তার হাতের ব্যাগটি পড়ে যায়। তিনি চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন।
ওয়ার্ডের অনেকেই তাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।
বিদেশিনী বলেন, ‘এটা কেমন করে হল? সেতো কথাই বলতে পারে না। আমি এলাম তার খোঁজ-খবর নিতে, সে মারা গেল?’
হাসপাতালের কর্মচারীরা এ সময় ভিনদেশি মায়াকে জানান, অসুস্থ নারীর নাম পারুল। স্বামীর নাম মমতাজ উদ্দীন। গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের তাওরাইত বাজার এলাকায় থাকেন তিনি।
স্বামী মমতাজ হাসপাতাল থেকে সংবাদ পেয়ে গত রোববার (০৪ ডিসেম্বর) রাত ১টায় এসে স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানেই সোমবার (০৫ ডিসেম্বর) বিকেল চারটায় মারা যান পারুল।
বিদেশিনী মায়ার বাড়ি সুইডেনে। স্বামীর সঙ্গে রাজধানীর শ্যাওড়া এলাকায় থাকেন। হাঁটতে বের হয়ে রোববার বিকেলে টঙ্গি এলাকার রাস্তায় পারুলকে অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে এসে সার্জারি বিভাগে ভর্তি করান।
ওয়ার্ড থেকে স্বামী মমতাজ উদ্দীনের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে তার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের।
তিনি বলেন, ‘আমি স্ত্রী পারুলকে নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরের তাওরাইত বাজার এলাকায় থাকি। পারুলের স্তনে সমস্যাজনিত কারণে এখন থেকে প্রায় ১ মাস আগে ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করি। তার স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। দীর্ঘ ২৩ দিন চিকিৎসা চলে তার। এরপর সে হাসপাতাল থেকে হারিয়ে যায়’।
‘এরপর আমি শাহ্বাগ থানায় একটি জিডি করি। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও তার কোনো সন্ধান পাইনি। রোববার রাতে হাসপাতালের ১০৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ফোন দিয়ে আমাকে নিখোঁজ স্ত্রীকে পাওয়ার সংবাদ দেওয়া হয়। নিখোঁজের ১৩ দিনের মাথায় আবার তার সন্ধান পাই’।
‘পরে রাত একটায় হাসপাতালে এসে স্ত্রীকে নিয়ে আমি বাড়িতে চলে আসি। সোমবার বিকেল ৪টায় বাড়িতেই মারা যায় পারুল’।
** বিদেশিনীর মানবতাবোধ শেখালো কি দেশিদের!
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬
এজেডএস/এএসআর