ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

না’গঞ্জ ৭ খুনে ২৬ জনের ফাঁসি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
না’গঞ্জ ৭ খুনে ২৬ জনের ফাঁসি ৭ খুনের দায়ে প্রধান আসামি নূর হোসেনসহ ২৬ জনের ফাঁসি- ছবি: জিএম মুজিবুর

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের মামলায় এর প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র‌্যাবের বরখাস্তকৃত তিন উধ্র্বতন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এই মামলার ৩৫ জন আসামির মধ্যে বাকি ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সাজাপ্রাপ্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ২৫ জনই ৠাবের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তা ও সদস্য, বাকি ১০ জনের মধ্যে রয়েছেন নূর হোসেন ও তার ৯ সহযোগী। ৠাবের ২৫ জনের মধ্যে ফাঁসির আদেশ পেয়েছেন ১৬ সাবেক কর্মকর্তা।

র‌্যাব-১১’র চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর (অব.) আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার (অব.) মাসুদ রানাকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নে কর্মরত ছিলেন এমন আরও ১৩ জনকে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। এরা হচ্ছেন- এসআই পূর্ণেন্দু বালা, হাবিলদার এমদাদুল হক, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, আরওজি-১ আরিফ হোসেন, ল্যান্সনায়েক হীরা মিয়া, বেলাল হোসেন, সৈনিক আবদুল আলীম, সিপাহী আবু তৈয়্যব, সিপাহী আসাদুজ্জামান নূর, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ, সৈনিক তাজুল ইসলাম ও সার্জেন্ট এনামুল কবির।

মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়েছেন নূর হোসেনের ৯ সহযোগী ভারতে গ্রেফতারকৃত সেলিম, সানাউল্লাহ সানা, শাহজাহান, জামাল উদ্দিন, মোর্তুজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দীপু, রহম আলী ও আবুল বাশার।

বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড পাওয়া ৯ জনও র‌্যাবের বরখাস্তকৃত কর্মকর্তা ও সদস্য। তাদের মধ্যে কনস্টেবল হাবিবুর রহমানকে ১৭ বছর, এএসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই কামাল হোসেন, কনস্টেবল বাবুল হাসান, কর্পোরাল মোখলেসুর রহমান, ল্যান্স কর্পোরাল রুহুল আমিন ও সিপাহী নুরুজ্জামান ১০ বছর এবং এএসআই বজলুর রহমান ও হাবিলদার নাসির উদ্দিনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত।   

দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৫ জন আসামির মধ্যে নূর হোসেনসহ ২৩ জন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে রায় শোনেন। বাকি ১২ আসামি পলাতক রয়েছেন।

সোমবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ০৫ মিনিটে এ রায় ঘোষণা করেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত। সাত খুনের ঘটনায় দায়ের করা দু’টি মামলাকে একটি হিসেবে গ্রহণ করে রায় দেন আদালত। সংক্ষিপ্ত রায়ে শুধুমাত্র আসামিদের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে বলেই এ সময় জানান বিচারক।

সোমবার সকাল ৯ট ৫০ মিনিটে গ্রেফতারকৃত ২৩ আসামিকে আদালতের হাজতখানা থেকে কাঠগড়ার লোহার খাঁচায় এনে রাখা হয়। তবে ৠাবের তিন সাবেক ঊধ্র্বতন কর্মকর্তাকে বসানো হয় খাঁচার বাইরে। সকাল ১০টা ০৩ মিনিটে আদালতের এজলাসকক্ষে আসন নেন বিচারক। আর ১০টা ৫ মিনিটেই সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন।

আসামিদের মধ্যে ১৮ জনকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে এবং নূর হোসেনসহ ৫ জনকে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২ থেকে আদালতে নেওয়া হয়।

আসামিদের সাজার বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন।

এর আগে সাত খুনের ঘটনায় দু’টি মামলার বিচারিক কার্যক্রম একসঙ্গে শেষ করেন আদালত। একটি মামলার বাদী নিহত আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল এবং অপরটির বাদী নিহত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি।
 
২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭ জনকে অপহরণের তিনদিন পর তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় নিহত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহিম

সাত খুনের পর প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও তার ৪ সহকর্মী হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় একটি এবং সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার ও তার গাড়ির চালক ইব্রাহিম হত্যার ঘটনায় জামাতা বিজয় কুমার পাল বাদী হয়ে একই থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন।
 
দীর্ঘ প্রায় এক বছর তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ মণ্ডল সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

গত বছরের ০৮ ফেব্রুয়ারি ৭ খুনের দু’টি মামলায় নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৩ আসামির উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত।
 
র‌্যাবের ৮ সদস্যসহ পলাতক ১২ আসামির অনুপস্থিতিতেই বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। তবে পলাতক ১২ আসামির পক্ষে রাষ্ট্রীয় খরচে ৫ জন আইনজীবীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

দু’টি মামলারই অভিন্ন সাক্ষী ১২৭ জন করে। তাদের মধ্যে তদন্ত কর্মকর্তাসহ ১০৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত।

মামলার সর্বশেষ ধাপ উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষে গত বছরের ৩০ নভেম্বর রায়ের দিন ধার্য করেন আদালত।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
জেডএস/এএসআর

আরও পড়ুন
** না. গঞ্জে ১২, কাশিমপুরে ৫ ফাঁসির আসামি কনডেম সেলে
‘আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নন’, ‘সরকার দায় এড়াতে পারে না’
** ৫ মিনিটে ২৬ জনের প্রাণদণ্ডের রায়​
** ‘সাত খুনের দায় ব্যক্তিগত, র‌্যাবের নয়’​
** রায়ে কাউন্সিলর নজরুলের স্ত্রীর সন্তোষ
** ‘ন্যায় বিচার হয়েছে’, রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি
** রায়ের পর কারাগারের পথে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা
** রায় দ্রুত কার্যকর হলে খুশি হবো
** নির্বিকার নূর হোসেন সান্ত্বনা দিলেন অন্যদের
** সাত খুন মামলার রায় ঘোষণা চলছে
** আদালতের এজলাসে বিচারক
** সাত খুনের ২৩ আসামি কাঠগড়ায়
** নূর হোসেনসহ ২৩ আসামি আদালতে
** ৭ খুন মামলার ১৮ আসামি আদালতে
** কঠোর নিরাপত্তা বলয়ে নারায়ণগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণ
** ৭ খুন মামলার ৩ আসামি কাশিমপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের পথে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।