ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

বাবা’র স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচবে মৌপি

এম. আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০১৬
বাবা’র স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচবে মৌপি ছবি: অনিক খান-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চারিদিকে বিষণ্নতা, বাকরুদ্ধ সবাই। চোখের মোটা চশমা সরিয়ে চোখ বুজেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কবি মাহবুবুল হক শাকিল। নাকে তুলা দেওয়া। নির্বাক নিঃস্তব্ধ অসার দেহ।

ময়মনসিংহ: চারিদিকে বিষণ্নতা, বাকরুদ্ধ সবাই। চোখের মোটা চশমা সরিয়ে চোখ বুজেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কবি মাহবুবুল হক শাকিল।

নাকে তুলা দেওয়া।

নির্বাক নিঃস্তব্ধ অসার দেহ। কফিনে মোড়ানো তার নিথর দেহের পাশে দাঁড়িয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন একমাত্র আদুরে কন্যা মৌপি। তার চোখের দু’ পাতা ভিজে যাচ্ছে অশ্রুতে।

চিৎকার করে কাঁদতে পারছেন না, কিন্তু মনের ভেতর বয়ে যাচ্ছে বাবা হারানোর তীব্র বেদনা। হাহাকার নিয়ে জড়িয়ে ধরলেন মমতাময়ী মা নিলুফা আনজুম পপি।

শাকিলের আইনজীবী স্ত্রী পপি শোকে পাথর। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরেছেন।

মা-মেয়ের কথোপকোথন থেকে স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছিলো বাবা’র স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচতে চান একমাত্র কন্যা মৌপি। সবার কাছে সন্তানের জন্য দোয়াও চান তিনি।

বুধবার (০৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর বাঘমারা রোডের বাসায় শাকিলের মরদেহ আসার পর বাড়ির আঙিনায় রাখা কফিনের সামনে আর বাড়ির ভেতরে এক শোকাবহ দৃশ্যের অবতারণা হয়।

বাবাকে হারিয়ে স্তব্ধ মৌপি। কারো সঙ্গে কোনো কথা বলছেন না। সান্ত্বনা তার কাছে যেনো বিরক্তি হিসেবেই ঠেকছে। মা আর পরিবারের ঘনিষ্ঠ স্বজন ছাড়া কারো সামনে আসেননি।

বাবার সঙ্গে সুখ স্মৃতি নিয়ে মায়ের সঙ্গে স্মৃতিচারণ করছেন। কখনও প্রয়াত বাবা শাকিলের ছবি দেখছেন। বাবার সঙ্গে সময়ে-অসময়ে খুঁনসুটির কথাও উচ্চারণ করছিলেন।

দুপুরে ঢাকা থেকে বাঘমারা রোডের বাসায় শাকিলের মরদেহ পৌঁছানোর পর কান্নার রোল পড়ে যায়।

সন্তানের নিথর দেহের পাশে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। ততক্ষণে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন মা নূরুন্নাহার হক টগর।

শাকিলের হাসিমাখা মুখটি রোদের আয়নায় উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। আর তাইতো কখনও বাসায় বসে আছেন, কখনওবা পাশের কক্ষে গিয়ে আপন মনে কেঁদেছেন প্রিয়তমা স্ত্রী পপি।

তার সব শান্তি যেন উবে গেছে। হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত। স্বামী হারানোর শোকে পাগলপ্রায় অবস্থা।  

ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে বলছিলেন, ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থেকেও নির্মোহ মধ্যবিত্ত জীবন কাটিয়েছেন শাকিল। খুবই আকর্ষণীয় ছিলো তার লেখা। আমাদের রেখে চলে গেলেন...।

বারবার কান্নায় বুক ভাসাচ্ছেন বাবা বর্ষীয়াণ আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা। নিজের জীবনের গোধূলীবেলায় কান্না-ই যেন হয়ে উঠেছে তার সঙ্গী।

কোনো একজন নিজের মুঠোফোনের স্ক্রিনে ফেসবুক থেকে ডাউনলোড করা বাপ-ছেলের পাশাপাশি দাঁড়ানো ছবি দেখাতেই কাঁদতে শুরু করছিলেন।

আরও পড়ুন: শাকিলের দাফন সম্পন্ন, শোকে মুহ্যমান ময়মনসিংহ

শাকিলকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান রাজনীতিক সহকর্মীরাও। কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা তার স্মৃতিচারণ কেরে বলছিলেন, ‘নিজের বয়স পঞ্চাশ পেরোনোর আগেই রাজনীতির পাশাপাশি দেশের শিল্প-সাংস্কৃতিক জগতেও মাহবুবুল হক শাকিল ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তার নেতৃত্বেই গঠিত হয়েছিল আ’লীগের গবেষণা সেল সিআরআই। তার মৃত্যু আমাদের হৃদয়টা ভেঙে-মুচড়ে দিয়েছে। ’

বাংলাদেশ সময়: ০২০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৮, ২০১৬
এমএএএম/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।